ফরিদপুরে শত বছরের শ্মশানের জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ

ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার গাজনা বাজার সংলগ্ন শ্মশানটির জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরোজমিনে গিয়ে জানা যায়, গাজনা মৌজার আর এস খতিয়ান নং ১২৫৩, এসএ খতিয়ান নং ১১৩০, বিএস খতিয়ান-২১৮১, ডিপি-১১, জমির পরিমান ১০ শতাংশ।

তিনটি খতিয়ানেই উল্লেখ রয়েছে হিন্দু সাধারণের ব্যবহারের জন্য এবং গাজনা বাজার কমিটির পক্ষে সেক্রেটারী, গাজনা বাজার কমিটি শ্মশানটি পরিচালনা করে থাকে। সাম্প্রতিক শ্মশানটির আধুকায়ন ও গরীব হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা মারা গেলে যাদের শ্মশানের খরচ নেই তাদের খরচ বহন করবে শ্মশান পরিচালনা কমিটি। ফান্ডের প্রয়োজনে শ্মশানের সামনের অংশে পরিচালনা কমিটি একটি মার্কেট উত্তোলন করে।

মার্কেটটি উত্তোলনের শেষ পর্যায়ে। হঠাৎ করে একই ব্যক্তির দান করা গাজনা পূর্ণচন্দ্র দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি মার্কেট উত্তোলনে বাঁধা প্রদান করেন এবং আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় উল্লেখ করে যে, ১৯৮৭ সালে শ্মশানের জমিদানকারী ব্যক্তি বিনয় সরকার স্কুল কর্তৃপক্ষকে শ্মশানের জমিটুকু দান করে গিয়েছে।

এ বিষয়ে গাজনা এলাকার বাসিন্দা নগেন্দ্র নাথ প্রামানিক জানান, আমার বয়স বর্তমানে ৮৫ বছর। এই ৮৫ বছরের মধ্যে কোনো দিন শুনি নাই বিনয় সরকার শ্মশানের জমিটুকু ১৯৮৭ সালে স্কুল প্রতিষ্ঠানের নামে দান করে দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, বিনয় সরকার ১৯৬২ সালে তার সমস্ত সম্পত্তি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দান করে ভারতে চলে যান।

যদি ১৯৮৭ সালে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসত তাহলে আমরা জানতাম এবং তিনি তার এই প্রতিষ্ঠানগুলি দেখার জন্য পরবর্তীতে দেশে আসতেন এবং এলাকার লোকজনদের সাথে পরিচিত হতেন। বাসিন্দা সুনিল কুমার সরকার (৭৫) জানান, তিনি শুনেছেন বিনয় সরকার এই শ্মশানের জমিটি হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবহারের জন্য দান করে দিয়েছেন।

পরবর্তীতে বিনয় সরকার আর কখনই বাংলাদেশে আসেন নাই। তাহলে স্কুল কর্তৃপক্ষ কিভাবে দাবী করেন যে, বিনয় সরকার তাদেরকে ১৯৮৭ সালে জমি দান করেছেন ? ২৭ বছর পর কেন স্কুল কর্তৃপক্ষ এই দাবী করছে?

বাজার কমিটি সেক্রেটারী গোপাল চন্দ্র জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রতারণার মাধ্যমে শ্মশানের জমিটি দখল করার পায়তারা চালাচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্কুল কমিটি সাবেক দুই সদস্য জানান, আমরা স্কুল পরিচালনা কমিটিতে থাকা অবস্থায় জানতে পারিনি যে, স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিনয় সরকার শ্মশানের জমিটুকু দান করে গিয়েছিলেন এবং এ বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের সাথে আলাপ আলোচনাও করে নাই।

এ বিষয়ে গাজনা পূর্ণচন্দ্র দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওহাব মোল্লা জানান, আমি এক বছর ধরে এই স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছি। এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারবো না। তবে আমি যোগদান করার পর দানপত্র দলিলপত্রটি পেয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটিকে বলেছি। ব্যবস্থাপনা কমিটি আমাকে মামলা করার অনুমতি দিয়েছে।

এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য কুদ্দুস শেখ জানান, ২৭ বছরে কয়েকজন প্রধান শিক্ষক পরিবর্তন হয়েছে। কোনো প্রধান শিক্ষকই এই জমির বিষয়ে আমাদের অবগত করেন নাই।

জমি দান দলিলের শনাক্তকারি সুধির কুমার বিশ্বাস জানান, এই দলিলে আমি কোনো শনাক্তকারি হিসেবে স্বাক্ষর করি নাই এবং জমি দলিলের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

সম্প্রতি শ্মশান রক্ষার্থে শ্মশানের মার্কেটের সামনে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী।



মন্তব্য চালু নেই