‘প্রেমিকের বিষণ্নতার ছায়া থেকে যা শিখেছি আমি’

দারুণ এক সমস্যায় পড়ে গেলেন লেখিকা ও ব্লগার ড্যানি ফ্লেইশচার। তার প্রেমিক মানসিকভাবে পুরো ভেঙে পড়েন। মারাত্মক বিষণ্নতা ছেয়ে যায় তাকে। আর তখনই এ পরিস্থিতি থেকে মূল্যবার শিক্ষা নেন ড্যানি। আর সে শিক্ষাই তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, গত বসন্তে আমার প্রেমিক গভীর ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনে পড়েন। তখন এ সম্পর্কে নিজেকে একা বলে মনে হচ্ছিল। এটা স্রেফ একাকী হয়ে যাওয়ার মতো নয়।

এর চেয়ে আরো অনেক বেশি কিছু। মনে হচ্ছিল, আমার প্রেমিক আমার থেকে অনেক দূরে চলে গেছেন। হঠাৎ করেই দুজনের জীবন থেকে স্ফূর্তি উড়ে গেলো। এ অবস্থা কখনো ভালো হবে বলে মনেই হচ্ছিল না। তবে প্রেমিক আবারো ফিরতে চান। কিন্তু বিষণ্নতা প্রতিরোধে তার মস্তিষ্ক শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। তার সহজাত প্রতিরোধী ব্যবস্থাগুলো পিছল হয়ে যায়। প্রতিদিন আমাদের মনে কিছু চিন্তা ভেসে বেড়ায়। যেমন- কাছের অনেক মানুষ আছেন যারা আমাকে ভালোবাসেন। আমিও বেশ কয়েকজনকে ভালোবাসি।

এদের নিয়ে যে জীবন তার একটি অংশ আমি। এখান থেকে বেরিয়ে গেলে তা আমার জন্যে ক্ষতিকর। প্রেমিকের মনে একই কথা প্রশ্ন হয়ে দেখা দিচ্ছিল। এ অবস্থায় তার চোখ দুটো খোলা থাকলেও তাতে দৃষ্টি ছিল না। মনে হচ্ছিল পাতলা একটা অন্ধকার চাদর তাকে ঘিরে রেখেছে। আর এটা দেখে হতাশায় ছেয়ে যায় প্রেমিকা ড্যানির মন। ড্যানি আরো লিখেছেন, অথচ আমি জানি বিষণ্নতা কি। আমার চারপাশে বিষণ্নতার ছায়া নিয়ে বড় হয়েছি আমি। কিন্তু যখন প্রিয় মানুষটা এর গভীরে চলে যান, তখন নিজেকে আর ধরে রাখা যায় না। বিষণ্নতা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা সত্ত্বেও প্রেমিকের এ অবস্থায় ভেঙে পড়ি আমি।

বিষণ্নতায় আক্রান্ত কাউকে সুস্থ করে তোলার অর্থ অনেকটা ডায়াবেটিস ভালো করার মতোই। আমি তাকে জোর করে বিছানা থেকে টেনে তুলতাম। তাকে নিয়ে বাইরে হাঁটতে বেরোতাম। তাকে থেরাপি দিতেও নিয়ে যেতাম। তার অসুস্থতার কারণে আমিও অসুস্থ হয়ে যেতে থাকলাম। যখন মাসখানেকের চেষ্টা নগন্য উন্নতি মিললো, তখন ক্ষোভ ও হতাশা ভর করতে থাকলো। প্রেমিকের দিকে এত বেশি খেয়াল দিতেন ড্যানি যে তার নিজের প্রয়োজনগুলোও মিটতো না। প্রেমিকের বিষণ্নতা ব্যক্তিগতভাবে নেওয়া শুরু করলেন ড্যানি। মনে হতে থাকলো, প্রেমিক এগুলো আসলে ড্যানির সঙ্গে করছেন।

এক রাতে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে প্রেমিককে ডাকলেন ড্যানি। কিন্তু তিনি ‘না’ বলে দিলেন। এতে নিয়ন্ত্রণ হারালেন ড্যানি। তিনি চিৎকার করে রাগ প্রকাশ করলেন। ওপাশ থেকে একই আচরণ করলেন প্রেমিক। একটা সময় তিনি ড্যানিকে প্রশ্ন করে বসলেন, তুমি আমার কাছ থেকে কি চাও? আবারো চরম উত্তেজনা এবং চিৎকার। ড্যানির হৃদয় থেকে প্রেমিকের জন্যে ভালোবাসা চলে গেলো না। কিন্তু সে হৃদয়ে তার প্রবেশের পথটা বন্ধ করে দিলেন। আরো বেশি বিষণ্ন হয়ে পড়লেন ড্যানি।

আসলে প্রেমিকের জন্যে আর কিছুই করার নেই তার। নিজেও গভীর বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়ে পড়লেন। পরে দুজন মিলেই ঠিক করলেন যে, ড্যানির নিজের জায়গাতেই চলে যাওয়া ভালো হবে। দুজনই থেরাপি নিতে শুরু করলেন। দুজন এখনো ঝগড়া করেন আর যার যার অনুভূতি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন সম্ভাবনা খোঁজেন। একটা সময় থেকে প্রেমিকের অবস্থা ভালো হতে থাকলো। তিনি আরো বেশি থেরাপি নিতে থাকলেন।

বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করলেন। আরো বহির্মুখী হলেন। ড্যানি যখন তাকে ভালো করতে চাপ প্রয়োগ বন্ধ করলেন, তখন থেকেই তার অবস্থার উন্নতি দ্রুত হারে ঘটতে থাকলো। তবে যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে। দুজনের মাঝে এমন সব আলাপচারিতা ঘটে গেছে যা কখনো একে অপরকে বলা কখনো সম্ভব ছিল না।

ড্যানি লিখেছেন, এখন আমি জানতে চাই, একজন মানুষকে তার আচরণের জন্যে কিভাবে ক্ষমা করা যায় যখন সে অন্য মানুষ ছিল? এ প্রশ্নের জবাব এখনো মেলেনি ড্যানির। তবে খুব শিগগিরই খুঁজে পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস তার। প্রেমিকের সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়া একরাতে ঘটে যায়নি। ড্যানির নিজেরটাও তেমন ছিল না।

জীবনের এ ঘটনা থেকে ড্যানি একটা শিক্ষা পেয়েছেন। তিনি লিখেছেন, সম্পর্ক মানেই কারো ত্রাণকর্তা হয়ে ওঠা নয়। আমি আমার প্রেমিককে আসলে বাঁচাতে পারিনি। বরং সে নিজেই তার অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। মানুষের এমন পরিস্থিতিতে তাকে কতটা ভালোবাসেন কেবল তাই জানাতে পারেন।



মন্তব্য চালু নেই