ফসকে যাওয়া ক্যাচ বদলে দিল ম্যাচ

টি-টোয়েন্টি অনেকটা গিরগিটির মতো। কখনো কখনো এমনই চোখের পলকে রং বদলে ফেলে যে, তা ভোজবাজির মতো লাগে। রং বদলানোর সেই মুহূর্তটা অনেক সময় সুনির্দিষ্টভাবে ধরাও যায় না।

কাল মিরপুরে একদমই সেই সমস্যায় পড়তে হলো না। খ্রিষ্টপূর্ব আর খ্রিষ্ট-পরবর্তী সময়ের মতো এই ম্যাচেও পরিষ্কার দুটি ভাগ। ভারতীয় ইনিংস না বলে ম্যাচ বলাটা ভুল হলো। আবার ভুলও নয়। এখানে যেটিকে ‘খ্রিষ্ট-পরবর্তী’ সময় বলা হচ্ছে, ভারতীয় ইনিংসের সেই শেষ ৯.৩ ওভারই তো আসলে ম্যাচের শেষ কথাটি লিখে দিল।

বলের হিসাবে ৫৭ বল। ওই ৫৭ বলে ভারত তুলে ফেলল ১১৪ রান। স্ট্রাইক রেট ঠিক ২০০! তা টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তো এমন হয়ই। তবে এখানে ব্যাপারটা আলাদা। এমন রানবন্যা বয়ে যাওয়ায় যে বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ অবদান। একাদশ ওভারের তৃতীয় বলে পয়েন্টে সাকিব আল হাসান যখন ক্যাচটি (পড়ুন ‘ম্যাচটি’) ফেলে দিলেন, রোহিত শর্মা তখন ২১ রানে। ২৮ বলে ২১, একটি মাত্র চার। অন্য প্রান্তে দ্রুত ৩টি উইকেট পড়ে যাওয়ায় রীতিমতো খোলসে বন্দী।

নতুন জীবন পেয়েই বোধ হয় রোহিত বুঝে ফেললেন, এই রাত তাঁকে যা ইচ্ছে তাই করার স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছে। তাসকিনের পরের তিনটি বলেই তাই চার-ছয়-চার! এশিয়া কাপে আসার আগেই মহেন্দ্র সিং ধোনি বলে এসেছেন, তাঁর দল টি-টোয়েন্টিতে অটো-পাইলটে চলে। টি-টোয়েন্টি খেলাটা যে সবার মুখস্থ। টি-টোয়েন্টির সেই কোচিং সেন্টারের নাম আইপিএল। যুবরাজ সিংয়ের বিদায়ের পর উইকেটে নতুন সঙ্গী হার্দিক পান্ডিয়াকে দেখে রোহিতেরও বোধ হয় মনে হলো, এটি আইপিএলেরই আরেকটি ম্যাচ! পান্ডিয়া যে তাঁর মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের টিমমেট।

দুজন মিলে পঞ্চম উইকেটে মাত্র ৪.৩ ওভারে ৬১ রান তুলে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে বের করে দিলেন। নতুন জীবনে মাত্র ২৭ বলে রোহিতের ৬২ রান। ডিপে দৌড়ে গিয়ে সামনে ডাইভ দিয়ে নেওয়া সৌম্য সরকারের অসাধারণ এক ক্যাচে যখন ফিরে যাচ্ছেন, ততক্ষণে সেই আউট শুধুই তাঁর ব্যক্তিগত দুঃখ। ভারত চলে গেছে বাংলাদেশের ধরাছোঁয়ার বাইরে। পিঠের ব্যথার কারণে এই ম্যাচে অনিশ্চিত হয়ে পড়া ধোনির শেষ বলে পুল করে ছক্কায় যেন সেটিরই উদ্যাপন।

‘এম’ দিয়ে মিরপুর। ‘এম’ দিয়ে মেলবোর্ন। মিরপুরের সঙ্গে মেলবোর্ন মেলানোটা বোধ হয় ব্যাখ্যা না করলেও চলছে। মেলবোর্নে আম্পায়ারের ডাকা বিতর্কিত নো বলে বেঁচে গিয়েছিলেন রোহিত শর্মা। ততক্ষণে অবশ্য ৯০ রান করে ফেলেছিলেন। সেই তুলনায় মিরপুরে সাকিবের ক্যাচ ফেলাটা অনেক বেশি তাৎপর্যবাহী। রোহিত তখন ফিরে গেলে কে জানে, ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জয়রথ হয়তো টি-টোয়েন্টিতেও ছুটত।

শুধু মেলবোর্ন আর মিরপুর কেন, ‘এম’ দিয়ে তো মুস্তাফিজও! মাস দশেক আগে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে জয়রথের সারথি ছিলেন বাঁহাতি জাদুকর। এই ম্যাচের আগেও আলোচনাজুড়ে তাই শুধুই তিনি। কোথায় সেই মুস্তাফিজ! কাঁধের চোটই কারণ হোক বা ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের তাঁর রহস্য ভেদ করে ফেলা, মুস্তাফিজ কাল নিজের ছায়া হয়ে রইলেন। ৪ ওভারে ৪০ রান দিয়ে ম্যাচের সবচেয়ে খরুচে বোলার।

৪০ রান আরেকজনও দিয়েছেন এবং কী আশ্চর্য, তাঁর নামের শুরুতেও ‘এম’! তবে মাশরাফির অন্তত একটি উইকেট নেওয়ার সান্ত্বনা আছে। মাশরাফি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ‘জয়’টি ম্যাচের আগে পেয়ে গিয়েছিলেন বলে মনে হচ্ছিল অনেকটা সময়। সেটি টস জয়। আগের রাতে বৃষ্টি, সারা দিন থেমে থেমে আরও দু-তিনবার। সঙ্গে মিরপুরের উইকেটে সবুজ ঘাস। প্রথম ১০.৩ ওভার শেষে মাশরাফির টস জয় আর ম্যাচ জয়কে প্রায় সমার্থক মনে হওয়াটা একেবারেই অস্বাভাবিক কিছু ছিল না।

টস জয়ের মতো আয়োজক হওয়াটাকেও তখন মনে হচ্ছিল আশীর্বাদ। মিরপুরে অদৃষ্টপূর্ব ঘাসে ঢাকা উইকেট দেখে আপনার যদি কদিন আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সবুজ উইকেটে ভারতের বিখ্যাত ব্যাটিং লাইনআপের কাঁপাকাঁপির কথা মনে পড়ে গিয়ে থাকে, জানবেন এটি কাকতালীয়ভাবে মিলে যাওয়া নয়।

কালও ভারতের ইনিংসের শুরুতে তো কাঁপাকাঁপিই। সমস্যা হলো, বাংলাদেশের পুরো ইনিংসজুড়েই তাই। ৪২ রানে পড়েছিল ভারতের প্রথম ৩ উইকেট, বাংলাদেশের ৩ উইকেট পড়ল ৫০ রানে। কিন্তু বাংলাদেশের কেউ যে ‘রোহিত শর্মা’ হতে পারলেন না। ৩২ বলে ৪৪ করেই অনায়াসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরার সাব্বির রহমান অবশ্য বলতেই পারেন, ওদের কেউ যে ‘সাকিব’-ও হয়নি! #প্র/আ



মন্তব্য চালু নেই