বউ ভাগাভাগি ! সভ্য সমাজে ভদ্রতার আড়ালে কিছু ক্ষত

এ যেন আধুনিক দৌপদ্রির পাঁচ বরের আখ্যান। মহাভারতের দৌপদির ছিল পাঁচ স্বামী। কিন্তু সেতো উপাখ্যানের কথা, ধমের্র কথা। কিন্তু তা যদি হয় বাস্তবে তাহলে কেমন হয়?। প্রশ্ন উঠতেই পারে এও কি সম্ভব। হ্যাঁ, সম্ভব। সব সম্ভবের এই পৃথিবীতে একবিংশ শতাব্দীর এই সময়েও এই ঘটনা হতে পারে। যার জলজ্যান্ত প্রমাণ উত্তর ভারতের ভাগপাতি গ্রাম। আজ থেকে এক বছর আগে মুন্নি বধূ হয়ে এসেছিলেন উত্তর ভারতের আখ চাষ সমৃদ্ধ এক অঞ্চলে।

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তার। এক স্বামীর ঘর করতে এসে তাকে করতে হয় তিন স্বামীর ঘর। জোরপূর্বক তার স্বামীর ভাইদের সঙ্গেও তাকে যৌন সম্পর্ক করতে হয়েছে। কারণ তার স্বামীর ভাইরা সন্তান উৎপাদন করার জন্য স্ত্রী খুঁজে পাচ্ছিল না। হলুদ শাড়ি পরিহিত ৪০ বছর বয়স্ক মুন্নি বলেন, ‘আমার স্বামী এবং তার বাবা-মা আমাকে বলেছিল আমি যেন তার ভাইদের সঙ্গেও স্ত্রী হিসেবেই থাকি।’ আর এই ঘটনা ভারতের উত্তর প্রদেশের ভাগপাত জেলায়। তিনি আরও জানান, ‘দিন নেই, রাত্রি নেই যখন তখন তারা আমাকে নিয়ে যেতো। আর আমি বাধা দিলেই আমাকে বেধড়ক পেটানো হতো। মাঝেমধ্যে আমাকে ঘর থেকে বের করে দিতো তারা। আর ভয় দেখাতো কেরোসিন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার।’ এই মুন্নিই একসময় কোনাক্রমে পালিয়ে এসে বাঁচেন। মুন্নির নিজের তিন সন্তান। আর এই সন্তানদের বাবা তার স্বামীসহ দেবররা। এই দৃশ্য শুধুমাত্র একটি ঘরে নয়। ভাতপাত জেলার অনেক ঘরেই এই দৃশ্য। এতোকিছুর পরেও কোনো নারীই পুলিশের কাছে যায়নি এই নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে। কারণ ওই সমপ্রদায়ে নারীদের জন্য বাড়ির বাইরে যাওয়া অপরাধ। আর তাই এই অঞ্চলের অনেক বাড়িতেই নীরবে নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে অনেক নারীকে। চিলড্রেনস চ্যারিটি প্লান ইন্ডিয়ার নির্বাহী পরিচালক ভাগ্যেশ্বরী দেঙ্গাল বলেন, ‘কিছু সমপ্রদায়ের মধ্যে আমরা এই ভয়াবহ সমস্যা চিহ্নিত করেছি। এটাকে আমরা এক প্রকার দুর্যোগের চিহ্ন হিসেবেই দেখছি। আর এই পরিস্থিতিতে নারীরা খুব ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অপহরণ আর ধর্ষণের শিকার হচ্ছে তারা প্রতিনিয়ত।’ দুই ঘণ্টার পথ পেরুলেই নয়াদিলি্ল। যেখানে নারীরা জিনস প্যান্ট পরে হাঁটাচলা থেকে শুরু করে প্রয়োজনবোধে গাড়িও চালাচ্ছে। কিন্তু ভাগপাতের নারীরা ওই কাঁদামাটির দেয়ালই ডিঙ্গোতে পারছে না। মনে হয় যেন তারা ভিন্ন দুনিয়ার মানুষ।

ভারতের ২০১১ জরিপ মতে, ভাগপাতের প্রতি এক হাজার পুরুষের জন্য নারী রয়েছে ৮৫৮ জন। ভাগপাতের ৭৫ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কনস্টেবল শ্রীচাঁদ বলেন, প্রতিটি গ্রামেই পাঁচ থেকে ছয়জন পুরুষ পাওয়া যাবে যারা তাদের জীবন সঙ্গীনি পায়নি। কিছু কিছু পরিবারে আবার তিন থেকে চারজন পুরুষ অবিবাহিতই থেকে যায়। এটা খুবই মারাত্মক সমস্যা।’ সবাই এবিষয় নিয়ে কানাঘুষো করে। কেউই সরাসরি কিছু বলে না। কিন্তু আমরা জানি আসলে কি ঘটছে এখানে।

এখানকার কিছু পরিবার দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্ত্রী কিনে আনে বলেও তিনি জানান। ঝাড়খন্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে খুব সস্তায় কিনে নিয়ে আসা হয় এই নারীদের। মাত্র পনেরো হাজার রুপিতে অভাবী পরিবারগুলো তাদের মেয়েদের বিক্রি করে দেয়। ২৫ বছর বয়সী সবিতা সিং তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘প্রথমে এটা মেনে নিতে আমার খুব কষ্ট হয়েছিল। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি প্রথম। এখন আমি এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবে আমি স্বাধীনতা চাই।’



মন্তব্য চালু নেই