প্রাণের গ্রন্থমেলা শুরু কাল

বাঙালি সংস্কৃতির বহমান উদার-অসাম্প্রদায়িক ধারার এক অনন্য সংযোজন অমর একুশে গ্রন্থমেলা। শুধু গ্রন্থকে কেন্দ্র করে এমন একটি মেলা সারা বিশ্বেই বিরল। সালাম, শফিক, রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউরসহ জানা-অজানা অসংখ্য বীর বাঙালির আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রতিবছর উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজন করা হয় বাঙালির এ মহা মিলনমেলার। এবছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

প্রতি বছরের মতো এবছরও আয়োজন করা হয়েছে বাঙালির প্রাণের মেলা, অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৫। ইতোমধ্যে মেলার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ।

শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মেলার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির সচিব মো. আলতাব হোসেন, সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ, জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক মোর্শেদ আনোয়ার, টেলিটক এর মহাব্যবস্থাপক মো. শাহ্ আলম প্রমুখ।

শামসুজ্জামান খান বলেন, মেলার সার্বিক প্রস্ততি সম্পন্ন করা হয়েছে। কিছু কাজ বাকি আছে সেগুলো আজকের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আগামীকাল রোববার বিকেল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলার উদ্বোধন করবেন।

এবারের গ্রন্থমেলাকে ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হবে। মেলার বিভিন্ন কাঠামোতে আসবে নতুন মাত্রা। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ছাড়িয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও এর পরিসর বৃদ্ধি করা হয়েছে। আয়োজন করা হয়েছে বিদেশি কবি সাহিত্যিকদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মানের গ্রন্থমেলা। প্রতিদিন সন্ধ্যায় মুক্ত মঞ্চে শিল্পকলা একাডেমির সৌজন্যে নাটক প্রদর্শিত হবে। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এবারের গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ এবং টেলিটকের পক্ষ থেকে ৭০ লাখ টাকা বাজেট রাখা হয়েছে। মেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলবে। এ ছাড়া বন্ধের দিনে বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারিতে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে।

গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯২টি প্রতিষ্ঠানকে ১২৮টি ইউনিট এবং সোহরাওয়ার্দী ২৫৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৪৩৭টি ইউনিট মিলিয়ে ৩৫১টি প্রতিষ্ঠানকে সর্বমোট ৫৬৫টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবারই প্রথমবারের মতো বাংলা একাডেমিসহ মোট ১১টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে গ্রন্থমেলায় প্রতিটির জন্য ৪০০ বর্গফুটের প্যাভিলিয়ন প্রদান করা হয়েছে। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ১০৬টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ১টি করে ইউনিট, ৯৬টি প্রতিষ্ঠানকে ২টি ইউনিট, ৪৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৩টি ইউনিট, ১টি প্রতিষ্ঠানকে ৪টি ইউনিটে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমির অভ্যন্তরীণ অংশে ৩২টি শিশু-কিশোর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৪২টি ইউনিট, ২৫টি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ৪৪টি ইউনিট, ১৯টি মিডিয়া ও আইটি প্রতিষ্ঠানকে ২০টি ইউনিট এবং ১৭টি অন্যান্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ২২টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবার উন্মুক্ত জায়গাসহ ৭২টি লিটল ম্যাগাজিনকে বর্ধমান হাউজের দক্ষিণ পাশে লিটল ম্যাগাজিন কর্ণারে জায়গা দেওয়া হয়েছে।

গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বই ৩০ শতাংশ কমিশনে, ২০০০ সালের পূর্ব পর্যন্ত প্রকাশিত একাডেমির বই ৭০ শতাংশ কমিশন এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বিক্রি করবে।

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০১৪ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০১৪ গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে। এ ছাড়া ২০১৪ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে প্রথমবারের মতো ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে। গ্রন্থমেলায় ৪দিন শিশু প্রহর ঘোষণা করা হবে।



মন্তব্য চালু নেই