প্রেমিকার রূপ পোড়ানোর খেসারত ২ লাখ ৭০ হাজার ডলার!

বছর পাঁচেক আগে গায়ে জ্বালানি ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল প্রেমে ব্যর্থ সহপাঠী। সারা শরীরে দগদগে হয়ে রয়েছে তার চিহ্ন। সেই ভয়াবহ স্মৃতি পেছনে ফেলে তবুও জীবনযুদ্ধে জয়ী তরুণী।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম তার ছবিগুচ্ছের নামকরণ করেছে, ‌‘গ্ল্যামার ফোটোস’। যথাযথ ক্যাপশন হওয়া উচিত ছিল, ‘সাহসিকতার ছবি’।

পাঁচ বছর আগে সহপাঠী প্রেমিককে নিরাশ করার শাস্তি হিসেবে কিশোরী ঝৌ ইয়্যানের গায়ে ঢেলে দেয়া হয়েছিল জ্বালানি তেল।

এরপর আগুন জ্বেলে মেটানো হয়েছিল ব্যর্থ প্রেমের আক্রোশ। প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন ঝৌ, কিন্তু সারা জীবনের মতো শরীরময় বয়ে বেড়াতে হচ্ছে দগদগে সেই স্মৃতিচিহ্ন।

মুখ, পিঠ, কোমর, হাত, পা- ত্বকের ওপর আঁকিবুকি কেটে গেছে পোড়া দাগ। পুড়িয়ে খাক করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে তার শরীরী সৌন্দর্য।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে সেই ষড়যন্ত্র। ক্ষতবিক্ষত শরীর তাকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। প্রবল সাহস আর বাঁচার সুতীব্র আকাঙ্কা সম্বল করে জীবনযুদ্ধে স্বসম্মানে সফল এ তরুণী।

২০১১ সালের সেই অভিশপ্ত দিনটির কথা আজীবন মনে রাখবেন ঝৌ। সেদিন পূর্ব হেফেই প্রদেশে তার বাসভবনে হানা দিয়েছিল সহপাঠী তাও রুকুন।

এর মাত্র কয়েক দিন আগে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে ইতি টেনেছিলেন ঝৌ। সেই আক্রোশে বাড়িতে ঢুকে সাবেক প্রেমিকার গায়ে জ্বালানি ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয় রুকুন।

অগ্নিদগ্ধ ঝৌকে বেশ কয়েক মাস হাসপাতালে কাটাতে হয়। স্কুলে এক বছর নষ্ট হয়। প্রভাবশালী বাবার সন্তান বিত্তবান পরিবারের ছেলে রুকুন অবশ্য আইনের চোখকে ফাঁকি দিতে পারেনি।

বিচারে তার ১২ বছরের কারাদণ্ড হয়। চীনের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, রুকুনের দেয়া রূপ পোড়ানোর খেসারতের ক্ষতিপূরণের অর্থ ২,৭০,০০০ ডলার পেতে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে ঝৌ-কে।

হাসপাতালে ঝৌ-এর দেহে একাধিক অস্ত্রোপচার হয়। কয়েক বছর ধরে কস্মেটিক সার্জারির সাহায্যে ধীরে ধীরে শারীরিক বিকৃতি মেরামত করা হয়। তবে এখনো তার কিছু রয়ে গেছে যেমন থেকে গেছে অপূরণীয় মানসিক ক্ষত।

নিজের মাইক্রোব্লগে ঝৌ জানিয়েছেন, ‘আমি এক অচেনা শরীরের খাঁচার ভেতরে বাস করি। এখনও আমি সেই ১৬ বছরের মেয়ে যে ২১ বছরের আমির মুখোমুখি হতে ভয় পায়।

‘এখনো মনে-প্রাণে আমি সেই চোট্ট রোম্যান্টিক কিশোরী যে কমলা বৃষ্টির স্বপ্ন দেখে। অনেক সময় খুব কাঁদতে চাই, কিন্তু ফুঁপিয়ে ওঠামাত্র সে চেষ্টা থেমে যায়। তবে আবার ভোর হবে, সবকিছু স্বাভাবিক হবে।’

অনলাইনে ঝৌ-এর ছবি প্রচারের পর তা ভাইরাল হয়ে গেছে। টুইটারের সমকক্ষ চীনের সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট ওয়েইবো-তে অসংখ্য ইউজার তার সাহসের প্রশংসায় মুখর হয়েছেন।

কেউ লিখেছেন, ‘মেয়েটি অসামান্য সুন্দরী। সেই সঙ্গে ওর অসম্ভব সুন্দর মনকেও কুর্নিশ জানাই।’

আবার কেউ বলেছেন, ‘তোমার পিঠের ওই দাগ যেন দেবদূতের পিঠের ডানা। সময়ের সঙ্গে ওই ডানাজোড়া ছড়াবে এবং তোমার সৌন্দর্য আরো অপরূপ হয়ে উঠবে।’



মন্তব্য চালু নেই