এক রানের আফসোস

তীরে এসে তরি ডুবলো বাংলাদেশের

এত কাছে তবু এত দূরে! জয়ের এত কাছে এসে, এত সম্ভাবনা তৈরি করেও হারতে হলো বাংলাদেশকে! এ যেন মেনে নেয়ার মতো নয়। এ যেন পুরোপুরে এক দুঃস্বপ্ন। নিশ্চিত জয়ের ম্যাচ এভাবে হেরে যেতে হলো! শেষ ওভারের অবিশ্বাস্য নাটকীয়তায় মাত্র ১ রানে হেরে যেতে হলো বাংলাদেশকে। ভারতের করা ১৪৬ রানের জবাব দিতে নেমে ৯ উইকেটে ১৪৫ রানেই থেমে যেতে হলো বাংলাদেশকে।

অথচ জয়ের কত কাছে চলে এসেছিল বাংলাদেশ। শেষ ওভারে ১১ রান প্রয়োজন। মুশফিকুর রহিম পরপর দুটি বাউন্ডারি মেরে জয়টাকে একেবারে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু দুটি সিঙ্গেল না নিয়ে বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হলেন মুশফিক এবং মাহমুদুল্লাহর মত সিনিয়র ব্যাটসমানরা। এই দুটি আউটই হারিয়ে দিলো বাংলাদেশকে। শেষ বলে প্রয়োজন দুই রান। কিন্তু শুভাগত হোম ব্যাটেই বল লাগাতে পারেননি।

বাংলাদেশ নিশ্চিত জয় পাচ্ছিল যে ম্যাচে, সেই ম্যাচটিতে টান টান উত্তেজনা তৈরী হয়েছিল শেষ মুহূর্তে। শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন ১৭ রান। শেষ ওভারে ১১ রান। বোলার ছিলেন হার্দিক পাণ্ডে। শেষ এই ওভারে নায়কে পরিণত হলেন মুশফিকুর রহিম। প্রথম বলে দিলেন ১ রান। দ্বিতীয় বলে মুশফিক মারলেন বাউন্ডারি। প্রতিটি বলের আগেই তৈরী হলো টান টান উত্তেজনা। ভারতীয় খেলোয়াড়রা বার বার পরামর্শ দিচ্ছিলেন পাণ্ডেকে। কিন্তু তৃতীয় বলে আবারও বাউন্ডারি মারলেন মুশফিক। তিন বলে প্রয়োজন ২ রান। কিন্তু চতুর্থ বলে এসে আবারও বাউন্ডারি মারতে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন মুশফিক। ২ বলে প্রয়োজন ২ রান। ৫ম বলে ইজি বল ছক্কা মারতে গেলেন মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু এবারও ক্যাচ। আউট হয়ে গেলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। শেষ বলে প্রয়োজন ২ রান। শুভাগত হোমের মত ব্যাটসম্যান। ব্যাটেই বল লাগাতে পারলেন না। দৌড়েছিলেন রানের জন্য। তাও পারলেন না। রানআউট হয়ে গেলেন মুস্তাফিজুর রহমান।

একই সঙ্গে ভারতের কাছে হেরে সেমিতে যাওয়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলো বাংলাদেশের। গ্রুপ-২ এ এখন ভারতের পয়েন্ট ৪। বাংলাদেশের কোন পয়েন্ট নেই। অস্ট্রেলিয়া এবং পাকিস্তানের পয়েন্ট সমান ২ করে। টানা তিন ম্যাচ জিতে সবার আগে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে রেখেছে নিউজিল্যান্ড।

১৪৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দারুণ সূচনা এনে দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। অবশ্য দু’বার লাইফ পেয়েছিলেন তিনি। একবার বোলারকে দিয়েছিলেন রিটার্ন ক্যাচ। আরেকবার জসপ্রিত বুমরাহ ক্যাচ ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবুও খুব বেশিদুর এগুতে পারলেন না বাংলাদেশের সেরা এই ওপেনার। ৩৫ রান করে ফিরে যেতে হলো তাকে।

তবে আউট হওয়ার আগে দারুণা সূচনা এনে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। ভারতের করা ১৪৬ রান তাড়া করতে নেমে দলীয় ১১ রানের মাথায় মোহাম্মদ মিঠুন আউট হয়ে গেলে যে বিপর্যয় তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, সেটা আপাতত কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশকে দারুণ সূচনা এনে দিয়েছেন তামিম ইকবাল। ৩২ বলে খেলা তার ৩৫ রানের ইনিংসটিতে ছিল ৫টি বাউন্ডারির মার।

তার আগে ৩ বল খেলে মাত্র ১ রান করে আউট হয়ে যান মোহাম্মদ মিঠুন আলি। এরপর সাব্বির রহমান আর সাকিব আল হাসান মিলে দারুন একটি জুটি গড়ে তোলেন। যদিও দলের ৬৯ রানের মাথায় অমার্জনীয় এক ভুলে আউট হয়ে যান সাব্বির রহমান। ওয়াইড বলে সরতে গিয়ে ধোনির স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন তিনি।

সাকিব আল হাসানও সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিলেন ১৫ বলে ২২ রান করেছিলেন তিনি। কিন্তু অশ্বিনের এক ঘূর্ণিতে স্লিপে রায়নার হাতে ক্যাচ দিলেন তিনি। মাশরাফি নেমেছিলেন ৫ নম্বরে। ইচ্ছা ছিল দ্রুত কিছু রান তোলা। কিন্তু ৫ বলে ৬ রান করে আউট হয়ে যান তিনিও। সৌম্য সরকারকে নামানো হয়েছিল ৭ নম্বরে। ২১ বল খেলে ২১ রান করে আউট হয়ে যান তিনিও।

মুশফিক এবং মাহমুদুল্লাহও আউট হলেন শেষ মুহূর্তে। অশ্বিন, রবিন্দ্র জাদেজা এবং হার্দিক পাণ্ডে নেন ২টি করে উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন সুরেশ রায়না, এবং আশিষ নেহরা।



মন্তব্য চালু নেই