প্রেমে পড়লে কী হয়, কেন হয়?

রেমে পড়লে প্রথম ধাক্কাটাতো শরীরের ওপর দিয়েই আসে। যারা প্রেমে পড়েছেন বা প্রেম করেছেন তারা হয়তো প্রথম বাক্যেই বিষয়টি আন্দাজ করতে পারছেন। আসলে প্রেমে পড়লে প্রিয়জনকে দেখামাত্রই হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, হাত ঘামতে থাকে, পেটের ভেতর চলতে থাকে শিরশির অনুভূতি। অনেকে আবার প্রথমদিকে প্রিয়জনের মুখোমুখি হলে কিছুটা তোতলাতেও শুরু করেন। তবে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, প্রেমে পড়লে দেহে কয়েক ধরণের হরমোন কাজ করতে শুরু করে। এর প্রতিক্রিয়ায়ই মানুষ এমনটা করে থাকে।

প্রেমে পড়লে দেহ-মনে যেসব প্রতিক্রিয়া হয় তার জন্য প্রথমত: দায়ী টেস্টটসটরেন নামের এক হরমোন। বিপরীত লিঙ্গের কারো প্রতি আকৃষ্ট হলে এই হরমোন বাড়তে শুরু করে৷ এর বদৌলতে প্রেমের প্রাথমিক ধাপে হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, হাত কাঁপার মতো উপসর্গগুলো৷ দেখা যায়। প্রেমে পড়া মানুষের দেহে অন্যদের তুলনায় এই হরমোনটা অনেক বেশিই থাকে!

এখন অবশ্য ‘নাই টেলিফোন, নাইরে পিয়ন, নাইরে টেলিগ্রাম, বন্ধুর কাছে মনের খবর ক্যামনে পৌছাতামের’ যুগ নেই। তবে প্রিয়জনের জন্য মনের ভেতরের অস্থিরতা আগের মতোই আছে। টেনশনে খাওয়া-দাওয়া কমে যায়, বুক ধড়ফড় করে, হাত ঘামায় । শরীরও তখন দ্রুত ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে। কী হবে , কী হবে ভাবতে ভাবতে রাতের ঘুম হারাম হয়ে চোখের নিচে কালি পড়ে যায়। এর জন্য দায়ী অবশ্য অ্যাড্রেনেলিন নামের একটি হরমোন। দেহে এটি বেড়ে গেলে এসব লক্ষণ দেখা যায়। আর প্রেমে পড়লে এটা তো বাড়বেই!

প্রেমের এক পর্যায়ে নিজের প্রিয় মানুষটি ছাড়া অন্যকোনো কিছুই ভাবতে ভালো লাগে না। অনেক সময় প্রেমিক-প্রেমিকাদের নিজেদের আবেগ সংবরন রাখাটাই কষ্টকর হয়ে পড়ে। নিজের প্রিয়জনের একটু দুখঃ বা কষ্টের সংবাদ চোখে অশ্রুর ঢল নামে। এর জন্য দায়ী সেরোটোনিন নামে এক ধরণের হরমোন। এই হরমোন আমাদের মনের আনন্দ আর আবেগকে স্থির রাখে। প্রেমে পড়লে দেহে সেরোটোনিন কমে যায় বলেই আবেগ ধরে রাখা মুশকিল হয়ে পড়ে।

প্রেমে পড়ার তিন-চার মাস পর সম্পর্কে একটা স্থিতি আসতে শুরু করে। তখন শুরু হয় আরেক হরমোন অকসিটোসিনের কাজ৷ এই হরমোনের কারণে দু-জনের সম্পর্কটা আরো ঘনিষ্ঠ হয়৷ প্রেমিক-প্রেমিকা যখন ঘনিষ্ঠ হয় তখন দুজনের দেহে অকসিটোসিন তৈরি হয়। এর ফলে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের পথে এগিয়ে যায় প্রেমিক যুগল।

প্রেমের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজ করে ডোপামিন নামের আরেক প্রকার হরমোন। এর আরেক নাম ‘সুখের হরমোন’৷ শুধু প্রেমে পড়লেই যে এই হরমোন ক্রিয়াশীল হয় তা কিন্তু নয়, কোকেন বা সিগারেটের নেশা করলেও ডোপামিন উজ্জীবিত হয়। এ কারণেই অনেকে বলেন, প্রেমে পড়া আর নেশা করা একই। তাইতো তারাশঙ্কর বলেছেন- কিবা হরি কিবা ডোম/যেথায় যবে মজে মন।

সূত্র : ডয়েচে ভ্যালে



মন্তব্য চালু নেই