বন্ধ রাখা বাসের তালিকা করছে বিআরটিএ

সিটি সার্ভিস বন্ধ করে দেয়ার ‘ক্ষোভ’ থেকে যেসব পরিবহন মালিক বাস বন্ধ রাখার কৌশল নিয়েছেন, তাদের তালিকা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান। বলেছেন, এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পকেট কাটার সিটিং সার্ভিস বন্ধে দুই দিন ধরে অভিযান চলছে রাজধানীতে। আর এই অবস্থায় পরিবহন মালিকরা যেসব কৌশল নিয়েছে তার একটি হলো বাস কমিয়ে দেয়া। এ নিয়ে দুই দিন ধরেই কথা হচ্ছে গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

অবশ্য এই বাস বন্ধ রাখা একদিক থেকে শাপেবর হয়েছে যাত্রীদের জন্য। সড়কে যানবাহনের চাপ কমেছে আর এ কারণে আগের চেয়ে অপেক্ষাকৃত তাড়াতাড়ি গন্তব্যে যেতে পারছেন।

অভিযানের দ্বিতীয় দিন রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিদর্শনকালে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমানও। তিনি বলেন, ‘অভিযান চলছে। যারা রাস্তায় বাস নামাবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা বন্ধ রাখা বাসের তালিকা করছি। জরিমানার ভয়ে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে বাস চলাচল বন্ধ রাখলে ওই বাসের রুট পারমিট বাতিল করা হবে।’

সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, প্রেসক্লাব, শাহবাগ, ফার্মগেট, মিরপুর, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সামনে, মহাখালী ও আমিনবাজারে যানজটের চিরচেনা দৃশ্য নেই।

তবে যানজট কিছুটা কমলেও যাত্রীরা ভীষণ অসন্তুষ্ট ভাড়া আর বাসে মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই নিয়ে। তারা বলছেন, সিটিং সার্ভিস লোকাল হলেও ভাড়া নেয়া হচ্ছে আগের মতই। বিআরটিএর ভাড়ার তালিকাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বাসে। খোদ বিআরটিসির বাসেও নেই ভাড়ার তালিকা।

যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্থান যাওয়া হেলাল মিয়াকে গুনতে হয়েছে ১০ টাকা। যদিও নেয়ার কথা পাঁচ টাকা। হেলাল বলেন, ‘যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্থানের ভাড়া ১০ টাকা নিচ্ছে। যাত্রীরাও গাড়ি না পেয়ে উঠতে বাধ্য হচ্ছেন। তাহলে লোকাল গাড়ি কোথায়? সবইতো এখন সিটিং সার্ভিসের মতোই ভাড়া নিচ্ছে।’

প্রেসক্লাব থেকে শাহবাগ আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সুজন হালদারেরও একই অভিজ্ঞতা হয়েছে। তিনি বলেন, সর্বনিম্ন ভাড়া পাঁচ টাকা, কিন্তু নিচ্ছে ১০ টাকা। যে রুটে আগে ভাড়া ছিলো ২০ টাকা, এখনও তাই রয়েছে। তাহলে সিটিং আর লোকালের পার্থক্যটা কী থাকল?’।

২০১৬ সালে সর্বশেষ বাসের ভাড়া বাড়ে কিলোমিটার প্রতি দশ পয়সা। এ অনুযায়ী সর্ব নিম্ন ভাড়া নেয়ার কথা মিনিবাসে পাঁচ টাকা আর বড় বাসে সাত টাকা। পরবর্তী প্রতিকিলোমিটারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ১.৬০ টাকা এবং ১.৭০ টাকা।

গুলিস্তান থেকে মিরপুরগামী যাত্রী লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘সিটিং সার্ভিস তুলে দেয়ায় জনগণের ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে। পরিবহন কর্মীরা আগের চেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে পরেছে। বিআরটিএর চার্ট অনুযায়ী এরা ভাড়া নিচ্ছে না, আবার সর্ব নিম্ন ভাড়াও নিচ্ছে না। আগের মতই ভাড়া আদায় করছে, উল্টো গাড়ি বোঝাই করে যাত্রী তুলছে নামাচ্ছে যত্রতত্র।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহও অবশ্য অতিরিক্ত ভাড়ার আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেননি। ঢাকাটাইমকে তিনি বলেন, ‘কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। এটা একদিনে শেষ হবে না। ’

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীর বলেন, ‘গণমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার মুখে সরকার ও মালিক সমিতি সিটিং সার্ভিস বন্ধ করলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় আগের মতই রয়ে গেছে। এতে যাত্রী দুর্ভোগ আরো বেড়েছে।’



মন্তব্য চালু নেই