ফাল্লুজায় মানবিক বিপর্যয়

সরকারি বাহিনী ও জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হামলা-পাল্টা হামলায় ভয়াবহ ‘মানবিক বিপর্যয়’ দেখা দিয়েছে ইরাকের ফাল্লুজা শহরে। আইএস নিয়ন্ত্রিত ফাল্লুজায় অন্তত ৫০ হাজার বেসামরিক নাগরিক আটকা পড়েছেন।

ফাল্লুজা থেকে পালিয়ে আসা পরিবারের সদস্যরা বলছেন, শহর থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে আইএস। গত সপ্তাহ থেকে ফাল্লুজায় সরকারি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকে যারা পালানোর চেষ্টা করছেন, তাদেরকে গুলি করে হত্যা করছে আইএস।

আটকা পড়া বেসামরিক লোকজনকে ইরাকি বাহিনী, মিলিশিয়া ও জোটের বিমান হামলার বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এই জঙ্গিগোষ্ঠী। আইএস জঙ্গিরা অবস্থান পাল্টানোর সময় পরিবারগুলোকেও সঙ্গে যেতে বাধ্য করছে।

২০০৩ সালে ইরাকে ব্রিটেনের বিশেষ বাহিনীর অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তা জেরেমি গ্রিনস্টোক রেডিও ফোর’ কে বলেন, সুন্নিপন্থী সাদ্দাম হোসেনের বাআথ পার্টি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া সদস্যরা ফাল্লুজায় আছে; এবং তারা সরকারি হামলা প্রতিরোধ করবে।

ফাল্লুজা পুনরুদ্ধারে ইরাক সরকারের সামরিক অভিযান শুরুর এক সপ্তাহ পর শহরটি পুনর্দখলে সোমবার চূড়ান্ত আক্রমণ শুরু করে ইরাকি বাহিনী। তবে পাল্টা প্রতিরোধও গড়ে তুলছে আইএস। নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনআরসি) স্থানচ্যুত আমিরিয়াত আল ফাল্লুজা ক্যাম্পে কাজ করছে।

এনআরসি সতর্ক করে দিয়ে বলছে, তিন দিক থেকে আক্রমণ শুরু হওয়ায় শহরটি খালি করার অল্প কিছু নিরাপদ রাস্তা আছে।

সংস্থাটির মহাপরিচালক জ্যান এগিল্যান্ড ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য ইন্ডিপেনডেন্টকে বলেন, ‘ফাল্লুজা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে। পরিবারগুলো ক্রসফায়ারের মধ্যে পড়েছে, পালানোর জন্য নিরাপদ কোনো রুট নেই’।

তিনি বলেন, ‘বেশি দেরি হওয়ার আগেই বিবাদমান পক্ষগুলোকে এখনই বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে সরে যাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে। না হলে আরো অনেক প্রাণহানি ঘটবে’।

ফাল্লুজার কাছের একটি গ্রাম থেকে পালিয়েছেন স্বামী ও ৬ সন্তান নিয়ে সুয়াদ নামের এক নারী। তিনি বলেন, আইএস জঙ্গিরা যুদ্ধে তাদেরকে ব্যবহার করেছে। ফাল্লুজায় অভিযান শুরুর পর ধ্বংস হয়ে যাওয়া এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে যেতে অামাদের বাধ্য করেছে আইএস।

ওই নারী বলেন, গত রাতে ভয়াবহ গোলাগুলির মাঝে পড়েছিলেন তারা।

সোমবার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে অন্তত ৩২ বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি ঘটেছে। স্থানীয় এক চিকিৎসক জানান, নিহতদের মধ্যে ২০ জন জঙ্গি রয়েছে।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তা ক্যারোলিন গ্লাক বলেন, সোমবার কয়েকশ পরিবার পাল্লুজা থেকে পালিয়েছে। এদিন সরকারি শিবিরে বাস্তুচ্যুত ৩ হাজার ২ শ’ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই