বন্ধ হয়ে গেল অনিবন্ধিত সিমের আউটগোয়িং

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে বন্ধ হয়ে গেল অনিবন্ধিত সব সিমের আউটগোয়িং কল। সিম পুরোপুরি অকার্যকর না করার সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণে ইনকামিং কল চালু থাকবে আগামী আরো ৩/৪ দিন। অপারেটর ভেদে থাকবে ইনকামিং কলের মেয়াদের ভিন্নতা।

সিম নিবন্ধনের ঘোষণা আসার পর প্রথম সিম বন্ধ হওয়ার আল্টিমেটাম ছিল এপ্রিলের ৩০ তারিখ। নির্দিষ্ট সময় আসার ঠিক ১ দিন আগে ঘোষণা দিয়ে জানানো হয়েছিল, এই মেয়াদ আরো এক মাস বাড়ানো হয়েছে। ৩১ মে সিম পুনঃনিবন্ধনের শেষ সময় ছিল। অনেকে শেষ দিকে আরো সময় বাড়ানো হবে ভেবে সিম পুনঃনিবন্ধন থেকে বিরত থেকেছেন। কিন্তু সিম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এবারের সিদ্ধান্ত যে চূড়ান্ত ছিল তা অনুধাবন করতে পারছেন।

সারাদেশে অনিবন্ধিত সিমের আউটগোয়িং বন্ধ হওয়াতে লোক সমাজে বিভিন্ন মন্তব্য শোনা যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসনে অধ্যয়নরত সাব্বির মোনাব্বির বলেন, ‘আমি আগেই পুনঃনিবন্ধন করে নিয়েছিলাম। ফলে আমার সিমের আউটগোয়িং বন্ধ হয়নি। তবে হলের অনেক বন্ধুর আউটগোয়িং বন্ধ হয়ে গেছে। প্রথমদিকে নেটওয়ার্ক সমস্যা মনে হলেও পরবর্তীতে সিমের আউটগোয়িং বন্ধ হয়েছে বলে বোঝা যায়। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে আমি সাধুবাদ জানাই।’

সিম পুনঃনিবন্ধন করাবেন বলে ঠিক করলেও শেষ মুহূর্তে আর করাতে পারেননি বেসরকারি ফার্মের চাকরিজীবী হুমায়রা সাইদা মৌরি। তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম এবারও আরো সময় বাড়ানো হবে। শেষ মুহূর্তে ইচ্ছে থাকলেও কাজের চাপের জন্য করা হয়ে ওঠেনি। এভাবে গ্রাহক হয়রানি করে সরকার আসলে জনগণকে কতটা নিরাপদ করবে আমি সন্দিহান। এভাবে আউটগোয়িং বন্ধ করে মানুষকে কষ্ট না দিয়ে অন্য উপায় ভাবলেই বরঞ্চ ভালো হতো।’

মিরপুরে বসবাসকারী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘আমরা বাঘ আসবে আসবে বলে সত্যিকারের বাঘ আসার সময়ে আর নিজেকে নিরাপদ করতে পারি না। বাঙালির এই অভ্যাস পরিবর্তন করা উচিত। অতিরিক্ত এক মাস সময় দেয়ার পরও যারা সিম পুনঃনিবন্ধন করাতে পারেন নি তারা আসলে কোনো সময়ই পারতেন না। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীকে এই সাহসী উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি।’

কাকরাইলের ব্যবসায়ী ফাইয়াজ আহমেদ একপ্রকার ক্ষোভ প্রকাশ করেন সরকারের প্রতি। তিনি বলেন, ‘এই যে তিন কোটি গ্রাহকের আউটগোয়িং বন্ধ করা হলো, প্রতি গ্রাহক যদি ২ টাকা করেও প্রতিরাতে ব্যবহার করে সরকারের নিট ক্ষতি ৬ কোটি টাকা। এই রাজস্ব থেকে যে সরকারকে বঞ্চিত করা হচ্ছে এর দ্বায়ভার কে নেবে? আচ্ছা, ধরে নিলাম জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এই পুনঃনিবন্ধন হয়েছে। তাহলে কালকে থেকে দেশে চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ, খুন সব বন্ধ হয়ে যাবে? কারণ আমরা এখন সম্পূর্ণ নিরাপদ। তো কাল যদি পেপার খুলে এসব ঘটনাই আবার দেখি তাহলে নিরাপত্তাটা আসলে কি! আমার বোধগম্য নয়।’

এদিকে বিটিআরসি সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জুলফিকার স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছিল, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ জুন শূন্য ঘণ্টা থেকে অনিবন্ধিত সব সিম বন্ধ হয়ে যাবে। পরবর্তীতে এই সিদ্ধান্ত শুধু আউটগোয়িং কলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়।

রোববার টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানান, বন্ধ হয়ে যাওয়া সিমগুলো নতুন করে কিনতে পারবেন দুই মাসের মধ্যে। আর প্রবাসী বাংলাদেশিরা এ সুযোগ পাবেন ১৮ মাস পর্যন্ত। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গ্রাহকরা যদি তাদের সিম নম্বর কিনে না নেন তবে মোবাইল অপারেটররা অনিবন্ধিত সিম বিক্রি করে দিতে পারবে।

বিটিআরসির নিয়ম অনুযায়ী, বন্ধের ১৫ মাস এবং পরবর্তীতে আরও তিন মাসের মধ্যে নোটিশ দিয়ে ক্রেতা সাড়া না দিলে সিমের মালিকানা বিক্রি করতে পারবে অপারেটরগুলো। এক্ষেত্রেও সে নিয়ম প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ ১ জুন থেকে অনিবন্ধিত সিম ব্যবহার করতে চাইলে নির্ধারিত ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দিয়ে সিম পুনঃনিবন্ধন করতে হবে।



মন্তব্য চালু নেই