প্রচলিত নিয়মেই নির্বাচন কমিশনের দাবি

নতুন করে আইন প্রণয়ন নয়, প্রচলিত নিয়মেই নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করা হতে পারে সার্চ কমিটির মাধ্যমে। বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল থেকে এমন দাবি উঠে এসেছে।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৮ ফেব্রুয়ারি। সেই কারণে এই অল্প সময়ে আইন প্রণয়ন করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন রাজনীতিক ও রাজনীতি বিশ্লেষকরা। যদিও এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব।

গত ৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক শেষে আবদুর রব সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাঁচ মিনিটে বাকশাল পাস হয়েছিল। সে অভিজ্ঞতার আলোকে আমি মনে করি, এ আইন করতে বেশি সময় লাগবে না।’

এই সময়ের মধ্যেই আইন প্রণয়ন সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন সংলাপে অংশ নেওয়া জাসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি চাইলে এবারেই আইন প্রণয়ন করা সম্ভব।’

রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে চার দফায় অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে আপাতত নেতিবাচক কিছুই বলছেন না। নিজেদের প্রস্তাব কতটুকু ফলপ্রসূ হবে সে আশাতেই আছেন। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নেওয়া ১৯টি দলের অনেকের ভাষ্য, সংলাপে কী ফল আসবে সেটা অপেক্ষা করার মতো বিষয়, তবে রাষ্ট্রপতির এই আমন্ত্রণের মাধ্যমে দেশে পরমত সহিষ্ণুতার পরিবেশ তৈরি হলো।

অন্যদিকে, দলের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে সার্চ কমিটির গঠনের জন্য প্রস্তাব করবে আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসবে তারা।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আইন প্রণয়নের জন্যে যাচাই-বাছাইয়ের ব্যাপার আছে। এটা তাড়াহুড়োর ব্যাপার নয়। যেহেতু সময় অল্প, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে কমিশন নিয়োগ দিতে হবে, তাই এবার আইন প্রণয়ন করে নাও হতে পারে। রাষ্ট্রপতির প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে আমাদের। তিনি একজন সৎ, অভিজ্ঞ রাজনীতিক ও আইনজ্ঞ সুতরাং তিনি যা করবেন রাষ্ট্রের মানুষের মঙ্গলের কথা ভেবেই করবেন। সার্চ কমিটি হলেও সবার প্রস্তাব বিবেচনায় করেই হবে।’

ইতিবাচক কিছুর অপেক্ষায় আছে বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহাবুবুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে (১৮ ডিসেম্বর) আমরা দলের পক্ষ থেকে বলেছি সর্বজনগ্রাহ্য, অভিজ্ঞ, নিষ্ঠাবান মানুষদের নিয়ে সার্চ কমিটি করতে। আমরা আশাবাদী মানুষ। আশা নিয়েই বাঁচি। তাই আশা করি, আমাদের প্রত্যাশিত ব্যক্তিদের নিয়েই এমন একটি কমিটি গঠিত হবে, যা অতীতের চেয়ে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল হবে।’

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যও আইন বিশেষজ্ঞ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তটা পুরোপুরি রাষ্ট্রপতির। তিনি যা ভালো মনে করবেন তাই করবেন। তবে আমার উপলব্ধি থেকে মনে হচ্ছে, প্রচলিত নিয়মেই এবারের কমিশন গঠন হবে। আপাতত সার্চ কমিটি ছাড়া ভিন্ন কিছুর সম্ভাবনা দেখছি না।’

আইন প্রণয়নের কথা রাষ্ট্রপতিকে বলেছেন ওয়ার্কার্স পার্টি। দলটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘আমরা আইনের কথা বলেছি রাষ্ট্রপতিকে। যদি সেটা সম্ভব না হয় তবে অতীতের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্নাতীত সার্চ কমিটি করবেন এমন আশা করি।’

রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে রাজনৈতিক বিশ্নেষক তারেক শামসুর রেহমান বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তাকে স্বাগত জানাতেই হবে। তবে পূর্বের অভিজ্ঞতা বলে সার্চ কমিটি গঠনের অভিজ্ঞতা কিন্তু সবসময় সুখকর ছিলো না। তবে এবার হয়তো বিতর্কহীন একটি সার্চ কমিটি আমরা পাবো।’

এরই মধ্যে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কাস পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণতন্ত্রী পার্টি, জেএসডিসহ ১৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যে সংলাপ হয়েছে, তাতে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে জোরালো দাবি উঠেছে নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের জন্য। তবে সার্চ কমিটি গঠনের কথাও বলেছে অনেক দল।



মন্তব্য চালু নেই