‘প্রতিবন্ধী’ ছেলের যে উত্তরে মর্মাহত বাবা

বব কর্নেলিয়াস একজন সমাজকর্মী। যেসব শিশুদের বিশেষ যত্ন প্রয়োজন (প্রতিবন্ধী), তাদের মা-বাবার সঙ্গেই তিনি কাজ করে থাকেন। সবসময় তাদের উপদেশ দিয়ে থাকেন।

কিন্তু শ্রেণিকক্ষে এক উত্তরপত্রে নিজের ১১ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী ছেলে ক্রিস্টোফারের ‘দুটি শব্দ’ দেখে নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি কর্নেলিয়াস।

শিশুদের পড়াশোনার একটি প্রকল্পে মিডল-ক্লাসে অধ্যয়নরত ক্রিস্টোফার। মূলত নতুন স্কুলে নিজেদের মানিয়ে নিতে এখানে তাদের প্রস্তুত করা হয়।

ছেলের বর্ণিল অর্জনগুলো দেয়ালে সাঁটিয়ে রাখবেন আশায় গত সপ্তাহে ‘ব্যাক-টু-স্কুল নাইট’ চলাকালে শ্রেণিকক্ষে ছেলের কাজগুলোর ছবি তুলে রাখেন কর্নেলিয়াস।

ওইদিন একটি পেপার শিটে ষষ্ঠ গ্রেডের শিক্ষার্থীদের তাদের প্রিয় খাবার, টিভি শো, বড় হয়ে কী হতে চায়- এ ধরনের কিছু বিষয় লিখতে দেয়া হয়।

ক্রিস্টোফার ভালোভাবে কথা বলতে পারে না। তবে ছেলের কিছু কথা বুঝতে পেরে অনেক সময় হাসিতে ফেটে পড়েন কর্নেলিয়াস।

কিন্তু যখন তিনি বাসায় ফিরেন, তখন নিজের তোলা একটি ছবি খুব কাছ থেকে দেখছিলেন। আর তখনই হৃদয়বিদারক কিছু একটা চোখে পড়ে কর্নেলিয়াসের।

যখন তার ছেলে ক্রিস্টোফারকে নিজের কয়েকজন বন্ধুর নাম লিখতে বলা হয়, সে লিখেছিল- ‘কেউ নয়’।

হ্যাঁ, ‘কেউ নয়’। এই দুটি শব্দ রীতিমতো দংশন করেছিল। কর্নেলিয়াস জানতেন, তিনি স্থির থাকতে পারবেন না। তিনি ফেসবুকে গেলেন তার সবচেয়ে ছোট প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে একটি বার্তা দেয়ার জন্য।

একটি পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আমি যতদূর জানি (একটি ব্যতিক্রম ছাড়া), ক্রিস্টোফারের সহপাঠীরা প্রকাশ্যে তার প্রতি তেমন নির্মম ছিল না। যাহোক তারা যা করেছে- তারা তাকে এড়িয়ে চলতো।’

অন্য মা-বাবাদের উপদেশ দিয়ে আসা কর্নেলিয়াস সিবিএস নিউজ-কে বলেন, ‘ভাগ্যের নির্মম পরিহাস…আমি নিজের জন্য কোনো সমাধান খুঁজে পেলাম না।’

এজন্য ফেসবুককে বেছে নিলেন নিউ জার্সির এই বাবা। এজন্য তিনি ফেসবুকে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সূত্রপাত করেছেন, যাতে মা-বাবাদের অবশ্যই অংশ নেয়া উচিত। কর্নেলিয়াস বলেন, ‘ঘর থেকেই এটা শুরু করতে হবে, মা-বাবাকে আমাদের শিশুদের শেখাতে হবে।’

কর্নেলিয়াসের ছেলে তেমনটা কথা বলতে পারে না, নিজেকে বোঝাতে তার কষ্ট হয়। নিজের অনুভূতিগুলোও সে বলতে পারে না, কোনো কিছু বোঝালেও তা ভাসা ভাসা।

কিন্তু ক্রিস্টোফারকে যখন এড়িয়ে চলা হতো, তখন যে বুঝতো। আর কর্নেলিয়াস জানেন, এটা তাকে বিরক্ত করতো।

কর্নেলিয়াস বলেন, ‘আমি একটি বিষয় আমার ছেলে থেকে শিখেছি- যেসব শিশুর বিশেষ যত্ন নেয়া প্রয়োজন তারা অনেক বেশি জানে, যতটা না আমরা মনে করি তারা জানে।’

কাজে আসুক আর না আসুক সোমবার এ নিয়ে কর্নেলিয়াস স্কুলে ক্রিস্টোফারের শিক্ষকদের সঙ্গেও বসেছেন। দিন শেষে এটা কেবল সহমর্মিতা হয়ে আসে।

কর্নেলিয়াস মা-বাবাদের উদ্দেশে একটি ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘আমার কাছে যে বিষয়টি একমাত্র সমাধান মনে হয়েছে আমি আপনাদের সঙ্গে তা বিনিময় করছি এবং বলছি- আপনাদের শিশুদের সঙ্গে কথা বলুন।’

‘অনুগ্রহ করে তাদেরকে বলুন- যেসব শিশুর বিশেষ যত্ন নেয়া প্রয়োজন তারা অনেক বেশি জানে, যতটা না আমরা মনে করি তারা জানে। তারা বিষয়টি খেয়াল করে, যখন তাদেরকে এড়িয়ে চলা হয়। যখন তাদের পেছনে তাদেরকে তাচ্ছিল্য করা হয়, তারা তা টের পায় (যদিও অনেক সময় মনে করা হয়, সামনে যেভাবে অন্য ধরনের এসব শিশুরা বুঝে না, তাদের পেছনেও তারা বুঝে না)। কিন্তু তাদের অধিকাংশই এটা খুব ভালোভাবে অনুভব করে, যখন তাদেরকে অন্যদের চেয়ে আলাদাভাবে দেখা হয়’ যোগ করেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই