প্রসঙ্গ রুবেলঃ এবার আমব্রিনকে নিয়ে হ্যাপির অশ্লীল স্ট্যাটাস

‘অধিকার ছাড়িয়া দিয়া অধিকার ধরিয়া রাখার মত বিড়ম্বনা আর হয় না’ রবি ঠাকুরের এই লাইনটির মর্মার্থ না বোঝার বিড়ম্বনাও কম নয়। প্রেম ও ভাঙনের পরে যৌনজীবন নিয়ে জাতীয় দলের ক্রিকেটার রুবেলের নামে মামলা করে রাতারাতি প্রচারের আলোয় চলে এসেছিলেন নাজনীন আকতার হ্যাপি। প্রথমদিকে মানবিক কারণে অনেকেই তার সমব্যাথী ছিলেন। কিন্তু যৌনসম্পর্ককে পুঁজি বানিয়ে একের পর এক নাটকে সকলেই বিরক্ত হয় তার উপর।

বলার মত একটা পরিচয় তার ছিল- অবশ্য মডেল, অভিনেত্রী কিংবা নায়িকা হিসেবে তাকে কতজন চিনতেন, বলা মুশকিল। রুবেলের সঙ্গে যৌনসম্পর্কের জের ধরেই পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। নিজেকে লাইম লাইটে রাখার কৌশল হিসেবে মামলা দায়ের, মামলা তুলে নেয়া, আত্মহত্যার হুমকি, ফেসবুকে একের পর এক বিকর্তিত স্ট্যাটাস দিতে থাকেন। তবে এভাবে আর কতদিন? প্রচারণার নতুন কৌশল হিসেবে মিডিয়ায় প্রতিষ্ঠিত মডেল ও অভিনেত্রীদের উদ্দেশ্যে আক্রমনাত্বক মন্তব্য শুরু করেন রুবেলকে জড়িয়ে।

কিছুদিন আগে অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদকে উদ্দেশ্য করে বাজে মন্তব্য করার পর এবার তার তোপের মুখে মডেল ও উপস্থাপক আমব্রিন সারজিন। ফেসবুকে রুবেলের ছবিতে কমেন্ট করার অভিযোগে অশালীন স্ট্যাটাস দিয়েছেন ট্রাবল স্টার হ্যাপি।

যে রুবেলের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক (!) নেই, তার ছবিতে ভক্তরা কে কি কমেন্ট করছেন, এ নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে শ্লীলতার মাত্রা ছাড়িয়ে গালাগালি করার কি যুক্তি- তা বোঝা কঠিন নয়। অতীতে নিজের অবৈধ যৌন সম্পর্ককে পুঁজি করে মিডিয়ার মেয়েদের ‘বেশ্যা’ বলায় তার কোন ধরনের প্রচারণা হচ্ছে- তা একমাত্র হ্যাপিই জানেন। ফেসবুকে রুবেলের ছবিতে তার অসংখ্য নারী ভক্তরা তাদের অসংখ্য কমেন্টে বিভিন্ন ভাবেই তাদের পছন্দের কথা জানান দেন। পছন্দ, সমর্থন কিংবা প্রসংশাসূচক কথা লিখতে গিয়ে অনেকেই অনেক রকম কথা লেখেন। মিডিয়ার অনেক তারকার মতই আমব্রিন রুবেলের ছবিতে লিখেছেন, ‘হট’। আর তা নিয়েই বিপত্তি! প্রচারণার কূট কৌশল অনুযায়ী ফেসবুকে অশালীন স্ট্যাটাস দিয়ে বিতর্কের নতুন আগুন জ্বালতে দেরি করেননি হ্যাপি।

রুবেলের ছবিতে কমেন্ট এবং হ্যাপির প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আক্রমাত্বক অশ্লীল স্ট্যাটাস প্রসঙ্গে আমব্রিনের বক্তব্য, ‘ছোট বেলায় দেখতাম মাঠে মেয়েরা খেলা দেখতে যেতো। তাদের পছন্দের খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্য লিখতো ম্যারি মি। আজকে আমাদের দেশের খেলোয়াড়রা সেই জায়গা দখল করেছে, বিদেশে খেলতে গেলে ওই দেশের মেয়েরা তাদের বলে ম্যারি মি। প্রিয় খেলোয়াড়কে নিয়ে এভাবে ফান করার মাঝে আমি খারাপ কিছু দেখি না। ভক্তরা ভালবেসে, পছন্দ করে অনেক কিছুই লিখতে পারে। আর সেই ভালো লাগা থেকেই আমি আমার পছন্দের খেলোয়াড় রুবেল এর ছবিতে কমেন্ট করেছিলাম ‘হট’ লিখে। কিন্ত মঙ্গলবার অবাক হলাম যখন দেখলাম ওই কমেন্ট নিয়ে একজন সোশ্যাল সাইটে আমাকে নিয়ে আপত্তিকর অশ্লীল ভাষায় যাচ্ছে তাই লিখে যাচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে। আমার প্রশ্ন রুবেল একজন পাবলিক ফিগার, ভক্তদের অধিকার আছে তার সম্পর্কে ভালো খারাপ লাগা প্রকাশ করবার। যেই মেয়ে এই কাজটি করছে সে কে? তার কি অধিকার আছে আরেকটা মেয়েকে এই গালিগালাজ করার।’

ফেসবুকে হ্যাপির স্ট্যাটাসটি প্রকাশের অযোগ্য। তবে বেশকিছু শব্দ বাদ দিলে তার স্ট্যাটাসটি অনেকটা এমন, ‘আমি ফেসবুকে বোধহয় এই প্রথম বাজেভাবে কিছু বলছি। আমার এই লেখা কারও কাছে আপত্তিকর মনে হলে আন্তরিকভাবে দু:খিত। মিডিয়ার দুই/ একজন … জন্য বাইরের অনেকেই মিডিয়ার মানুষদের ওপর বিরূপ ধারনা পোষণ করে এতে করে অনেকেই অনেক সময় অনাকাঙ্খিত প্রশ্নের সম্মুখীন হয়,আমি নিজেও হয়েছি। আমি যার কথা বলছি তার মত …. বাংলাদেশে কয়টা আছে কে জানে! রুবেলকে নিয়ে তোর …. তো পা থেকে মাথা পর্যন্ত! …. করতে করতে তো দেখি রুবেলকেও বাদ দিবি না। রুবেলের আইডিতে কোন ছবি দেখলে সেখানে হট না লিখে কমেন্ট না করলে তো তোর চলেই না। রুবেলকে দেখে তোর কোন পর্যন্ত …. রে ….? আবার তোর হিরো ও বলিস ? …. স্বভাব কি তোর জন্মগত? রুবেল আবার তার হিরো! লল। নিজের খোমাটা আয়নায় দেখিছিস? তোর বয়স কত তার হিসাব আছে? মেকাপ দিয়ে ওইটুকু। রুবেলের ছবি দেখেই তো তোর মাথায় … উঠে যায় …, ইনবক্স এ না জানি কি করে ফেলিস! ও ফোনও তো আছে তোর মত …. তো ফোনেই …. করে ফেলতে পারিস। আর দেখা হলে কী করতে পারিস সেটা না বললেও চলে। জীবনে …. দেখিনি তুই আমাকে দেখিয়ে দিলি। তোর মত …. আর দেখব কী না কে জানে! তোর নামটা প্রকাশ করার খুব ইচ্ছা ছিল কিন্তু নাম প্রকাশ করে তোকে তারকা বানালাম না। আবার রুবেলের ছবিতে কমেন্ট করিস পাশে আছি, … বাচ্চা … কোথাকার। কোনদিন সামনে পাইলে তোর এত …. অষুধ জায়গামত দিয়ে দিতাম ….। আর আমার এই পোষ্ট দেখে কেউ মাথা ঠান্ডা করার কথা বা জ্ঞান দিতে আসবেন না। মুখটা খারাপ করতে বাধ্য হলাম। আবার সবাই এমন ভাব করতে আসবেন না যে গালাগালি দিয়ে কী না কী করে ফেললাম। খারাপ কথা সবাই বলতে পারে আমি আজকে এগুলো না বলে পারলাম না।’

এমন যবনিকার পরে অশ্লীল ভাষার প্রয়োগ, ব্যবহার কিংবা সামাজিক যোগাযোগ সাইট বিষয়ক জ্ঞান হ্যাপিকে হয়তো কেউ দেবে না। তবে থেকে যায় কিছু প্রশ্ন। মিডিয়ার খারাপ মেয়েদের জন্য প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন, তবে কি তিনি ভুলে গেলেন নিজের অবৈধ যৌন সম্পর্কের রেশ ধরেই পরিচিত (!) মুখ হ্যাপি? আমব্রিন ব্যক্তিগতভাবে না চিনেই চরিত্রের সনদ দিয়ে দিয়েছন, কিন্তু তার চরিত্রের সনদ দিতে কি তাকে নতুন করে চিনতে হবে? কমেন্ট নয়- কল্পিত ইনবক্স কিংবা ফোনের প্রসঙ্গ টেনে আমব্রিনকে গালাগালি করেছেন, তবে কি তিনি ভেবেছেন রুবেলের সঙ্গে তার রগরগে ফোনালাপ সবাই ভুলে গেছে?

প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে মনে রাখা ভালো, চলতি বছরের শুরুর দিকে জাতীয় দলের ক্রিকেটার রুবেলে বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করে লাইম লাইটে আসেন তার প্রেমিকা (!) নাজনীন আক্তার হ্যাপি। তার আগে মডেল কিংবা নায়িকা- এই গালভারি পরিচয় ছাড়া মিডিয়াতে তার কােন কাজ খুঁজে পাওয়া যাবে না। মামলা, একের পর এক প্রচারণা এবং নাটকের পরেও যে কোন কাজ পেয়েছন- তাও বলা যাবে না। একটি দুটি মিউজিক ভিডিও এবং অখ্যাত প্রযোজক পরিচালকের চলচ্চিত্রের কথা বলেছেন তিনি নিজেই। ওদিকে আমব্রিন ২০০৭ সালে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টারের মঞ্চ থেকে যাত্রা শুরু করেন। মডেলিং, অভিনয়, উপস্থাপনা এবং নিজের বিউটি পার্লারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত তিনি।

এমন স্ট্যাটাসে হয়তো আমব্রিনের কিছুই আসবে যাবে না, কিন্তু হ্যাপির প্রচারণার মুখোরোচক কৌশলে জড়িয়ে গেলেন। কথায় আছে, গাধায় পানি খায় ঠিকই তবে ঘোলা করে। হ্যাপি কবে বুঝবেন, এভাবে নিজেকে জনপ্রিয় করা যায় না। ফেসবুকের ছবি কিংবা স্ট্যাটাসের লাইক ও কমেন্টের সংখ্যার উপর নির্ভর করে এগিয়ে যাওয়া যায় না। সময় ফুরিয়ে গেলে ভুলটা বুঝলেও কতটুকু শোধরানো যাবে- তা সময় বলে দেবে। প্রিয়.কম



মন্তব্য চালু নেই