প্রেম রতন : পূর্ণাঙ্গ পারিবারিক বিনোদন

অভিনয় শিল্পী এবং পরিচালকের মধ্যে জুটি যদি ভালো কাজ করে তাহলে পরিচালকরা সব সময়ই চেষ্টা করেন নতুন আরও একটি সিনেমা তৈরির। তেমননি একটি জুটি সুরাজ বার্জাতিয়া এবং সালমান খান। প্রায় তিন দশক আগে শুরু হয়েছিল এ জুটির। ১৯৮৯ সালে ম্যায়নে পেয়ার কিয়া দিয়ে। এরপর হাম আপকে হ্যায় কৌন এবং সবশেষ ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হাম সাথ সাথ হ্যায় সিনেমার মাধ্যমে সম্পর্কটি আরও পাকা হয়। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছরের বিরতি। তবে আবারও ফিরেছেন সালমান-সুরাজ জুটি। গত ১২ নভেম্বর মুক্তি পেয়েছে সুরাজ বার্জাতিয়া পরিচালিত এবং সালমান-সোনম অভিনীত সিনেমা প্রেম রতন ধন পায়ো। এই সিনেমাটির পর্যলোচনা নিয়েই আমাদের আজকের এ রচনা।
রাজশ্রীর ব্যানারে নির্মিত হয়েছে প্রেম রতন ধন পায়ো সিনেমাটি। প্রযোজনা সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেছেন সুরাজ বার্জাতিয়ার পিতামহ মৃত তারাচাঁদ বার্জাতিয়া। এ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ সিনেমাই পারিবারিক গল্প কেন্দ্রিক। পূর্ব পুরুষের প্রথা না ভেঙে সেই পথে হেঁটেছেন সুরাজ বর্জাতিয়াও। তার আগের সিনেমাগুলোর সবগুলোই পারিবারিক ঘরানার। প্রেম রতন ধন পায়ো সিনেমাটিও তার ব্যতিক্রম নয়।
প্রেম রতন ধন পায়ো সিনেমাটি রাজশ্রী এবং সুরাজের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সিনেমা। সিনেমাটিতে দর্শকদের জন্য তিন ঘণ্টার এক ফুল প্যাকেজ তৈরি করেছেন সুরাজ। বিনোদন, রোমন্স, ভুল বোঝাবুঝি, অ্যাকশন, ইমোশন সব কিছুই রয়েছে সিনেমাটিতে। এমনকি সিনেমাটিতে গল্প বলার ধরণটাও অসাধারণ।
সিনেমাটি দেখার আগে যারা সুরাজ বার্জাতিয়ার আগের সিনেমাগুলো দেখেছেন তাদের মনে কিছু প্রশ্ন জাগতে পারে। আর তা হলো, সিনামাটি কী আগের সিনেমাগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে নাকি প্রেম রতন ধন পায়োর গল্প একবারে নতুন হবে। সুরাজ কী সালমানকে নিয়ে আবার সফল হবে? কেমন জনপ্রিয়তা পাবে সিনেমাটি? প্রেম রতন কী নতুন রেকর্ড গড়তে পারবে?
অনেকেই হয়তো বলবেন বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরিবার কেন্দ্রিক সিনেমা তৈরি কতটুকু যুক্তিসঙ্গত। যারা প্রাশ্চাত্যের সিনেমা দেখে অভ্যস্ত তাদের কাছে বিষয়টি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গল্প যদি ভালো হয় এবং সিনেমার উপস্থাপনা যদি আপনার মন মতো হয়, সিনেমা যদি আপনাকে গল্পের মধ্যে প্রবেশ করাতে সক্ষম হয় সে ক্ষেত্রে উপরের যুক্তিটি মোটেও প্রযোজ্য নয়। প্রেম রতন ধন পায়ো তেমনই একটি সিনেমা। দর্শক প্রিয়তার পাশাপাশি বক্স অফিস সাফল্য তারই প্রমাণ।
এবার আসা যাক সিনেমার গল্পে। সিনেমার গল্পে দেখা যায় প্রিন্স বিজয় (সালমান খান) তার সিংহাসনে অভিষেকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু তার ছোট ভাই (নীল নতিন মুকেশ) তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। কারণ তার চোখ সিংহাসনের দিকে। অন্যদিকে যুবরাজের মতোই দেখতে প্রেম (সালমান খান) রাজকুমারী মৈথিলির প্রেম পাগল। সে এসে হাজির হয় সে স্থানে। কিন্তু এরপর কী?
কাহিনি কী আপনার মনে ধরেছে? যাহোক এখানে একটি কথা রয়েছে তা হলো অনকের ধারণা সিমোটির কাহিনি নেওয়া হয়েছে এল.ভি প্রসাদের এবং সঞ্জিব কুমার অভিনীত ১৯৬৯ সালের সিনেমা রাজা অউর রাঙ্ক থেকে। সেই সিনেমাটিও তৈরি হয়েছিল মার্ক টুইনের উপন্যাস ‘প্রিন্স অ্যান্ড দ্য পাউপার’ অবলম্বনে। আবার অ্যান্থনি হোপসের উপন্যাস ‘দ্য প্রিজনার অব জেন্ডা’র সঙ্গেও মিল রয়েছে প্রেম রতন ধন পায়ো সিনেমার কাহিনি। কিন্তু সিনেমার চিত্রনাট্য, গল্প উপস্থাপনা এবং টুইস্ট এটিকে সব কিছুর চেয়ে আলাদা করেছে।
সিনেমার গল্পে একটির সঙ্গে আরেকটির সিক্যুয়েন্স খুব ভালোভাবেই করেছেন সুরাজ। তার অন্যান্য সিনেমার মতো এ সিনেমাতেও রয়েছে পারবারিক কোন্দল এবং ভুল বোঝাবুঝি। সঙ্গে পরিবারের সদ্যেদের মধ্যে বন্ধন এবং মনোস্তাত্ত্বিক দ্বন্ধ। এবার তার সিনেমায় যুক্ত হয়েছে ঝলমলে পোশাক আর আলোকসজ্জা। কাহনির সঙ্গে সব যেন মিলে গেছে।
সিনেমার দুর্বল দিক বলতে গেলে, প্রয়োজনের তুলনায় গান একটু বেশিই মনে হয়েছে। এছাড়া সিনেমাটি একটু বেশিই দীর্ঘ মনে হয়েছে।
তবে সিনেমায় বেশ কিছু গান রয়েছে যা আপনার কাছে ভালো লাগবে। জ্বলতে দিয়ে, আজ উনসে মিলনা হ্যায় এবং প্রেম লীলা এর মধ্যে অন্যতম। সবশেষে সিনেমাটির টাইটেল ট্র্যাক সিনেমাটিকে আরও পূর্ণতা দান করেছে।
সিনেমাটির প্রতিটি দৃশ্যধারণই অসাধারণ হয়েছে। ক্যামেরাম্যান এ ক্ষেত্রে তার বিশেষ দক্ষতা দেখিয়েছেন। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সঠিকবাবেই ব্যবহার করা হয়েছে। শেষ দৃশ্যে অ্যাকশনও খুবই কম। এছাড়া সিনেমার সংলাপও খুব সাজানো। কিছু কিছু সংলাপ আছে যা আপনার মনে গেঁথে থাকবে।
সুরাজ বার্জাতিয়ার সিনেমায় চরিত্রগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রেম রতন ধন পায়োর ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম নয়। সিনেমা শুরুতে আপনি আর সালমানকে দেখবেন না । এরপর থেকে আপনি শুধু প্রেমকে দেখবেন। সিনেমায় এই চরিত্রটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সিনেমায় সালমান দুইটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এর একটি প্রেম চরিত্র। যেটি কিনা একদম সহজ সরল চরিত্র। অন্যটি যুবরাজ বিজয়। প্রেম যেমন সরল বিজয় ঠিক তার বিপরীত এবং দৃঢ় একটি চরিত্র। দুইটি চরিত্রকেই সালমান উপস্থাপন করেছেন অসাধারণভাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি সম্পূর্ণই সালমান নির্ভর সিনেমা। কিন্তু অন্যান্যরাও নিজ নিজ চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন।
সোনম কাপুর তার মধ্যে একজন। সিনেমায় তার গ্ল্যামার অসাধারণ। তার ভূমিকাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সালমানের সঙ্গে সোনমের জুটি নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু রুপালি পর্দায় এ জুটিকে দেখলে সে ধারণা হয়তো বদলেও যেতে পারে।
এ ছাড়া অনুপম খের তার চরিত্রে অসাধারণ। খল চরিত্রে নীল নীতিনও অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা দেখিয়েছেন। আরমান কোহলিও অনেক দিন পর অভিনয়ে ফিরেছেন। আর ফিরেই নিজের কাজটি ঠিক মতোই করেছেন তিনি। স্বারা ভাস্করও বেশ সাবলীল।
বলা যায়, প্রেম রতন ধন পায়ো দর্শকদের জন্য সালমানের দীপাবলির উপহার। প্রেম চরিত্রে অভিনয় করে ভক্তদের কাছ থেকে ভালোবাসা অর্জন করছেন সালমান। পাশাপাশি নির্মাতারাও বেশ কিছু পয়সা পকেটে নিতে পারছেন। সব শেষে বলা যায়, প্রেম রতন ধন পায়ো সম্পূর্ণ বিনোদনে ভরপুর পারিবারিক সিনেমা।



মন্তব্য চালু নেই