ফাঁসির মুখে আরেক নেতা, তবু ফিরছেন না রাজ্জাক

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলের নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি ঠেকাতে আদালতে দৌঁড়ঝাপ কম করেননি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুর রাজ্জাক। কিন্তু তার ফাঁসি কার্যকরের পাঁচদিন পর সেই যে দেশ ছেড়েছেন রাজ্জাক, আর ফেরেননি তিনি। তার বিদেশ যাত্রার পর আমৃত্যু কারাদণ্ড হয়েছে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর, ফাঁসি কার্যকর হয়েছে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের, ফাঁসির চূড়ান্ত রায় ঘোষণা হয়েছে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের।

মুজাহিদের দণ্ড কার্যকর হবে কি না, তা জানা যাবে রায় পর্যালোচনার আবেদনের পর। আবেদন নাকচ হলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ পাবেন মুজাহিদ। তবে ট্রাইব্যুনালে তার মামলা নিয়ে লড়লেও আপিল আবেদনে একটি দিনের জন্যও দলের প্রধান আইনজীবীর সহযোগিতা পায়নি জামায়াত।

জামায়াতের অন্যতম নীতি নির্ধারক হলেও রাজনৈতিক ময়দানে দলীয় পরিচয়ে রাজ্জাককে কখনই অতটা সক্রিয় দেখা যায়নি। বরং দলের নেতাদের আইনি সহায়তায় কাজ করেছেন সব সময়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের রক্ষায় আইনি লড়াইয়ে তিনিই ছিলেন প্রধান আইনজীবী।

কিন্তু নেতারা যখন ফাঁসির মুখে তখন আবদুর রাজ্জাক কেন লাপাত্তা, তার কোনো জবাব নেই জামায়াতের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের কাছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বিব্রত হন তারা।

রাজ্জাকের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ছাড়ার পর থেকে বিভিন্ন দেশ ঘুরে এখন যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন এই জামায়াত নেতা। তিনি কবে ফিরবেন বা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে আদৌ ফিরবেন কি না তা নিশ্চিত নন জামায়াত নেতারা। পরিবারের আশঙ্কা, দেশে ফিরলে দলের অন্য শীর্ষ নেতাদের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গ্রেপ্তার হতে পারেন আবদুর রাজ্জাকও। এ জন্যই জামায়াতের কোনো কোনো নেতা তাকে বিদেশে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বলেও জানিয়েছে তার পরিবার সূত্র।

আবদুর রাজ্জাককে জামায়াত এতোদিন সামনে না নিয়ে এলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে জামায়াতের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে তাকেই ধরা হয়। দলের আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে তিনিই মূল ভূমিকা পালন করেন। তাছাড়া জামায়াতের স্বাধীনতাবিরোধী নেতা হিসেবে তার নাম কখনো সামনে আসেনি, যদিও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তৎপরতা ছিল তারও।

আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল এবং আপিল বিভাগে জামায়াত নেতাদের হয়ে লড়েছেন এমন আইনজীবীরা তাদের সিনিয়রের এমন আচরণে বিব্রত। তবে জানতে চাইলে এক আইনজীবী বলেছেন, ‘জামায়াত নেতাদের প্রধান আইনজীবী হিসেবে আইনি পরামর্শ নেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় বিদেশ সফরে গেছেন রাজ্জাক। প্রতিবারই তিনি কাজ শেষে দেশে ফিরে এসেছেন। এবার কেন তিনি এমন করছেন, তা বোধগম্য হচ্ছে না।’

আবদুর রাজ্জাক দেশের বাইরে বসে সরকারবিরোধী নানা তৎপরতায় জড়িত হয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন সরকারি দলের নেতারা। তাদের অভিযোগ, রাজ্জাক দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনের কর্তা ব্যক্তি, কূটনীতিক ও প্রভাবশালী সরকারি-বেসরকারি লোকদের সঙ্গেও দেখা করছেন। তিনি বাংলাদেশের চলমান সংকট এবং বিশেষকরে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিচার ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য তুলে ধরছেন।

এ বিষয়ে জানতে জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘রাজ্জাক সাহেবকে সরকারই দেশে আসতে দিচ্ছে না। কারণ তিনি যেদিনই বিদেশে গেছেন সেদিনই তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। তাই তিনি বাধ্য হয়েই বিদেশে অবস্থান করছেন’।

ট্রাইব্যুনালে আসামিপক্ষের আইনজীবি শিশির মুনির বলেন, ‘উনি পেশার কারণেই বিদেশে অবস্থান করছেন। সেই কাজ শেষ হলেই তিনি দেশে চলে আসবেন’। তিনি বলেন, ওনার (রাজ্জাক) অনুপস্থিতিতে আমাদের প্রধান আইনজীবী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি দেশের একজন বিজ্ঞ আইনজীবী। তাঁর নেতৃত্বে আমরা যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে পারছি’।



মন্তব্য চালু নেই