ফখরুলের কিছু হলে দায় সরকারের : বিএনপি

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন জানিয়ে তার দল বিএনপি বলেছে, এই পরিস্থিতিতে তার স্বাস্থ্য আরো সংকটাপন্ন হয়ে পড়লে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্য সরকারকে দেশবাসী দায়ী করবে।

নাশকতার তিন মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলের জামিন না মঞ্জুর করে আদালতের পাঠানোর প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন দলের মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন।

তিনি বলেন, ‘সরকারকে বারবার স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, মির্জা ফখরুল জটিল রোগে আক্রান্ত একজন মানুষ। কারান্তরীণ অবস্থায় তার স্বাস্থ্যঝুঁকি আরো বেড়ে যাবে বলে তার চিকিৎকরা অভিমত দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে তার স্বাস্থ্য আরো সংকটাপন্ন হয়ে পড়লে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্য সরকারকে দেশবাসী দায়ী করবে।’

নাশকতার তিন মামলায় মঙ্গলবার আদালতে আত্মসমর্পণের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে আহ্বান করা হয়।

রিপন বলেন, ‘মির্জা ফখরুল অনেক দিন ধরেই অসুস্থ। তাঁর হৃদরোগসহ ঘাড়ে ক্যারোটিড আর্টারিতে ব্লক রয়েছে। এ বছর প্রায় ছয় মাস কারাভোগের পর উচ্চ আদালত তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামিন প্রদান করায় তিনি যুক্তরাষ্ট্র এবং সিঙ্গাপুরে কয়েক দফা চিকিৎসা নেন। কিন্তু তার ক্যারোটিড আর্টারিতে ব্লকের অবস্থান খুবই জটিল হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় তার অস্ত্রোপচার সম্ভব হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘ক’দিন আগেও তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য ফলোআপে যান এবং এ মাসের ২৪ তারিখে সিঙ্গাপুরে তার আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য যাওয়ার তারিখ ছিলো। উচ্চ আদালতের নির্দেশে একজন আইন মান্যকারী নাগরিক হিসেবে তিনি নি¤œ আদালতে জামিন প্রার্থনা করেছিলেন। কিন্তু আদালত তার আবেদন নাকচ করে এই অসুস্থ মানুষটিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশে আমরা তার স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে বিচলিত হয়ে পড়েছি।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, নিম্নআদালত তার স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি মানবিকভাবে বিবেচনা করে তাঁকে জামিন প্রদান করবেন যাতে তিনি তার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারেন।’

মির্জা আলমগীরের স্বাস্থ্যের অবস্থা অনেকদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন স্বজ্জন-পরিশীলিত ও স্বচ্ছ ইমেজের মানুষ হিসেবে তার একটি উজ্জল ভাবমূর্তি দল-মত নির্বিশেষে মানুষের মধ্যে রয়েছে বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন। এমন একজন আদর্শবান রাজনীতিক অসংখ্য মিথ্যা-হয়রানীমূলক মামলায় জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। তার মতো আমাদের দলের বেশ কয়েকজন প্রবীণ-বয়োবৃদ্ধ জননেতাও অনুরূপভাবে মিথ্যা মামলায় জর্জরিত এবং অনেকেই অন্তরীণ কারাগারে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার ছায়ার সাথে শত্রু শত্রু খেলায় লিপ্ত। বিরোধী দল, বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দকে অকারনেই তারা শত্রু ভাবছেন। অথচ বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ ও বিরোধী দল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। সেই প্রতিষ্ঠানটিকেই সরকার ধ্বংস করার এক আত্মঘাতী কাজে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছেন দুর্ভাগ্যজনকভাবে।’

রিপন বলেন, ‘সরকার বিরোধী দলের সঙ্গে রাজনীতি করবেন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায়। কিন্তু কাউকে তিলে তিলে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হবে অত্যন্ত অমানবিক।’ এই পন্থা থেকে সরে আসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এবং একই সঙ্গে আদালতে মানবিকভাবে বিষয়টি বিবেচনা নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ কারারুদ্ধ সকল নেতাকর্মীর মুক্তিও দাবি করেন রিপন।

প্রসঙ্গত, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপির আন্দোলনের মধ্যে গত ৬ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের পর গ্রেফতর হন ফখরুল। এরপর নাশকতার সাত মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

এর মধ্যে পল্টন থানায় গাড়ি পোড়ানো, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের মামলায় গত ১৬ এপ্রিল হাই কোর্ট থেকে ছয় মাসের জামিন পান মির্জা ফখরুল।

এরপর পল্টন থানার দুটি এবং মতিঝিল থানার এক মামলায় ১৮ জুন পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত তাকে জামিন দেয় হাই কোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে গেলে সেখানেও ফখরুলের জামিন বহাল থাকে। আর পল্টন থানার ওই তিন মামলায় গত ২১ জুন হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ফখরুলের জামিন মঞ্জুর করে।

রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেলে আদালত পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড করে ফখরুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন আদালতে দেওয়ার পর ১৩ জুলাই তিন মামলায় জামিন পান মির্জা ফখরুল।

এর পর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর এবং যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি। দেশে ফিরে আবারো দ্বিতীয় দফায় সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে সম্প্রতি দেশে ফেরেন বিএনপির এই নেতা।



মন্তব্য চালু নেই