প্রধান শিক্ষকের এ কী হাল!

রাজশাহী: এমদাদুল হক (৫৫)। তিনি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ছাতারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মোশারফ হোসেন নামে নাটোরের এক ব্যক্তির কাছে তিনি ৫০ হাজার টাকা পেতেন। সেই টাকা দেয়ার কথা বলে তাকে গত ২৯ আগস্ট ডেকে নেয়া হয় নাটোরে। সেখানে গেলে তাকে করা হয় অপহরণ। নিয়ে যাওয়া হয় কম বসতিপূর্ণ নির্জন এক এলাকায়। সেখানে এক ঘরের ভেতরে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে আটকে রাখা হয় টানা ১০ দিন।

শুধু তাই নয়, পাওনা ৫০ হাজার টাকা দেয়াতো দূরের কথা উল্টো তার পরিবারের কাছে দাবি করা হয় মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা। এমনকি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর ওই প্রধান শিক্ষককে অপহরণকারীরা হত্যার পরিপল্পনাও করেছিল। কিন্ত তা করতে পারেনি অপহরণকারী চক্র। রক্ষা পান শিক্ষক এমদাদুল হক।

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টায় নাটোর জেলার সিংড়া থানার সাহেব আটঘোলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে র‌্যাপিড অ্যাশকন ব্যাটলিয়ন-৫ (র‌্যাব) তাকে উদ্ধার করে। সেইসঙ্গে আটক করা হয় ওই চক্রের ৪ সদস্যকেও।

অপহৃত শিক্ষক এমদাদুল হক রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার ছাতারী এলাকার মৃত আয়েন উদ্দিনের ছেলে।

আটকরা হলেন- নাটোরের সিংড়া উপজেলার সাহেবের আটঘোলা গ্রামের মৃত আমজাদ আকন্দের ছেলে বুলু আকন্দ (৫৬), একই উপজেলার বনকুড়ুল গ্রামের আবেদ আলীর ছেলে শাহ আলম (২৫) ও সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার গাবরগাড়ী গ্রামের মৃত আজগর আলীর ছেলে আব্দুর রাজ্জাক (৪০)। এ সময় র‌্যাব দেশীয় তৈরি ২টি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করে।

র‌্যাব সূত্র জানান, নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার চামটা ঠাকুরপাড়া গ্রামের মৃত ইরাজ ফকিরের ছেলে মোশারফ হোসেনের (৪১) কাছ থেকে শিক্ষক এমদাদুল হক ৫০ হাজার টাকা পেতেন। মোশারফ সেই টাকা দিবে বলে ২৯ আগস্ট প্রধান শিক্ষক এমদাদকে নাটোরের সিংড়া থানাধীন জামতলা নামক স্থানে আসতে বলেন। সেখান থেকে এগিয়ে যাবার কথা বলে মোশারফ তাকে শাহাদাত নামক এক ব্যক্তির বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে রাতের খাবার-দাবারের পর মোশারফসহ তার অপর ৩ জন সহযোগী রাজ্জাক, ইসমাইল এবং শাহাদাত স্কুল শিক্ষক এমদাদকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তার পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।

এরপর তারা নির্বিঘ্নে মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে অপহৃত যেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা অন্য কারও নজরে না পড়ে তার জন্য সাহেব আটঘোলা নামক দুর্গম ও কম জনবসতি পূর্ণ এলাকার জনৈক বুলুর বাড়িতে শিকল দিয়ে আটকে রাখে। অপহৃত এমদাদ বুলুর বাড়িতে আটক থাকাকালে তার খাবার আসতো পাশের গ্রামের আকরামের বাড়ি থেকে। আর এ পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতো মোশারফের আরেক সহযোগী ইসমাইল।

অপরদিকে, মুক্তিপণের বিষয়টি নিয়ে অপহৃতের পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করতো আরেক অপহরণকারী রাজ্জাক যার অবস্থন ছিল সিরাজগঞ্জে। এভাবে আসামিরা অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে অপহরণের পরিকল্পনা করছিল। যাতে করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অপহৃতকে উদ্ধার কিংবা তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পারে। পরে অপহরণকারীদের সঙ্গে অনেক দেন-দরবারের পর অপহরণের মুক্তিপণ ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ কারে।

অপহণকারীরা ৮ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবারের মধ্যে মুক্তিপণের টাকা প্রদানের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মুক্তিপণ প্রদানে ব্যর্থ হলে কিংবা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি অবগত করলে তারা অপহৃতকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়।

এদিকে, এ ঘটনায় ০২ সেপ্টেম্বর অপহৃতের পরিবার র‌্যাবের কাছে একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরে অপহৃতকে উদ্ধার ও আসামিদেরকে গ্রেপ্তারের জন্য র‌্যাব-৫ অভিযানে নামে। ৮ সেপ্টেম্বর অপহৃত ব্যক্তির অবস্থান নিশ্চিত করার পর প্রথমে মেশারফ ওরফে জামানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরপর মোশারফকে নিয়ে অন্য অসামিদেরকে গ্রেপ্তার করার অভিযান পরিচালনার সময় অপহরণকারী ইসমাইল র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে তার অন্য সহযোগীদের অপহৃত এমদাদকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়।

কিন্ত র‌্যাব-৫ এর এএসপি জামাল আল নাসের এর নেতৃত্বে একটি অপারেশন দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে অপহৃত ছাতারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমদাদুলকে শিকল দিয়ে বেঁধে আটকে রাখা অবস্থায় জীবিত উদ্ধার করে এবং অন্যান্য আসামি বুলু, শাহ আলম এবং রাজ্জাককে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

যেহেতু অপহৃত স্কুলশিক্ষক তাদের পূর্ব পরিচিত, তাই মুক্তিপণ আদায়ের পরপরই তারা তাকে হত্যা করে লাশ গুম করবে বলে পরিকল্পনা করছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণকারীরা জানিয়েছে বলে দাবি করেছে র‌্যাব।



মন্তব্য চালু নেই