ফুল ফুটছে রাজধানীর ফুটপাতে

রাজধানী ঢাকার ফুটপাত দখল করে সড়কেরও অধিকাংশ অংশ দখল করে নিয়েছে অবৈধ ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে পথচারীদের পাশাপাশি খোদ সিটি করপোরেশনও বেকায়দায়। বারবার উচ্ছেদ করার পরেও কিছুতেই ফুটপাত দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বিরক্তি প্রকাশ করে এক অনুষ্ঠানে বলেই পেললেন- ‘আমরা তো এখন আর ফুটপাত দখলমুক্ত করছি না। অন্তত পক্ষে তারা যাতে রাস্তায় না আছে!’ মেয়রের এমন বক্তব্যের পর পাঠকরা হয়তো ভাবছেন, এ অবস্থায় ফুটপাতে আবার ফুল ফোটে কী করে?

অবাস্তব কিছু নয়, এমন চিত্রই দেখা যাচ্ছে রাজধানীর কয়েকটি সড়কে। কোথাও কোথাও দেখা যাচ্ছে আরো ব্যতিক্রম। বর্জ্যে ভরা খোলা ডাস্টবিন আর সুয়ারেজের দুর্গন্ধ যেখানে পথচারীকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ছে সেই রাজধানীর ফুটপাতেই সুগন্ধি ফুল গাছের টব দিয়ে সাজাতে দেখা গেছে দোকান মালিক, ব্যবসায়ীসহ সচেতন নগরবাসীকে। দোকানের সামনের ফুটপাত হকার্স মুক্ত রাখতেই বাহারী ফুলের টব দিয়ে সুসজ্জিত করার এ উদ্যোগ বলে জানা গেছে। তবে এক্ষেত্রে সম্প্রতি দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের সচেতনতামূলক উদ্যোগ ও প্রচারণাই বেশ কাজে দিয়েছে।

রাজধানীতে হকার্সদের দখলে থাকা ফুটপাতগুলোর মধ্যে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকা অন্যতম। শত চেষ্টা করেও এলাকাটি হকার্স মুক্ত করতে পারে না সিটি করপোরেশন। প্রশাসনের পাশাপাশি অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছেন এলাকার ব্যবসায়ীরাও। দখলবাজ হকার্সরা বৈধ ব্যবসায়ীদের দোকানের সামনের দরজা থেকে শুরু করে সামনের অংশের ফুটপাতে চোকি ও ছাউনি দিয়ে একেবারে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে বসে থাকেন। পথচারীরা তখন ফুটপাত ছেড়ে রাস্তা দিয়েই হাঁটতে বাধ্য হন।

কিন্তু শুক্রবার এ পথটি দিয়ে হাঁটতে গিয়ে ব্যতিক্রম কিছু চোখে পড়লো। পল্টন মোড় থেকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দিকে একটু গেলেই হাতের বা’পাশে দেখা মিলল ‘কে ফ্যাশন’ ও ‘খাদেম সুজ’র দুটি শোর রুম। হকার্সদের টং দোকানের কারণে পাশে থাকা অন্য শো রুমগুলোর মুখ দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু এ দুটি দোকানের সামনে বিভিন্ন জাতের ফুলের টব সাজিয়ে রাখতে দেখা গেছে। দখল হয়ে যাওয়া ফুটপাতের গিঞ্জি অতিক্রম করে অনেকেই এখানে এসে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন। দেখতে দেখতে আবার অনেকে ঢুকে পড়ছেন শো রুম দুটিতে।

ফুলের টব দিয়ে ফুটপাত সাজানোর উদ্যোগটি সম্পর্কে জানতে চাইলে ‘কে ফ্যাশন’র ম্যানেজার জাহাঙ্গীর জানান, স্থানটি হকার্স মুক্ত রাখতে তার দৃঢ় অবস্থানের কথা।

তিনি বলেন, ‘ফুটপাত নিয়ে কোটি কোটি টাকা ব্যবসা করছে তথাকথিত রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশ। হাজার হাজার টাকা দোকান ভাড়া দিয়ে যখন কোনো কাস্টমার পাচ্ছি না তখন ব্যবসা নিয়ে অনেকটা হতাশ হয়ে পড়ি। এরপর প্রতিজ্ঞা করি দোকানের সামনে কোনো হকার্স বসতে দেবো না, দিইনি। নেতা/পুলিশ বহুবার ফোন দিছে হকার্স বসানোর জন্য। আমিও আমার অবস্থানে অনড় থাকি। কারণ, প্রশাসনে আমাদের কিছু লোকও তো আছে। এরপর তারা ক্ষুদ্ধ হয়ে রাতের আঁধারে বহুবার আমার অনেক টব ভেঙে দিয়েছে। তাতেও হতাশ হয়নি। এটা রক্ষা করতে তাদের সঙ্গে আমাকে যুদ্ধ করতে হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমার দোকানের সামনে মানুষ এখন অনায়াসে হাঁটতে পারে। পরিবেশ দেখে একটু দাঁড়িয়ে ঘুরে ফিরে দেখে। দোকানে প্রবেশ করে। মালামাল কিনে। ব্যবসা হয়।’

2016_01_15_18_11_58_Z49p3cKHeDctln0nHAivTM3SpLylHe_original

তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘কোটি টাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে অন্তত হাজারখানেক টাকা খরচ করে এভাবে সাজিয়ে তুললে পরিবেশের পরিবর্তন ঘটানো যায়। সিটি করপোরেশন যদি লাইসেন্স দেয়া বা নবায়ন করার সময় এ শর্তটি জুড়ে দেয় তাহলে আরো সুন্দর হয়। সব চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমরা সচেতন হলেই সব অশুভ শক্তিকে জয় করা যায়।’

একই অবস্থা দেখা গেছে রাজধানীর ধানমণ্ডির কলাবাগান এলাকায়। এ এলাকায় সড়কের পাশের বিশাল অংশ জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সিটি করপোরেশনের বর্জ্যের খোলা ডাস্টবিন থেকে দিন-রাত দুর্গন্ধ ছড়ায়। এতে বিরক্ত আসপাশের ব্যবসায়ী ও পথচারী সাধারণ মানুষ। তারা দুর্গন্ধের কারণে ফুটপাতটি ছেড়ে রাস্তায় নেমে যান স্থানটি অতিক্রম করতেন। কিন্তু সম্প্রতি দেখা গেছে ব্যতিক্রম। এলাকাবাসী উদ্যোগ নিয়ে ডাস্টবিনের পাশের ফুটপাতটি সাজিয়েছে ফুলের টব দিয়ে। এতে স্থানটি যেমন সুন্দর দেখাচ্ছে তেমনি পথচারীরা সেই পথ দিয়ে চলাচল করছে পারছে।

এদিকে, রাজধানীর পথচারীদের জন্য নির্ধারিত ফুটপাত বা ওভারব্রিজ ব্যবহার করাতে না পেরে এখন ফুলের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে দুই সিটি করপোরেশন। এ উদ্যোগে সাড়া পাওয়ায় এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ওভারব্রিজ বিভিন্ন ধরনের ফুলের টব দিয়ে সাজানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব ক’টি ওভারব্রিজই ফুল দিয়ে সাজানো হবে এবং উদ্যোগটি ফুটপাতসহ রাজধানীর প্রতিটি বাসা-বাড়িতে ছড়িয়ে দেয়া হবে। এমনটাই জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ও উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক।

জানতে চাইলে উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘নগরীকে বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রথমে প্রয়োজন আমাদের সচেতনতা। আমরা প্রত্যেকেই সচেতন হলে সবুজ ঢাকা গড়ে তোলা সম্ভবন। তবে আমরাও চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে অর্ধশতাধিক ওভারব্রিজের মধ্যে চার হাজারেরও বেশি ফুলের গাছ লাগিয়েছি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও এতে সহযোগিতা করছে।’

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘ফুটওভারব্রিজ অনেকেই ব্যবহার করতে চান না। তাই এতে মানুষ উঠানোর জন্য বাগান করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। রঙ বে-রঙের ফুল আর ফুলের সৌরভে যে কেউ ওভারব্রিজগুলো ব্যবহারে আগ্রহী হবেন। দোকানিরাও চাইলে তাদের দোকানের সামনের ফুটপাত দখল মুক্ত রাখতে পারে। একে ফুলের টব দিয়ে সুসজ্জিত করে গড়ে তুলতে পারে। সবার প্রতি আমার এ আহ্বান থাকবে।’বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই