ফাঁসছেন আরও বিএনপি নেতা, শিগগিরই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা

ইসরায়েলি এক নেতার সঙ্গে বৈঠক এবং দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সহায়তায় আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করছেন রিমান্ডে থাকা বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী। লিকুদ পার্টির নেতা মেনদি এন সাফাদি ও মোসাদ-এর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করছেন।

তবে কিছু তথ্য-প্রমাণের ব্যাপারে আসলামকে ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইসলায়েলের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্র খোঁজার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।

মঙ্গলবার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য জানান।

ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, আসলাম অস্বীকার করলেও যোগাযোগের অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। কোনো কারণ ছাড়া চট্টগ্রামের এই ব্যবসায়ীর কোনো ইসরায়েলির সঙ্গে বৈঠক করার কথা নয়। এসব ব্যাপারে আসলামের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হচ্ছে। তিনি বারবারই এড়িয়ে যাচ্ছেন। চট্টগ্রাম ও ঢাকার কয়েকজন বিএনপি নেতার সঙ্গে আসলাম চৌধুরীর বেশি যোগাযোগ আছে। তাদের কেউ এ বিষয়ে জানেন কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ওই কর্মকর্তা আরো জানান, ৫৪ ধারায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও আসলামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ। ওই মামলায় আসামি সুনির্দিষ্ট করা হবে। এছাড়া আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে বেশ কিছু নাশকতার মামলা আছে। কয়েকটি মামলায় জামিন নিলেও বেশ কিছু মামলায় তিনি পলাতক আসামি। সেসব মামলাও আসলামকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।

জানতে চাইলে ডিবির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, ‘তাকে (আসলাম) বৈঠকসহ যোগাযোগের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেব।’

ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর ছবিসহ একটি প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর থেকে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। ভারতের আগ্রায় ‘ডেল-আভিভ’ শীর্ষক সেমিনারের আগে এন সাফাদির সঙ্গে আসলামকেও ফুলের মালা দিয়ে বরণ করছেন সেখানকার মেয়র- এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। একটি ছবিতে বাঁয়ে লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদি, মাঝে আসলাম চৌধুরীকে দেখা যায়। ছবিটি গত ১০ মার্চ মেন্দি এন সাফাদি তার পরিচালিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনসের ফেসবুক পেজে আপলোড করেন।

এই খবর প্রকাশের পর আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করছেন, শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করতে বিএনপি ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল এবং দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করছে।

তবে বিএনপি ইসরায়েল কিংবা মোসাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, আসলামের ওই সফর ছিল ‘ব্যক্তিগত’।

ওই খবর প্রকাশের পরপরই আসলামকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেয় পুলিশ। গত রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে তাকে আটক করে ডিবির উত্তর বিভাগের একটি দল। সোমবার তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের নির্দেশে সাত দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।

ডিবির সূত্র জানিয়েছে, ভারতে বসে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’র এজেন্টের সঙ্গে ‘সরকার উৎখাতের বৈঠকে’ আসলাম ছাড়া আর কে বা কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখছে তদন্তকারীরা।

এদিকে গত রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে ‘ষড়যন্ত্রে’ বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে আর কেউ জড়িত কি না, সে বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। আরও তথ্য সংগ্রহ করে ‘অ্যাকশনে’ যাবেন বলেও জানান তিনি।

আরেকটি সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম চৌধুরী মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তার ফাঁসি ঠেকাতে দেশে-বিদেশে তৎপরতা চালান আসলাম। বিএনপির ডাকা হরতাল ও অবরোধ সফল করতে টাকাও দিতেন তিনি। ফলে তাকে সরকারবিরোধী সক্রিয় ব্যক্তি বলে মনে করা হয়।

সূত্রমতে, গত দুই বছর ধরে দেশে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটছে, এবং আইএস বা আল কায়েদার নামে দায় স্বীকার করা হচ্ছে। এসব দায় স্বীকারের বার্তার খবর দিচ্ছে সাইট ইন্টেলিজেন্স। এই ওয়েবসাইটটির কর্ণধার যুক্তরাষ্ট্র নিবাসী রিতা কাৎজ। তিনি আগে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে কাজ করতেন। হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার কোনো ষড়যন্ত্রে আসলামসহ আর কেউ জড়িত কি না তাও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই