ফেসবুকে ওসিকে ফাঁসানোর চেষ্টা, অতঃপর গুলিবিদ্ধ যুবতী

বহু পুরুষের উষ্ণ সান্নিধ্যের আকাঙ্খার ফলেই কি গুলি খেতে হল কলকাতার বেলেঘাটার যুবতীকে? মঙ্গলবার প্রেমিকের আগ্নেয়াস্ত্র থেকে ছুটে আসা গুলিতে জখম ঝুমকি দাস এখন এনআরএস-এ চিকিৎসাধীন৷ গণপিটুনিতে আহত ও গ্রেফতার হওয়া প্রেমিক দিবাকর দে একই হাসপাতালে৷

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, বহু পুরুষের সঙ্গ পছন্দ করতেন ঝুমকি৷ প্রেমিক প্রবল সন্দেহ করতেন তাকে৷ সেই থেকেই অশান্তি৷ বাগে আনতে না পেরে রায়গঞ্জ থেকে কলকাতায় এসে প্রেমিকাকে খুনের চেষ্টা করেন দিবাকর৷ ঝুমকির ফেসবুক প্রোফাইলে লেখা, “কনস্টেবল অসীম আমাকে হোটেলে নিয়ে গিয়ে নোংরামি করেছে৷ বেলেঘাটা থানার ওসি দেবজিৎ চ্যাটার্জি ব্যবস্থা নেয়নি৷ ওসি আমাকে হোটেলে নিয়ে গিয়ে নোংরামি করেছে৷ দিবাকর তাকে উচিত শিক্ষা দিয়েছে৷” বেলেঘাটা থানার পুলিশ ফেসবুকের পোস্ট নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে৷

বুধবার সংবাদমাধ্যমে ঝুমকি দাবি করেছে, তার ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করেছিল দিবাকর৷ ওই যুবকই নিজের স্বার্থে পুলিশের বিরুদ্ধে ফেসবুকে মন্তব্য করেছে৷ হাসপাতালের বেড থেকে একইসঙ্গে বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন গুলিবিদ্ধ যুবতী৷ তিনি জানিয়েছেন, “বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত মার্চ মাসে দিবাকর আমাকে রায়গঞ্জে নিয়ে গিয়েছিল৷ নিজের বাড়িতে না রেখে আমাকে একটি ভাড়া ঘরে রাখে৷ দিনের পর দিন (প্রচার অযোগ্য শব্দ) করে৷ মারধরও করত৷ বাধ্য হয়ে আমি রায়গঞ্জ থেকে কলকাতায় পালিয়ে আসি৷” মঙ্গলবারের ঘটনা প্রসঙ্গে যুবতী জানিয়েছেন, “আমি বারান্দায় বসে খাচ্ছিলাম৷ হঠাৎ দেখি গেট খুলে দিবাকর আসছে৷ আমি ভয় পেয়ে পালাতে যাই৷ দিবাকর আমাকে পিছন থেকে গুলি করে৷”

এছাড়াও পুলিশ জানতে পেরেছে, ঝুমকির মা তার স্বামীর বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ এনেছিলেন৷ এখন ঝুমকির বাবা আলাদা থাকেন৷ ঝুমকিও তার স্বামীর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনে ঘর ছাড়েন৷ বেলেঘাটায় মা, ভাই ও মেয়েকে নিয়ে থাকেন তিনি৷ স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে মায়ের কাছে ফিরে আসার পর অজয় রায় নামে স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক হয়৷ কিছুদিন পরে ওই যুবকের বিরুদ্ধেও শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেন যুবতী৷ এরপর আলাপ হয় রায়গঞ্জের যুবক দিবাকরের সঙ্গে৷ দিবাকর নিজেকে ডাক্তার বলে পরিচয় দেন৷ তার সঙ্গে রায়গঞ্জে গিয়ে কিছুদিন ছিলেন ঝুমকি৷ ফিরে আসার কিছুদিন পর গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে৷

দিবাকর পুলিশি নজরদারিতে রয়েছে৷ ঝুমকির ভাই দিবাকরের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করছে৷ পুলিশ দিবাকরের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে৷ ইতিমধ্যেই তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা রুজু হয়েছে৷ গুলিবিদ্ধ যুবতী পুলিশের নামে অভিযোগের পাশাপাশি অভিনন্দনও জানিয়েছেন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে৷ ফেসবুকে ‘ঝুমকি দাস দে’ নামে যে প্রোফাইলটি আছে তা পরীক্ষা করছে লালবাজার৷ ওই প্রোফাইলে ১০ অক্টোবর পোস্ট করা হয়েছে, “লেডি সাব ইন্সপেক্টর বর্ণা ঘোষালকে সবাই ধন্যবাদ জানান৷ পাঁচমাস আগে আমাকে পিস্তল দেখিয়ে (প্রচার অযোগ্য শব্দ) করা হয়েছিল৷ সাব ইন্সপেক্টর বর্ণা ঘোষাল আমাকে সাহায্য করেছেন৷ ওকে ধন্যবাদ৷”

তদন্তকারী অফিসাররা খোঁজ নিচ্ছেন, এই প্রোফাইল কে চালাতেন৷ কেন পুলিশের নামে অভিযোগ করা হল? প্রাথমিকভাবে অনুমান, দিবাকরই ঝুমকির বিরু‌দ্ধে পুলিশকে খেপিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে ওই পোস্টগুলি করেছিল৷ পোস্ট পড়ে অনেকে রসালো মন্তব্য করেছেন৷ যাঁরা মন্তব্য করেছেন তাঁরা ঝুমকির পরিচিত কি না তার খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ৷

জানা গিয়েছে, দিবাকর নিজেকে সাবেক সেনাকর্মী হিসাবে পরিচয় দিত৷ নিজেকে ডাক্তার বলেও দাবি করত৷ মহিলাঘটিত কারণে তাকে সেনা বাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়৷ উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের বাসিন্দা ওই যুবকের কাছ থেকে একটি ৯ এমএম পিস্তল উদ্ধার হয়েছে৷ পুলিশ জানিয়েছে, একটি ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটের মাধ্যমে বেলেঘাটার বাসিন্দা ঝুমকির সঙ্গে আলাপ হয় দিবাকরের৷ তার বাড়ি রায়গঞ্জ শহর থেকে কিছুটা দূরে সুভাষগঞ্জে৷ পাঁচ বছর আগে ঝুমকির বিয়ে হয়েছিল৷ তার একটি মেয়ে আছে৷ পারিবারিক অশান্তির জেরে ঝুমকির সঙ্গে তার স্বামীর ডিভোর্সের মামলা শুরু হয়৷ এর মধ্যেই দিবাকর ও ঝুমকির আলাপ হয়৷ দিবাকর নিজেকে হোমিওপ্যাথির চিকিত্সক বলে পরিচয় দেয়৷ বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করার জন্য রায়গঞ্জ থেকে মাঝেমধ্যেই কলকাতায় আসতেন ওই যুবক৷ দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতাও হয়৷

ঝুমকির পরিবারের লোকেদের সঙ্গেও আলাপ করে দিবাকর৷ দু’জনের সম্পর্ক এগিয়ে যায়৷ এমনকী, দিবাকর ঝুমকিকে সুভাষগঞ্জেও নিয়ে যায়৷ কিন্তু কয়েকটি বিষয়কে ঘিরে দিবাকরের সঙ্গে গোলমাল বাধে ঝুমকির৷ এমনকী, দিবাকরের বিরুদ্ধে বেলেঘাটা থানায় অভিযোগও দায়ের হয়৷ পুলিশের একটি টিম রায়গঞ্জে গিয়ে তদন্তও চালায়৷ এর পর থেকে ঝুমকি ওই যুবককে এড়িয়ে চলতে থাকেন৷ অভিযোগ, দিবাকর মাঝেমধ্যেই তাকে প্রাণে মারার হুমকি দিত৷ সংবাদ প্রতিদিন।



মন্তব্য চালু নেই