ফেসবুকের কল্যাণে ৬ যুগ পর স্বজনের খোঁজ

সিনেমায় তো প্রায়ই এমন হয়। ১৫/২০ বছর পর হারিয়ে যাওয়া মা-ছেলের কিংবা ভাইয়ের সাথে বোনের দেখা হয়। ছোটবেলায় গাওয়া একটি গানের মাধ্যমে খুঁজে পায় পরিবারের একজন আরেকজনকে। এখন অবশ্য প্রযুক্তির যুগ। খুঁজে পাওয়ার তরিকাটিও তাই ভিন্ন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে শেষ বয়সে এসে আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করার সুযোগ পেলেন আলী হায়দার (৮৫)। প্রায় ১৫ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়েছিলেন তিনি। সেই থেকে ঘর ছাড়া। প্রায় ৬ যুগ পর গত সোমবার মামা-ভাগ্নের মিলন হয় মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার চান্দগ্রামে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৭০ বছর আগে আলী হায়দার এসেছিলেন বড়লেখা উপজেলার চান্দগ্রাম এলাকায়। তখন তার বয়স ছিল ১৫ বছর। চান্দগ্রাম বাজারটিও এখনকার মতো ছিল না। এখানে আসার পর এলাকার অনেকের বাড়িতে গরু-মহিষ চড়িয়ে জীবিকা চালাতেন। বছর তিনেক আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তাই কাজ করতে পারতেন না। খোলা জায়গায় পড়ে থাকতেন তিনি। বয়সের ভারে স্পষ্ট করে কথা বলতেও পারেন না। এ অবস্থায় মধ্য চান্দগ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী সোনা মিয়া চান্দগ্রাম বাজারের একটি খালি দোকানকোঠায় তার থাকার ব্যবস্থা করেন। নিজের বাড়ি থেকে পাঠাতেন খাবার।

সম্প্রতি সোনা মিয়ার ছেলে আখতার আহমদ, আলী হায়দারকে নিয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবিসহ একটি স্ট্যাটাস দেন। ওই স্ট্যাটাসের সূত্র ধরেই আলী হায়দারের আত্মীয়-স্বজনের সন্ধান পাওয়া যায়। গত সোমবার বড়লেখার চান্দগ্রামে আসেন আলী হায়দারের ছোট বোন সাফিয়া বেগমের ছেলে আব্দুর রহিম। মামা-ভাগ্নের মিলনে তখন এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমরাতো ধরে নিয়েছিলাম মামা আর নেই। আখতারের পরিবার ও ফেসবুকের কল্যাণে তাকে ফিরে পেয়েছি।’

কেন কিশোর আলী হায়দারের হারিয়ে যাওয়া? আর কেনই বা এত বছর নিরুদ্দেশ ছিলেন তিনি। স্মৃতি হাতড়ে এ বিষয়ে প্রতিবেদককে বলেন আলী হায়দার।

জানান, নোয়াখালী জেলার চাটখিলের কুলছড়ি গ্রামের ইয়াকুব আলীর প্রথম স্ত্রীর দ্বিতীয় পুত্র হচ্ছেন আলী হায়দার। মা মারা গেলে বাবা আবার বিয়ে করেন। সৎ মায়ের সংসারে প্রতিনিয়ত চলতো নির্যাতন। নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আলী হায়দার ও তার বড় ভাই নাদেরুজ্জামান বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। আলী হায়দার চলে যান ভারতে। বড় ভাই নাদেরুজ্জামানের আর খোঁজ মিলেনি। দুই ভাই চলে যাওয়ার পর একমাত্র ছোট বোন সাফিয়া বেগমও মামার বাড়ি চলে যান। প্রায় চার মাস ভারতে ঘোরাঘুরি করার পর মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার চান্দগ্রাম এলাকায় চলে আসেন আলী হায়দার। এভাবেই সেখানে বেড়ে ওঠেন তিনি।

এদিকে সোনা মিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে দেওয়া হয়েছে আলী হায়দারকে। গত সোমবার রাতেই মামা-ভাগ্নে নোয়াখালীর উদ্দেশে চলে যান। সেখানে পৌঁছার পর ছোট বোন সাফিয়া ভাইকে ফিরে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় সেখানে। অনেকেই আলী হায়দারকে দেখতে বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন।



মন্তব্য চালু নেই