ফুটপাতের এক কোণে ৮০ টাকার মাছ-ভাতে ঈদ কাটলো এই দম্পতির

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দোয়েল চত্বর এলাকার রাস্তার পাশে এক বাটি ভাত নিয়ে বসে আছেন জেসমিন আক্তার ও আব্দুর রাজ্জাক। ভাতের সাথে তরকারি হিসেবে আছে মাছ। পাশেই রয়েছে একটি পানির বোতল। আর খাবার বাটির ঢাকনার ওপর রয়েছে লবণ এবং কয়েকটি কাঁচামরিচ।

এক বাটিতেই খাওয়া শুরু করলেন দুজন। বেশ তৃপ্তি নিয়েই চলে তাদের ভোজন। বিন্দুমাত্র অতৃপ্তির ছাপ নেই তাদের মধ্যে। আর এভাবেই ঈদে দুপুরের ভোজন সারলেন এই দম্পতি।

বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় যখন রাস্তার পাশে তাদের এই ভোজন চলছিল, তখন হয়তো বিভিন্ন বাসা বাড়িতে নতুন পোশাক পরে পরিবারের সদস্য কিংবা বন্ধু-বান্ধবকে নিয়ে মুখরোচক খাবার খাচ্ছিলেন বেশিরভাগ মানুষ। কিন্তু ঈদের সেই ভিন্ন মাত্রার আনন্দ জোটেনি জেসমিন-রাজ্জাক দম্পতির ভাগ্যে। তবে ৮০ টাকা দিয়ে কেনা মাছ-ভাতেই তাদের আনন্দ।

নতুন পোশাক কেনার জন্য নেই তাদের সামর্থ্য, কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই। দুজন একসাথে বসে এমনভাবে আন্তরিকতার সাথে খাবার খাচ্ছেন, এটাও তাদের কাছে ঈদের আনন্দের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

আব্দুর রাজ্জাক ভাঙারি টোকানোর পাশাপাশি কমলাপুরে পণ্য ওঠা নামানোর শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। এতে দিনে ৩০০ টাকার মতো আয় হয়। তা দিয়েই চলে যায় তাদের ছোট্ট সংসার। অর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় হাইকোর্টের সামনের ফুটপাতেই রাত্রি যাপন করেন তারা।

আব্দুর রাজ্জাক জানান, বিয়ের পর এটাই তাদের প্রথম ঈদ। আট মাস আগে ভালোবেসে জেসমিনকে বিয়ে করেন তিনি। যদিও ভালোবাসার গল্পটা শুরুর দিকে খুব একটা সহজ ছিল না।

নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় একই গার্মেন্টসে কাজ করতেন দুজন। ময়মনসিংহের মেয়ে জেসমিনকে দেখেই ভালো লাগে রাজ্জাকের। কিন্তু প্রস্তাব দিলেও তাতে সাড়া দেয়নি সে। হাল ছাড়েননি রাজ্জাক। তার প্রচেষ্টায় চারদিনের মাথায় রাজি হন জেসমিন। পরে পরিবারকে না জানিয়েই বিয়ে করে ফেলেন তারা।

জেসমিনের পরিবার বিষয়টি মেনে নিলেও রাজ্জাকের পরিবার এখনো মেনে নেয়নি। কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না তাদের। রাস্তাকে আপন করে নিজেদের মতো সংসারটা গুছিয়ে নিয়েছেন তারা। জেসমিন আটমাসের অন্তঃসত্ত্বা বলেও জানান রাজ্জাক।

জেসমিন বলেন, ঈদে নতুন জামা, ভালো খাবার না জুটলেও তাতে কোনো দুঃখ নেই আমাদের। ও পাশে আছে, তাই আমাদের ঈদ ভালোই কাটছে। সন্তান হওয়ার আগে বাপের বাড়িতে যাবো। কুরবানির ঈদ সেখানেই করবো।খবর বাংলামেইলের।



মন্তব্য চালু নেই