প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বের করে দেয়ার হুমকি

উপজেলা পরিষদে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কর্তৃত্ব বাতিল করে জনপ্রতিনিধির ক্ষমতায়ন এবং জাতীয় বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটি।

৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে দাবি না মানলে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রতিটি উপজেলা অফিসার্স ক্লাব থেকে বের করে দেয়া এবং সব অফিস নিজেদের দখলে নেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।

আজ শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ২৬টি ক্যাডার ও বিভিন্ন ফাংশনাল সার্ভিস সমন্বয়ে গঠিত প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটির সমাবেশে এই হুঁশিয়ারি দিয়ে ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

এর মধ্যে রয়েছে আগামীকাল রোববার থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কালো ব্যাচ ধারণ, ২৩ ডিসেম্বর সারা দেশে মানববন্ধন, ২৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান এবং ২৭ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন।

প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটির নেতারা অভিযোগ করেন, উপজেলা কার্যকর করার নামে ইউএনওকে উপজেলার ৯৮ শতাংশ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এবং জনপ্রতিনিধিকে বাদ দিয়ে সরকারি কর্মকর্তার ক্ষমতায়ন করা হয়েছে।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, তারা উপজেলায় চেয়ারম্যানের অধীনেই কাজ করতে চান। ইউএনওর কাছে জবাবদিহি করতে চান না।

প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটির সদস্যসচিব মো. ফিরোজ খান বলেন, জাতীয় বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহাল এবং উপজেলা পর্যায়ে ১৭টি সার্ভিসের সেলফ ড্রয়িং কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য বিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর ও অযাচিত নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল।

কিন্তু তাতে সাড়া না দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত ১৪ অক্টোবর উপজেলা পরিষদের ক্ষমতায়নের নামে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠামূলক একটি অফিস স্মারক জারি করে।

ফিরোজ খান বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা অফিস স্মারকে উপজেলা পরিষদকে অধিকতর কার্যকর করার নামে পেশাদার ও কারিগরিসহ উন্নয়নমুখী দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা উত্তোলন, প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ ও তদারকিসহ সব ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অযাচিত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে।

এ সিদ্ধান্ত দেশের সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য চরম অবমাননাকর। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা স্মারকের মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যানের তুলনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

নেতারা বলেন, সরকারের বিশেষ পদ হিসেবে চিহ্নিত উপসচিব থেকে তদূর্ধ্ব পর্যায়ের সুপার নিউমারি পদ দেখিয়ে নির্ধারিত পদের চেয়ে অতিরিক্ত সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ায় প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা যথাসময়ে পদোন্নতি পাচ্ছেন। কিন্তু অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা সুপারনিউমারি পদে পদোন্নতির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

জাতীয় বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিল করে নতুন করে বেতন স্কেলের প্রজ্ঞাপন জারি করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানায় প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটি।

তাদের দাবির মধ্যে আরও রয়েছে, সরকারি প্রথম শ্রেণির চাকরিতে যোগদানের ক্ষেত্রে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার বৈষম্য নিরসন; বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিতের সিদ্ধান্ত বাতিল করা; নিজস্ব ক্যাডার ও ফাংশনাল সার্ভিস বহির্ভূত সব ধরনের প্রেষণ বাতিল করা, কৃত্য পেশাভিত্তিক প্রশাসন গড়ে তোলা ইত্যাদি।

সামাবেশ বক্তব্য দেন, প্রকৃচির কেন্দ্রীয় স্টিয়ারিং কমিটির সচিব ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর, বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের মহাসচিব কৃষিবিদ মো. মোবারক আলী, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব প্রফেসর এম ইকবাল আর্সলান প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই