বদলিতে কড়াকড়ি আনতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

সরকারি কলেজ শিক্ষকদের বদলিতে কড়াকড়ি আনতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরফলে মাসের যেকোনো সময় আর শিক্ষকরা বদলি হতেও পারবেন না। এমনকী আবেদনও করতে পারবেন না। বদলি হতে হলে মাসের শুরুতে নির্দিষ্ট কয়েকদিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। উল্লেখ্য, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক পদের সরকারি কলেজ শিক্ষকদের বদলি করে মন্ত্রণালয়। তবে এখন প্রভাষক এবং সহকারি অধ্যাপক পদমর্যাদার শিক্ষকদেরও বদলি করছে মন্ত্রণালয়।

বর্তমানে মাসের যেকোনো সময় কলেজ শিক্ষকরা বদলি হতে পারেন। বদলি হওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদনও জমা দিতে পারেন। আর মন্ত্রণালয়ও বদলির আবেদনের ভিত্তিতে শিক্ষকদের পছন্দমত জায়গায় বদলি করে থাকে। কিন্তু নতুন পদ্ধতি কার্যকরের পর বদলির জন্য হাতে হাতে আবেদন গ্রহন করা হবে না। অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি ই-মেইল ঠিকানা দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট ওই ই-মেইল ঠিকানায়ই শিক্ষকরা বদলির আবেদন করতে পারবেন।

জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের কলেজ শাখার যুগ্ম-সচিব মোল্লা জালাল বলেন, আগামী জানুয়ারি মাস থেকেই নতুন পদ্ধতিতে কলেজ শিক্ষকদের বদলির কার্যক্রম শুরু করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রস্তুত হচ্ছে। নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষকদেরকে অনলাইনে বদলির আবেদন করতে হবে প্রতি মাসের ১ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে। এরপর তিনটি কমিটির মাধ্যমে বদলির আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে। এসব কর্মকান্ড শেষ করার পর বদলির নথিতে সই করবেন শিক্ষা সচিব এবং মন্ত্রী।

যদি কোনো শিক্ষক প্রতি মাসের ৫ তারিখের পরে বদলির আবেদন করেন সেক্ষেত্রে কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই মাসে আর আবেদন নেওয়া হবে না। পরের মাসের ১ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে আবেদন করতে হবে।

নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষকদের বদলি কার্যক্রম শেষ করার বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে যে পদ্ধতিতে শিক্ষকদের বদলি করা হচ্ছে তা কোনো সিষ্টেমের মধ্যেই পড়ে না। সারা মাস-সারা বছর জুড়ে শিক্ষকদের বদলি করতে হয়। এতে মন্ত্রণালয়ের মূখ্য কাজ হয়ে উঠছে শিক্ষকদের বদলি। অন্য কাজ করাই যাচ্ছে না। মূলত তা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা হবে। এ সংক্রান্ত নির্দেশিকা শীঘ্রই জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে তিনি জানান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নতুন পদ্ধতিতে কলেজ শিক্ষকদের বদলির জন্য তিনটি কমিটি গঠন করা হবে। প্রথম ধাপে ২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি হবে। সেটির প্রধান থাকবেন মন্ত্রণালয়ের কলেজ শাখার সংশ্লিষ্ট উপ-সচিব। এরপরের কমিটি হবে তিন সদস্য বিশিষ্ট। এটির প্রধান থাকবেন যুগ্ম-সচিব। সর্বশেষ কমিটি হবে ৪ সদস্য বিশিষ্ট এবং এই কমিটির প্রধান থাকবেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ)। ৪ সদস্যের কমিটিতে প্রথমবারের মত মাধ্যমিক শাখার কোনো কর্মকর্তাকে রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, এরআগে কলেজ শিক্ষক বদলির ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক শাখার কোনো কর্মকর্তা থাকতে পারতেন না।

বদলির জন্য গঠিত প্রথম কমিটি আবেদনকে যাচাই-বাছাই করে দ্বিতীয় কমিটির কাছে পাঠাবে। দ্বিতীয় কমিটি প্রাপ্ত আবেদনগুলোকে সমন্বয় করে একটি কর্মপরিকল্পনা করে অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাবে। সেই কমিটি নির্ধারণ করবে কারা বদলি হবে আর কারা হতে পারবে না। সেইমত বদলির নথি শিক্ষা সচিবের কাছে পাঠানো হবে। শিক্ষা সচিব শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পাঠাবেন। মন্ত্রী সই করলেই বদলির চূড়ান্ত অনুমোদন হবে।

কলেজ শিক্ষক বদলির ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (প্রশাসন ও অর্থ) কে প্রধান করে আগেও কমিটি ছিল। কিন্তু এ কমিটি অনেকটা অশার্যকর ছিল। এরকম পরিস্থিতিতে এখন নতুন করে আরও দুটো কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তাহলে আগের কমিটির কী হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে যুগ্ম-সচিব মোল্লা জালাল বলেন, না ওই কমিটিকেই ঢেলে সাজানো হচ্ছে। সত্যি কথা বলতে কি, বিভিন্ন কারণে ওই কমিটি কাজ করতে পারেনি। তাহলে এখন কিভাবে পারবে-প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পারতেই হবে। কারণ এটি মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত সিদ্ধান্ত।

কমিটিতে মাধ্যমিক শাখার কর্মকর্তাকে সংযুক্ত করার বিষয়ে তিনি বলেন, দেশে ১০টি শিক্ষাবোর্ড রয়েছে। বোর্ডগুলোর প্রথম শ্রেণির পদে সরকারি কলেজ শিক্ষকদেরকে প্রেষণে পদায়ন করা হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে- বোর্ডগুলো চলে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক শাখার অধীনে। আর শিক্ষক কর্মকর্তা পদায়ন করে কলেজ শাখা। এই পদায়ন নিয়ে দুই শাখার মধ্যে মাঝে মাঝে সমন্বয়হীনতা দেখা যায়। এতে বোর্ডে কাজেরও কিছুটা ক্ষতি হয়। এটি যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে সেজন্য অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে থাকা কমিটিতে মাধ্যমিক শাখার কর্মকর্তাকে সংযুক্ত করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই