ফেসবুকের ‘বউদি/ভাবি’দের প্রোফাইলের আড়ালে রয়েছে অদ্ভূত রহস্য!

ফেসবুকে এই জাতীয় প্রোফাইল কমবেশি সকলেরই নজরে এসেছে। প্রোফাইল পিক অথবা কভার পিকে, কিংবা দু’টিতেই অবধারিত ভাবে দেখা যাবে এক খোলামেলা মহিলাকে— একটু ভারি চেহারা, আলুথালু শাড়ি, আধখোলা ব্লাউজ, দেখা যাচ্ছে পিঠ-পেট কিংবা বুকের অনেকখানি। খবর এবেলার।

সব সময়ে ডিপি কিংবা এবং প্রোফাইল পিক-এ যে একই মহিলার ছবি থাকবে— এমন কোনও বাধ্যতা নেই। যার প্রোফাইল, তার নামে শিরোনামের বদলে ‘বউদি’ কিংবা ‘আন্টি’ অথবা ‘ভাবি’ থাকার সম্ভাবনা প্রবল। উপাধির মতো নামের আগে থাকতে পারে ‘হট’, কিংবা ‘সেক্সি’ও। সবই ঠিক আছে, কিন্তু প্রশ্ন হল, এই প্রোফাইল কারা চালান, কী উদ্দেশ্যেই বা চালানো হয় এই জাতীয় প্রোফাইল?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে প্রথমেই কৌতূহল তৈরি হয়, প্রোফাইল পিকগুলি কি অরিজিনাল? বলা বাহুল্য, তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ইন্টারনেটে গুগল ইমেজ-এ গিয়ে ‘সেক্সি’ কিংবা ‘হট’ সহযোগে ‘ভাবি’ কিংবা ‘ইন্ডিয়ান বা দেশি হাউসওয়াইফ’ দিয়ে সার্চ মারলেই এই ধরনের অজস্র ছবি ভেসে উঠবে মোবাইল কিংবা কম্পিউটারের স্ক্রিনে। তা থেকে পছন্দ মতো ছবি বেছে নিলেই কাজ শেষ।

কিন্তু আদৌ এই জাতীয় প্রোফাইল তৈরি করা হয় কেন? ওয়াকিবহাল মহল জানাচ্ছে, নানা উদ্দেশ্য দিয়ে এই জাতীয় ফেক প্রোফাইল তৈরি হয়। অনেক প্রোফাইলেই কর্মস্থলের জায়গায় লেখা থাকে ‘ওয়ার্কস অ্যাট সেক্স ওয়ার্কার’ কিংবা ‘ওয়ার্কস অ্যাট এসকর্ট সার্ভিস’। এই ভাবে প্রকাশ্যে নিজের ‘গোপনীয়’ কাজের কথা যিনি জানিয়ে দেন ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায়, তার উদ্দেশ্য যে খুব সৎ নয়, তা বলাই বাহুল্য।

বহু ক্ষেত্রেই অনৈতিক ক্রিয়াকলাপের টোপ দেওয়া হয় মূলত মানুষের টাকা লুঠ করার উদ্দেশ্যে। এদের সঙ্গে যারা ফেসবুকে আলাপ জমান, দিন কয়েকের মধ্যেই তাদের ইনবক্সে এসে পৌঁছায় আনন্দ-ফূর্তিতে সঙ্গী হওয়ার দুষ্টুমিভরা আহ্বান। এর পর আসে আসল কথা। ‘আমার সঙ্গে আনন্দের জোয়ারে ভেসে যেতে চাইলে অমুক অ্যাকাউন্ট নম্বরে পাঠাও তমুক অঙ্কের টাকা’— এই মর্মে আসে বার্তা। সেই ফাঁদে যারা পা দেন, নেট ব্যাঙ্কিং কিংবা অন্য কোনও মাধ্যমের পাঠিয়ে দেন টাকা, তারা যে প্রতিশ্রুত আনন্দটি কোনও দিনই পান না, তা বলাই বাহুল্য।

এই কায়দায় যারা প্রতারণা করছেন, সেই ব্যক্তিটি মহিলা কিংবা পুরুষ— যে কেউ হতে পারেন। কিন্তু যিনিই থাকুন এই সমস্ত প্রোফাইলের নেপথ্যে, তার চাক্ষুষ দেখা তার কোনও ফেসবুক বন্ধু কখনও পেয়েছেন— এমনটা শোনা যায়নি।

অন্য গুরুতর উদ্দেশ্যও থাকে এই ধরনের ভুয়ো প্রোফাইলের পিছনে। কী সেই উদ্দেশ্য, তা বোঝানোর জন্য বছর দু’য়েক আগেকার একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করাই যথেষ্ট। বিহার থেকে তিন জন পুরুষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক শারীরিক ব্যবসা চালানোর অভিযোগ ছিল।

পুলিশ তদন্ত করে জানতে পেরেছিল, মেয়েদের দিয়ে এই ব্যবসা তারা চালাত মূলত ফেসবুকের মাধ্যমে। ‘সবিতা ভাবি’-র নামে খোলা হয়েছিল প্রোফাইল। ডিপির জায়গায় ছিল এক মহিলার রগরগে ছবি। সেই ছবিতে আকৃষ্ট হয়ে আগ্রহী গ্রাহকরা যোগাযোগ করতেন প্রোফাইলের ইনবক্সে। তার পরে নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে যেত মেয়েরা।

ফেসবুক বা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই জাতীয় ব্যবসা চালানোর সব চেয়ে বড় সুবিধা এটাই যে, এতে নিজের পরিচয় গোপন রাখা যায়, এবং পুলিশও চট করে জানতে পারে না যে, প্রোফাইলের নেপথ্যে কে বা কারা রয়েছে। তা ছাড়া দূরদূরান্তের গ্রাহকদের সঙ্গেও রাখা যায় যোগাযোগ। ভারতের বিহারের গ্রেফতার হওয়া ওই তিন জন যুবক যেমন জানিয়েছিল যে, বিহার, উত্তরপ্রদেশ নেপালেও যেত তাদের মেয়েরা। ফলে ব্যবসাও ফুলেফেঁপে উঠতে থাকে।

আর এই সমস্ত কোনও উদ্দেশ্য না থাকলে নিছক মজা লোটার জন্যও কেউ খুলতে পারেন এ হেন প্রোফাইল। ‘বউদি/ভাবী’ নামাঙ্কিত প্রোফাইল হয়ে উঠতে পারে কারোর চরিত্রবিচারের উপায়ও। যাদবপুরের ঈশানী যেমন এমন একটি ফেক প্রোফাইল বানিয়ে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টে পাঠিয়ে দেন নিজের বয়ফ্রেন্ডকে। প্রেমিকটি অ্যাক্সেপ্ট করেন সেই রিকোয়েস্ট।

ঈশানী পরিকল্পিত ভাবে ভুয়ো প্রোফাইলের আড়ালে থেকে চালিয়ে যান বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে আলাপও। সেই ছেলেটিও বেশ আগ্রহের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যায় ‘রিতা বউদি’ ওরফে ঈশানীর সঙ্গে। কিন্তু দিন কয়েক পরেই যখন ঈশানীর দেওয়া মন্দারমণি যাওয়ার প্রস্তাব অ্যাক্সেপ্ট করে নেন প্রেমিকটি, ব্যস, ঈশানী বুঝে যান তার প্রেমিকটির চরিত্র কেমন। সপ্তাহখানেকের মধ্যে ব্রেকআপ করেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই