ফাস্টফুড ব্যবসার আড়ালে প্রেমকুঞ্জ !

পার্ক, আবাসিক হোটেল কিংবা কোনো নির্জন স্থানে নয়। শহরের আধুনিক ফাস্টফুডের প্রতিষ্টানের অনেকগুলো হয়ে উঠেছে সামাজিক অবক্ষয়ের নিরাপদ অভয়ারণ্য।এসব প্রতিষ্টনগুলোতে অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর জন্য রয়েছে বিশেষ আসন ব্যবস্থা।এসব প্রতিষ্টানের বেশীরভাগ কাষ্টমারই হচ্ছেন স্কুল পড়–য়া শিক্ষার্থী। স্কুল ফাকিঁ দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা হালকা খাবার খাওয়ার উছিলায় ওইসব প্রতিস্টানে প্রেমালাপসহ আপত্তিকর মেলামেশায় লিপ্ত হচ্ছে।হবিগঞ্জ শহরের কোর্ট ষ্টেশন রোড থেকে রাজনগরের মহিলা কলেজ পর্যন্ত প্রায় অসংখ্য ফাষ্টফুডের দোকান গড়ে উঠেছে। দিন দিন এর সংংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে রাজনগর এলাকায় মহিলা কলেজ ও হবিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এলাকাকে টার্গেট করে এসব প্রতিষ্টান গড়ে তুলতে রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে যে, ছাত্রছাত্রীরা যাতে যুগলবন্দি হয়ে অন্তরঙ্গ সময় কাটাতে পারে সেজন্য এগুলোকে বিশেষ ভাবে সাজানো হয়েছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজনগর এলাকায় অবস্থিত এ ধরনের একটি দোকানে অত্যন্ত ছোট পরিসরে বাঁেশর পার্টিশন দিয়ে ছোট ছোট খোপ করা হয়েছে। ওই দোকানে সিঙ্গেল খাবারের অর্ডার রাখা হয় না। একজন খেতে চাইলেও তাকে ডাবল খেতে হয়। কিছু সময় সেখানে অবস্থান করে দেখা গেছে, ওই খোপগুলোতে স্কুলের পোশাক পড়া কতিপয় ছাত্রছাত্রী অন্তরঙ্গভাবে বসে আড্ডা দিচ্ছে। অভিযোগে আরো জানা যায়, ওই সব প্রতিষ্টানের অনেকগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। কোন কোন সময় কোমলমতি স্কুল ছাত্রছাত্রীরা আপত্তিকর থাকাবস্থায় রেকর্ডকৃত ফুটেজ পরবর্তীতে ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ফায়দা লুটার চেষ্টা করা হয়। সুযোগ সুবিধা এতোই দেওয়া হয়েছে যে ঐসব প্রতিষ্টানে খাবারের মূল্য বেশী হলেও কোন আপত্তি নেই কারো। কারণ খাওয়ার নামে প্রিয় মানুষটার সাথে সময় কাটানোই যে মূখ্য বিষয়।

উচ্চ খাবার মূল্য এবং খাবার তালিকা প্রতিটি দোকানের প্রায় একই রকম থাকলেও কোন দোকানেই ক্রেতা সংকট নেই। বরং ওই সব দোকানে বসে খেতে হলে র্দীঘক্ষন দাড়িঁয়েও থাকতে হয়। সকাল সাড়ে দশটা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত পিক আওয়ার। এসময় ওইসব দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভীড় পরিলক্ষিত হয়েছে। এখানে আবার খাবারের সাথে বিনোদনের ব্যবস্থাও আছে। বড় স্ক্রিনে চলে ইংলিশ হিন্দি গানের সাথে খোলামেলা উদ্দাম নাচ। ব্যাবসায়ী শামসু মিয়া বলেন, কিছুদিন আগে শহরের রাজনগরস্থ একটি স্কুলের পাশে ফাষ্টফুডে গিয়েছিলেন তার বাচ্চার জন্য কিছু ফাস্টফুড কিনতে। খাবার রেডি ও প্যাকেট করতে একটু সময় লাগে। ঐ সময়টুকুর বর্ননা দিতে গিয়ে তিনি বলেন ছোট একটা দোকান। তার উপর ছোট ছোট খোপের ভেতর থেকে আসছে বিশেষ এক ধরনের শব্দ।

এই শব্দ শুনে লজ্জায় আমি তাড়াতাড়ি খাবার নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের এসব কার্যকলাপের মধ্যে এসব ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে পরিবার নিয়ে বসে খাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি আক্ষেপ করে বলেন তরুন এইসব ব্যবসায়ীরা লাভের আশায় ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছেন। তাই এসব ফাস্টফুডের দোকানগুলোর অভ্যান্তরিন সাজসজ্জা, আলোক ব্যবস্থা, আসবাবপত্র খোলামেলা করা প্রয়োজন। বিকেজিসি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, সুধাংশু কুমার কর্মকার বলেন। স্কুল ফাকিঁ দিয়ে ফস্টফুডের দোকানে আড্ডা দেয়ার ঘটনা প্রায় ৬ মাস আগে আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এরপর আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষ একটি মোবাইল টিম গঠন করেছি এটা প্রতিরোধ করার জন্য। ছাত্রীরা যাতে স্কুলের সময় কোন রেস্তুরায় না যায় সেজন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমাদের স্কুলের ছাত্রীরা স্কুলে প্রবেশ করার পর যেনো ছুটির আগে বাহিরে যেতে না পারে এ ব্যপারে আমরা অনেক সর্তক। কিন্তু ছাত্রী যদি স্কুলে আসার নামে বাইরে আড্ডা দেয় তাহলে স্কুল কর্তৃপক্ষের করনীয় কিছু থাকে না। এ ক্ষেত্রে অভিবাবকদের সচেতন এবং সর্তক হতে হবে।

বিকেজিসি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীর অভিবাবক বলেন, অনেকেই বাচ্চাদের সাথে স্কুলে আসেন না। এই সুযোগে তারা স্কুল ফাঁকি দিয়ে খাবারের দোকানগুলোতে আড্ডা দেয়। ইদানিং হবিগঞ্জে বেশ কিছু ফাস্টফুডের দোকান হয়েছে। এই দোকানগুলো এত নিরিবিলি যে কেউ সারাদিন বসে থাকলেও কোনো খবর পাওয়া যাবে না । ফাস্টফুডের দোকান মালিকরা তাদের লাভের জন্য এই কোমলমতি বাচ্চাদের খারাপ কাজ করার সুযোগ দিচ্ছেন।তিনি বলেন এসব রোধ করতে অভিভাবকদের সচেনতার পাশাপাশি প্রশাসনকেও এগিয়ে আসতে হবে। স্কুল চলাকালীন সময়ে ছাত্রছাত্রীরা ওইসব ফাষ্টফুডের দোকানে আড্ডা দিতে না পারে সেজন্য ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা খুবই জরুরী। এব্যাপারে কোর্ট ষ্টেশনস্থ সিপি ফাইভ ষ্টারের মালিক জুয়েল আহমেদ বলেন, কাষ্টমার হিসেবে যে কেউ রেস্তুরায় আসতে পারে। ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষ কিংবা প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারেন। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করনীয় নেই।



মন্তব্য চালু নেই