বন্ধুর সঙ্গে বোনের প্রেম, পরিণতিতে একটি নৃশংস খুন

সহপাঠী থেকে প্রাণের বন্ধু। সেই সূত্রে বাড়িতে নিয়মিত আসা যাওয়ার ফাঁকে বন্ধুর বোনের সঙ্গে জমে ওঠে প্রেম। প্রথমে কেউ টের পায়নি। কিন্তু বন্ধুই যখন টের পেয়ে গেল তখনি বাঁধলো গোল। বন্ধুর সঙ্গে বোনের প্রেম মেনে নেয়াটা কঠিন হয়ে গেল তার। এই নিয়ে মনোমালিন্য। শেষাবধি প্রেমই বিজয়ী হওয়ার অপ্রতিরোধ্য বাসনা নিয়ে রুদ্র মূর্তি ধারণ করলো। ঠান্ডা মাথায় ঘটে গেল একটি নৃশংস খুন!

ঘটনাটি ঠাকুরগাঁওয়ের। নোভা হোসেন সেলিম নামে এক তরুণ গত জানুয়ারিতে নিখোঁজ হোন। অবশেষে ‍বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিলেন বন্ধু শামীম হোসেন।

স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আদালতের নির্দেশে লাশ উদ্ধারের জন্য ঠাকুরগাঁও টাঙ্গন ব্যারেজে অভিযান চালায় রংপুর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ও পুলিশ। তবে প্রায় ২ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়েও লাশ পাওয়া যায়নি।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁও সালন্দর মাদরাসা পাড়া এলাকার মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে নোভা হোসেন সেলিম বাড়ি থেকে নিখোঁজ হোন। সেলিমের মা সেলিনা বেগম তিন জনকে আসামি করে ঠাকুরগাঁও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। পরে পুলিশ শামিম ও মির্জাত আলী নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করলে আসামিরা জানান, সেলিমকে কুপিয়ে হত্যার পর লাশ বাক্সবন্দি করে টাঙ্গন ব্যারেজ এলাকায় নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে।

পরে ঠাকুরগাঁও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শুকান্তের আদালতে শামীমের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। এ সময় শামীম আদালতে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন এবং বন্ধু নোভা হোসেন সেলিমের হত্যার বর্ণনা দেস।

এ তথ্য জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রাশেদুল ইসলাম।

শামীম হোসেন স্বীকারোক্তিতে বলেছেন, আমি ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার পর সালন্দর মাদরাসা পাড়ায় আমার মামার বাসায় থাকতাম। এ সময় সেলিমের সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। ওই সুবাদে সেলিমের বোনের সাথে সম্পর্ক তৈরি হয়। সেলিম ওই সম্পর্কের কথা জানতে পেরে আমাকে নানাভাবে হুমকি দেয়। একদিন সেলিমকে মামার বাসায় ডেকে নিয়ে আসি। সেলিম তার বোনের বিষয়ে আমাকে সতর্ক থাকতে বললে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আমি সেলিমের গলায় একটি ছুরি ঢুকিয়ে দেই। কিছুক্ষণের মধ্যে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার ‍মৃত্যু হয়। পরে সেলিমের লাশ একটি বাক্সে করে অটোরিকশা যোগে সদর উপজেলা রাজাগাঁও টাঙ্গন ব্যারেজ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাই। সন্ধ্যায় টাঙ্গন ব্যারেজ বাঁধে বাক্সটি ফেলে রেখে পালিয়ে যাই।

সেলিমের মা সেলিনা বেগম বলেন, পরিকল্পিতভাবে শামীম আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে খুন করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার লাশ আমরা পাইনি। আমি এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি চাই।

ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার ফারহাত আহম্মেদ জানান, তদন্ত সাপেক্ষে আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আসামির স্বীকারোক্তি মতে পুলিশ ও ডুবুরি দল অভিযান চালালেও লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।



মন্তব্য চালু নেই