ফখরুল ছাড়া পাচ্ছেন ঈদের আগেই?

সাড়ে ৫ মাস কারাগারে বন্দী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঈদের আগেই কারাগার থেকে মুক্তি পেতে পারেন। রোববার নাশকতার তিন মামলায় তার জামিন শুনানি রয়েছে। এ দিন হাইকোর্ট যদি ফখরুলের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন তবে ঈদের আগেই তিনি মুক্তি পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সগীর হোসেন লিওন। অবশ্য এক্ষেত্রে একটি শর্তও জুড়ে দিয়েছেন লিওন। তা হলো- ফখরুলের বিরুদ্ধে যদি নতুন করে আর কোনো মামলা দায়ের না করা হয়।

বর্তমান আওয়ামী সরকার প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে মোট ৭৯টি মামলা দায়ের করা হয়। এরমধ্যে গেল বছরের শেষের দিকে ও চলতি বছরে দায়ের করা হয় মোট ৭টি মামলা; যার চারটিতে তিনি ইতোমধ্যে হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য মামলাগুলোতেও বিভিন্ন সময়ে জামিন পেয়েছেন তিনি। ২০১১ সালে তৎকালীন আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগে একটি মামলা করেছিলেন। সম্প্রতি ওই মামলাতেও খালাস পেয়েছেন ফখরুল।

ফখরুলের মামলা পরিচালনাকারী সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘প্রায় সবগুলো মামলাই বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা। এছাড়াও নাশকতা, গাড়ি পোড়ানো বা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে এ মামলাগুলোতে।’

সগীর হোসেন লিওন বলেন, ‘রোববার নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা তিন মামলায় হাইকোর্টে ফখরুলের জামিন আবেদনের শুনানির দিন ধার্য আছে। এই তিন মামলায় ফখরুল সাহেব জামিন পেলে এবং সরকার নতুন করে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা না দিলে তিনি কারাগার থেকে বের হতে পারবেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ মামলাগুলোতে দখিল করা জামিন আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা ছিল গত রোববার। কিন্তু সরকার পক্ষের আইনজীবীর সময় আবেদনের কারণে ওইদিন শুনানি হয়েছিল না।’

ফখরুলের বিরুদ্ধে দায়ের করা সর্বশেষ ৭টি মামলাতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে- নাশকতার পরিকল্পনা, উসকানি ও প্ররোচণার।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরপূর্তিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে গত ৬ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে আটক হন মির্জা ফখরুল। এরপর গাড়ি ভাঙচুর, পোড়ানো ও নাশকতার অভিযোগে রাজধানীর পল্টন ও মতিঝিল থানায় দায়ের করা সাতটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। এইচএসসি পরীক্ষা ও সিটি নির্বাচনের হাওয়ায় বিএনপি অবরোধ-হরতাল থেকে সরে এলে কমে আসে রাজনৈতিক উত্তাপ। সরকার পতনের আন্দোলনে নেমে ব্যর্থ হয়ে এখন দল পুনর্গঠনে মনোযোগী হয়েছে দলটি। কারাগার থেকে মুক্তি পেলে মির্জা ফখরুল বিএনপির পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হচ্ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। ২০১১ সালের ১৬ মার্চ খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর থেকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে রয়েছেন ফখরুল।

ফখরুলের আইনজীবী ও তার পরিবারের সদস্যরা বলছেন, মির্জা ফখরুল ইসলামের হৃদযন্ত্রে চারটি ব্লক রয়েছে, এর তিনটিতে রিং বসানো হয়েছে। অর্থাৎ ৮০ ভাগ ব্লক হয়ে গেছে তার। এখন তার গলার ধমনিতে (নার্ভ) প্রতিবন্ধকতা ধরা পড়েছে।

হাইকোর্টের নির্দেশে গত শনিবার থেকে মির্জা ফখরুল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন। জানা গেছে, কারাগারে থাকা অবস্থায় গত সাড়ে পাঁচ মাসে মির্জা ফখরুলের ওজন প্রায় ১৫ কেজি কমেছে। গলার ধমনিতে প্রতিবন্ধকতার কারণে রক্ত সঞ্চালন কম হচ্ছে। এ অবস্থায় মির্জা ফখরুলকে বিদেশে নিয়ে তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তার আইনজীবী ও পরিবার।



মন্তব্য চালু নেই