প্রধানমন্ত্রীর শশুড়বাড়িতে খনি, তবে খোঁজ নেই!

ভৌগলিক কারণেই দেশের উত্তরাঞ্চল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রয়েছে বাংলার অনেক প্রচীন নিদর্শণ। তেমনি রয়েছে প্রচুর খনিজ সম্পদ। প্রয়াত পরমানু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জেও রয়েছে খনিজ সম্পদের খনি।সেখানে রয়েছে কয়লা ও লোহার খনি। যা ১৯৬৫ সালে প্রাথমিক সন্ধান পেয়েছিলেন তৎকালীন আইয়ুব সরকারের খনিজ সম্পদ বিভাগ। কিন্তু আজও তা রয়েছে অবহেলায়।

তারপর কোন সরকারও খোজ নেননি। অথচ এর দ্বারা যেমনি দেশ অনেক উপকৃত হবে তেমনি এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমানও অনেক উন্নত হবে। তাই এই এলাকাবাসি তাদের পূত্রবধু শেখ হাসিনা ওয়াজেদের কাছে খনি থেকে লোহা ও কয়লা উত্তলনের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পীরগঞ্জে এক নির্বাচনী জনসভায় খালাশপীর কয়লা খনির কয়লা উত্তোলনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় নবম থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলেও এ প্রতিশ্রুতি আলোর মুখ দেখেনি। বরং দীর্ঘ সময় ধরে খালাশপীর কয়লা খনির কয়লা উত্তোলন কাজ অনুমোদনের অপেক্ষায় ফাইলবন্দি আছে।

অন্যদিকে লৌহ খনির সন্ধান প্রাপ্তির পর অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় আজও তা রয়েছে দেশবাসীর দৃষ্টির আড়ালে।

জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে উপজেলার মিঠিপুর ইউনিয়নের ভেলামারী পাথারে ওই খনির প্রাথমিক সন্ধান পেয়েছিলেন তৎকালীন আইয়ুব সরকারের খনিজ সম্পদ বিভাগ। ওই সময়ে খনি এলাকা চিহ্নিত করণে পাথারের মাঝখানে একটি জমিতে কংক্রিটের ঢালাই করে রাখা হয়। অনুসন্ধান করা হয় ৪টি কূপের মুখ। যা আজও বিদ্যমান।

লোহার খনিটি অনুসন্ধান ও আবিষ্কারের বিষয়ে এলাকার প্রবীণব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে চমকপ্রদ কথা জানা যায়। ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পাক-ভারত যুদ্ধের পরপরই তৎকালীন সরকারের খনিজ সম্পদ বিভাগের একদল কর্মকর্তা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যচিত্রানুযায়ী একটি বিমান ও গাড়িবহর নিয়ে প্রায় ৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই বিশাল মাঠে (পাথার) আসেন।

বিমানের নিচে ঢেঁকির মতো একটি বিরাট শক্তিশালী চুম্বক দণ্ড ঝুলিয়ে বিমানটিকে অনেকটা নিচু করে পাথারের উপর দিয়ে উড়ে যায়। এক পর্যায়ে ঝুলন্ত চুম্বক দণ্ড ছোট পাহাড়পুর গ্রামের আব্দুল ছাত্তার ও আবুল ফজলের মালিকানাধীন জমির উপর এসে আর্কষিত হলে বিমানটিকে বারবার মাটির দিকে টেনে নিতে চেষ্টা করে।

এ পরীক্ষার ফলে সে সময়ের খনিজ বিজ্ঞানীরা এখানে লোহার খনির উৎস আছে বলে অনেকটা নিশ্চিত হন এবং জমির উপর কংক্রিটের ঢালাই করে চিহ্ন দিয়ে এলাকার প্রাথমিক জরিপ কাজ সম্পন্ন করে চলে যান।

ওই সময়ের খনি এলাকায় পানের দোকানদার কুতুবপুর গবরা গ্রামের কছির উদ্দিনসহ (৭০) বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির একাধিক লোকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, প্রথমে জরিপ সম্পন্নের পরের বছর ওই সরকারের খনিজ বিভাগের লোকজন এসে চিহ্নিত স্থানে খনন করেন।

ভেলামারী মাঠ থেকে পূর্ব উত্তরে কেশবপুর, প্রথম ডাঙ্গা, ছোট পাহাড়পুরের ৩ থেকে ৪ কি.মি. পশ্চিমে পবনপাড়া, দক্ষিণে সদরা কুতুবপুর পর্যন্ত বিস্তৃর্ণ এলাকার অসংখ্য স্থানে পাইপ বসিয়ে লোহার খনির সন্ধান করেছেন কয়েক মাস ধরে ।

এ সময় অনুসন্ধান কাজে পাইপের ভিতর দিয়ে মাটির গভীরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে এলাকার অনেকের মাটির ইন্দারা (কূয়া) ভেঙে পড়ে। বলা যায় মাটির ইন্দারা এখন বিলুপ্ত। পরের বছর পাইপ খননের মাধ্যমে দ্বিতীয় দফা জরিপ সম্পন্ন করে তারা চলে যান।

১৯৬৭ সালের দিকে ওই সরকারের খনিজ সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা বিদেশি খনিজ বিশেষজ্ঞসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির বিশাল যানবাহনের বহর নিয়ে এসে পানবাজার হাই স্কুল মাঠে ক্যাম্প স্থাপন করেন। এরপর তারা সন্ধান প্রাপ্ত লোহার উপাদান উত্তোলনের জন্য ভেলামারি মাঠের বিভিন্ন স্থানে পাইপের মাধ্যমে উত্তোলনকৃত শক্ত লোহার গাঢ় লাল উপাদান এলাকার কৌতুহলী সব মানুষের হাতে তুলে দেন।

মাটির ৯শ ফুট নিচ থেকে ২২ হাজার ফুট পর্যন্ত পাইপ খনন করে তারা লোহার উন্নতমানের খনি স্তরের সন্ধান পেয়েছেন। যার বিস্তৃতি প্রায় ১০ কিলোমিটার। তবে এ লোহা উত্তোলনের জন্য পূর্ণতা আসতে আরো অনেক বছর সময় লাগবে বলে খনিজ কর্মকর্তারা ওই সময়ে জানিয়েছেন বলে জানান এলাকাবাসী।

অনুসন্ধান কাজ শেষ করে ভেলামারিতে স্থাপনকৃত মূল ৪টি পাইপের উৎস মুখ কংক্রিটের ঢালাইয়ের মাধ্যমে বন্ধ করে দিয়ে ক্যাম্প গুটিয়ে চলে যান তারা। ওই সময় তারা খনি এলাকায় সম্ভাব্য যোগাযোগ ব্যবস্থাও জরিপ করেন।

লোহার খনির ব্যাপারে পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান মকবুল এলাহী মসগুল জানান, ভেলামারীতে লৌহ নয়, তামা থাকতে পারে। আইয়ুব সরকারের সময় ভেলামারী পাথারে অনুসন্ধানকৃত কূপগুলো বাণিজ্যিকভাবে করা হয়নি। ২০০০ সালের প্রথম দিকে ভেলামারীর পশ্চিমে পাহাড়পুর গ্রামের পাথারে পরীক্ষামূলকভাবে অনুসন্ধান কাজ চালানো হয়েছিল পেট্রোবাংলা থেকে।



মন্তব্য চালু নেই