ফিলিস্তিনের একমাত্র নারী ট্রাক্সিচালক

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সামাজিক কাঠামো অন্যান্য দেশগুলো থেকে অনেকটাই পিছিয়ে। নিদর্শনস্বরুপ গত মাসে সৌদিআরবের নারীদের ভোটাধিকার পাওয়ার দৃষ্টান্ত হাজির করা যায়। এখনও আরববিশ্বের এমনও অনেক দেশ আছে যেখানে নারীরা ঘর থেকে বের হওয়ার অধিকারটুকুও পান না। নারী বৈষম্যের এমনই এক চিত্রের বাসিন্দা নাদিয়া আহমদ। যুদ্ধাক্রান্ত ফিলিস্তিনের একমাত্র নারী ট্রাক্সিচালক তিনি।

তারুণ্যে স্রেফ আনন্দের জন্যই ট্যাক্সি চালানো শিখেছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি কখনও ভাবেনওনি যে, এই ট্যাক্সিই হবে তার জীভনযাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ। গত দুবছর ধরে নাদিয়া পশ্চিমতরীরের হেবরনে নিয়ম করে ট্যাক্সি চালাচ্ছেন। হামাস এবং ফাত্তাহ’র পক্ষ থেকে অনেকবারই নাদিয়ার কাছে রাজনীতিতে অংশগ্রহনের প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু অনেক কৌশল খাটিয়ে তিনি সব প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যান করেন।

তবে যদি ভেবে থাকেন যে, জীবনযাপনের জন্য নাদিয়ার এই ট্যাক্সিই ভরসা তাহলে ভুল ভাবা হবে। তার স্বামী স্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন। স্ত্রীর ট্যাক্সিচালনায় কখনও তিনি বাধা দেননি, উল্টো উৎসাহ দিয়েছেন আনন্দের সঙ্গে কাজটি করার। তবে সমাজের অন্যান্যরা নাদিয়াকে কথা শোনাতে একটুও কার্পণ্য করেনি। নাদিয়ার ভাষ্যেই জানা যায়, ‘শুরুর দিকে আমাকে নিয়ে অনেক গল্প হতো। আমার ভাই যখন শুনতে পেল যে অন্যান্য পুরুষ ট্যাক্সিচালকরা আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলছে তখন সে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং আমাকে ট্যাক্সি চালানো বন্ধ করতে বলেন।’ ওই ঘটনার পর নাদিয়া কয়েক মাস ট্যাক্সি চালাননি, যদিও তার স্বামী তাকে প্রতিনিয়তই উৎসাহ দিয়ে আসছিল।

ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীর অঞ্চলে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহন এটাই অবশ্য প্রথম নয়। ধাত্রীবিদ্যা থেকে শুরু করে শিক্ষা, নার্সসহ বিভিন্ন কাজে নারীরা নিয়োজিত আছেন। কিন্তু নাদিয়ার পদক্ষেপটি অন্য সবার থেকে আলাদা হিসেবে গন্য করা হচ্ছে কারণ এই পেশায় এর আগে ফিলিস্তিনে কোনো নারী আসেনি। এবিষয়ে বিরজেইত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাহিদ আবু তাইমা বলেন, ‘গাজায় নাদিয়ার মতো আরেক নারী আছেন, যিনি মাছ বিক্রি করেন। আমার জানা মতে, মাছবিক্রি পেশায় তিনিই একমাত্র নারী। এটা খুব একটা সহজ কাজ হয়। কিন্তু এই নারীরা অন্য নারীদের কাজের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে। একটা সময় ছিল যখন এটা কল্পনাও করা যেত না।’

শুরুর দিকে নাদিয়ার ট্রাক্সি খারাপ হয়ে গেলে স্থানীয় কারিগররা তার গাড়ি ঠিক করে দিতো না। অবশ্য এই অবস্থাও দমাতে পারেনি নাদিয়াকে। নিজ ভাইয়ের গাড়ি ঠিক করা দেখে দেখে আয়ত্ব করে নিলেন তিনি। এরপর থেকে নিজের গাড়ির কাজ নিজেই করেন তিনি। ‘আমি এখন আমার গাড়ি নিজেই সারাই করতে পারি। আমি ক্রমাগত দেখেছি এবং দেখেছি। আর এখন আমি গাড়ি সম্পর্কে সবকিছুই জানি। আমি মুহূর্তের মধ্যে কাবুরেটর খুলে ঠিক করতে পারি।’

নাদিয়ার একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়েছে জর্ডানে। মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনিও সম্প্রতি গাড়ি চালানোর লাইসেন্স অর্জন করেছেন। খুব তারাতারিই তিনি ট্যাক্সিচালনাকে পেশা হিসেবে নেবেন বলে জানা গেছে। শুধু মেয়েই নয়, ফিলিস্তিনের বিভিন্ন প্রান্তের নারীরা এখন নাদিয়া আহমদকে তাদের পাথেয় হিসেবে নিচ্ছেন। অনেকে নারীই এখন নানান কাজে নিজেদের নিয়োজিত করেছেন সামাজিক বিভিন্ন বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে।



মন্তব্য চালু নেই