বই বিতরণ হয়নি, ভর্তিতে টাকা নেয়ার অভিযোগ

সারাদেশের মতো আনন্দঘন পরিবেশে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে বই বিতরণ উৎসব পালন করা হলেও নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার শরকুতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বই বিতরণ উৎসব হয়নি। এছাড়া বই বিতরণের দিনে বাগাতিপাড়া উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তিতে টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার সকালে নলডাঙ্গা উপজেলার শরকুতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নতুন বছরে নতুন বই পাওয়ার আশায় সমবেত হলেও প্রধান শিক্ষকসহ স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতির সদিচ্ছার অভাবে বই বিতরণ বন্ধ ছিল। ফলে শিক্ষার্থীদের বই না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পরে জনরোষ ঠেকাতে প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারী দায়সারাভাবে দুপুর দেড়টার সময় মাত্র ৪ জন শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দিয়ে রক্ষা পান।

এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, পার্শ্ববর্তী সব স্কুলে বই বিতরণ করা হলেও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তায়েজ উদ্দিন বই বিতরণের দিন স্কুলে না গিয়ে পারিবারিক কাজে ইটভাটায় ব্যস্ত থাকায় এবং কমিটির সভাপতির অনুপস্থিতির কারণে ওই স্কুলে বই বিতরণ করেননি।

শিক্ষার্থী অভিভাবক সাইফুল ইসলাম ও আকরাম হোসেন জানান, সরকার সারাদেশে বিনামূল্যে বই বিতরণ করলেও শরকুতিয়া স্কুলে প্রতি শিক্ষার্থীদের কাছে ৫০ টাকা করে চাওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা ওই টাকা না দেয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ বই বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ রাখে। তবে জনরোষ থেকে বাঁচতে মাত্র ৪ জনকে বই দিয়েছেন। তবে এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন এবং ঘটনার সত্যতা নেই বলে দাবি করেছেন প্রধান শিক্ষক তায়েজ উদ্দিন।

তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের বই নিতে আসতে বলা হয়েছিল। কিন্তু যথাসময়ে তারা স্কুলে না আসায় বিলম্বে হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে দেয়া হবে। এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মুসলেম মৃধার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মগরেব আলী জানান, ঘটনার সত্যতা পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জাহান জানান, এ ঘটনায় এখনও কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অপরদিকে, দেশব্যাপী বিনামূল্যে বই বিতরণের দিনে বাগাতিপাড়া উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তিতে টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার উপজেলার নূরপুর মালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়বাঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারি নিয়ম বহির্ভুতভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে নিয়ে বই বিতরণ করা হয়েছে। এমনকি টাকা দিতে না পারায় ভর্তি নেননি বলেও অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীর অভিভাবক।

উপজেলার চক হরিরামপুর গ্রামের শিক্ষার্থী সুমাইয়ার অভিভাবক বোরহান জানান, টাকা না দেয়ায় তার মেয়েকে ভর্তি না নিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও একই গ্রামের মেহেদী হাসান ও শান্তাসহ কয়েকজনের বেলাতেও টাকা না নিয়ে ভর্তি করেননি বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে বড়বাঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পিজে নাজমা সুলতানা ইভা ও নূরপুর মালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদা সুলতানা এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ফাইজুল ইসলাম জানান, সরকারিভাবে ভর্তি বাবদ নতুন বা পুরাতন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা নেয়ার কোনো বিধান নেই। কোনো বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী ভর্তি বাবদ টাকা গ্রহণ করলে তার দায়ভার তাকে গ্রহণ করতে হবে।

এছাড়া সারাদেশের মতো আনন্দঘন পরিবেশে নাটোর জেলার অন্যান্য সমস্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বই বিতরণের মধ্যে দিয়ে বর্ণিল বই উৎসব পালিত হয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলার পণ্ডিতগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল। জেলা প্রশাসক মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত বই বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাড. সাজেদুর রহমান খান, পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জী, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোকছেদুল ইসলাম প্রমুখ।

নাটোর জেলায় ২০১৬ শিক্ষা বছরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ৪ লাখ ৩৪ হাজার শিক্ষার্থীর হাতে প্রায় সাড়ে ৩৮ লাখ নতুন পাঠ্যবই বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ৭টি উপজেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে জেলার মোট ২ হাজার ১৭৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব বই বিতরণ করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই