ভোলায় স্থাপিত ২২৫ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ

প্রধানমন্ত্রী’র প্রতিশ্রুতি ভোলার বিদ্যুৎ যাবে বরিশাল-খুলনায়

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ভোলার বোরহানউদ্দিনে স্থাপিত ২২৫ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ ভোলা, বরিশাল ও খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সরবরাহ করা হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র পরিদর্শন করেন। তিনি সে সময় এই গ্যাস দিয়ে ভোলায় ২১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র ও একটি সার কারখানা তৈরি করার ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বন্যাকবলিত ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা সফরকালে তার অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯ বছর পর প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতির একটি পূরণ হতে যাচ্ছে। বোরহানউদ্দিনে স্থাপিত ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র্র্রের কার্যক্রম প্রায় শেষ হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ ও বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যাতায়াতের জন্য প্রায় ২৫ ফুট চওড়া একটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।

ভোলাবাসীর দাবী, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সার কারখানা তৈরির প্রতিশ্রুতিটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক। সংশ্লিষ্টরা জানান, সার কারখানা তৈরির জন্য জমি নির্ধারণ করা হচ্ছে। জমি ঠিক হলে অনুমোদনের পর তা তৈরির কাজ শুরু হবে।

ভোলা জেলা শহর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণে বোরহানউদ্দিন উপজেলার সূর্যকান্দি গ্রামের নাদিরারচর এলাকায় স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে গিয়ে জানা যায়, ২০১৩ সালে প্রায় ৪০ একর জমি অধিগ্রহণ করে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। চায়না কম্পানির চেঙ্গাই গ্রুপ এর নির্মাণকাজ শুরু করে। শুরু থেকেই প্রতিদিন চায়না ও বাংলাদেশি মিলে সহস্্রাধিক শ্রমিক কাজ করে। দুই বছর শেষে দুটি গ্যাস টারবাইন, একটি স্টিম টারবাইন তৈরি করে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুই প্রকৌশলী জানান, এ কেন্দ্র থেকে বরিশাল পর্যন্ত বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার দিয়ে জাতীয় গ্রিড সঞ্চালন লাইনেও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ভোলার তেঁতুলিয়া ও বরিশালের কালাবদর নদীতে প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত সাতটি উঁচু টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি টাওয়ারের উচ্চতা ৪৩০ ফুট। ৩৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ডাবল সার্কিট লাইন থেকে ৭০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা যাবে। এর আগে ভোলা শহরে স্থাপিত ৩৩ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র থেকে সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। ওই লাইনটি বর্তমানে জরাজীর্ণ হয়ে পরায় প্রায়ই ত্রুটি দেখা দিত এবং বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটত।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ইতিমধ্যে এই কেন্দ্র থেকে প্রথম পর্যায়ে ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পরীক্ষামূলকভাবে জাতীয় গ্রিড লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এভাবে আরো কিছুদিন আমরা জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে যাব। আসন্ন ঈদুল ফিতরের পর আনুষ্ঠানিকভাবে এটি উদ্বোধন করা হবে।’

এ বিষয়ে ভোলা-২ ( বোরহানউদ্দিন- দৌলতখান) আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল বলেন, ‘অতি দ্রুত আমার নির্বাচনী এলাকার ঘরে ঘরে গ্যাস পৌঁছে দেওয়া হবে এবং এখানে গ্যাসভিত্তিক শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা হবে।’

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘ ভোলায় প্রায় এক ট্রিলিয়ন গ্যাস মজুদ রয়েছে। এ থেকে ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এ গ্যাস দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে গ্যাসভিত্তিক ৩৪.৫ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরো একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রায় দুই হাজার দুই শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাপেক্স ও রাশিয়া যৌথ উদ্যোগে আরো চারটি কূপ খননের কাজ শুরু করবে। প্রাপ্ত গ্যাস দিয়ে সরকার এখানে একটি সার কারখানা স্থাপনেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার মাধ্যমে বছরে প্রায় পাঁচ লাখ টন সার উৎপাদন করা সম্ভব। ভোলাকে বিশেষ ইকোনমিক জোন চিহ্নিত করা হয়েছে। দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারীরা এ জেলায় বিনিয়োগ করবেন। ভোলা হবে দেশের সবচেয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধশীল একটি আধুনিক ডিজিটাল শিল্পোন্নয়ন জেলা।



মন্তব্য চালু নেই