প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এসএসসিতে ফেল করলো মেধাবী ফারিয়া!

প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ব্যবহারিক পরীক্ষায় ফেল করানো হয়েছে বলে অভিযোগ ফারিয়ার পরিবারের। মেধাবী ছাত্রী হিসেবে ফারিয়া এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর হাসতে চেয়েছিল। পরিবারের সবাইকে আনন্দে ভাসাতে চেয়েছিল। কিন্তু একজন শিক্ষকের কুদৃষ্টির কারণে ফারিয়ার সব আনন্দ ধুলোয় মিশে গেছে। সব বিষয়ে খুবই ভালো পরীক্ষা দেয়া সত্বেও ফারিয়াকে ব্যবহারিক পরীক্ষায় কম নম্বর দিয়ে ফিজিক্সে ফেল করানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পরীক্ষার ফলাফল বের হবার পর থেকে ওই পরিবারের আনন্দ একেবারে ম্লান হয়ে গেছে। পরিবারের সকলের সময় কেটেছে চরম হতাশায়। মেয়ের হতাশ চেহারায় উৎকণ্ঠিত বাবা স্কুলের প্রধান শিক্ষক, জেলা প্রশাসক, সাংবাদিকসহ সব মহলে ছুটে বেড়াচ্ছেন প্রতিকারের আশায়।

ফারিয়া ইসলাম, নড়াইল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। তার রোল নং ১১২৪২৮ এবং রেজিঃ নং ১২৯৩৬৫৪৪৮০। নড়াইল শহরের কুড়িগ্রামের জহুরুল ইসলামের মেয়ে ফারিয়া ইসলাম ৫ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। এরপর ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রত্যেক শ্রেণিতে কখনো প্রথম আবার কখনো ২য় স্থান লাভ করতো। এমনকি স্কুলের এসএসসি টেস্ট পরীক্ষায় যে ৩ জন ছাত্রী গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে ফারিয়া তাদের একজন।

ফারিয়ার পরিবারের অভিযোগ, ৮ম শ্রেণিতে পড়ার সময় শিক্ষক ফসিয়ার রহমান তাকে নানাভাবে উত্যক্ত করতেন। সে সময় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফারিয়ার পরিবার শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরিচালক এবং বোর্ড কন্ট্রোলারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ হওয়ায় সে বছর তাকে মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়। এর কিছুদিন পরে তিনি আবার নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন ।

নড়াইল সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানান, প্রাকটিক্যাল পরীক্ষায় স্কুল থেকে পূর্ণ ২৫ মার্ক করে দেয়া সত্বেও কম্পিউটার শিটে ফারিয়াকে ১৫ করে মার্ক দেখিয়েছে অভিযুক্ত ফসিয়ার রহমান। এছাড়া তিনি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে কেন্দ্র নিয়ন্ত্রকের কমিটিতে থাকার সুবাদে ফারিয়ার পদার্থ বিজ্ঞান খাতায় কারচুপি করে থাকতে পারেন। না হলে এত ভালো একজন ছাত্রীর এরকম ফলাফল হতে পারে না। বিষয়টি সঠিক তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে। ওই শিক্ষক পরীক্ষা চলাকালীন ফসিয়ার রহমানের ফারিয়ার প্রতি নজর দেবার জন্য তাকে অনুরোধের কথা স্বীকার করেন।

সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিমোহন বিশ্বাস জানান, বিষয়টি আমাদের কানে এসেছে। তাকে প্রত্যেক ব্যবহারিক পরীক্ষয় ১৫ নম্বর দেয়া হয়েছে। এত ভালো ছাত্রীর এরকম ফলাফল হতাশাজনক । আমরা ৩১ মে দুপুরে স্কুলের সকল শিক্ষক এ ঘটনার জন্য সভা করেছি। ১ জুন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং উপযুক্ত বিচারের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হবে।

নড়াইলের জেলা প্রশাসক আ. গাফফার খান জানান, মেয়েটি এবং তার পরিবারের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি নড়াইল সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে আমি বোর্ড কন্ট্রোলারের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রকৃত মার্ক এবং যে মার্ক পাঠানো হয়েছে তা যাচাই করে দেখা হবে। মেধাবী এই মেয়েটি যেন বিনা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় আমরা সকলকে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে বলেছি।

অভিযুক্ত শিক্ষক ফসিয়ার রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ফারিয়ার ফলাফলে কোনো কম্পিউটার সম্পর্কিত জটিলতা থাকতে পারে।

ফারিয়ার সহপাঠি পুজা বিশ্বাস জানায়, ফারিয়া স্কুলের একজন কৃতি শিক্ষার্থী, ফসিয়ার স্যারের এই ঘৃণ্য মনোভাবের জন্য তার এই ফলাফল অত্যন্ত দুঃখজনক।

ফারিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি লিখিত আকারে অভিযোগ দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসক, শিক্ষা বোর্ড, প্রেসক্লাবসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগে।



মন্তব্য চালু নেই