বন্ধ হয়ে যাওয়া সিটি বাস সার্ভিস দু’বছরেও চালুর উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ

কল্যাণ কুমার চন্দ, বরিশাল : সময় বাঁচাতে ও স্বল্প খরচে নগরীর অধিকাংশ মধ্যমিত্য ও নি¤œ মধ্যবিত্য মানুষের যাতায়াতের প্রধান উপায় ‘সিটি বাস সার্ভিস’ দু বছর ধরে বন্ধ থাকলেও তা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি বরিশাল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। ফলে সিটি বাস সার্ভিস বন্ধ থাকায় নগরীর সাধারণ মনুষ, বিশেষ করে নগরীর পশ্চিমাংশের বর্ধিত এলাকার বাসিন্দাদের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে যাত্রীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে।
একাধিক সূত্রমতে জানাগেছে,২০০৯ সালে আধুনিক বরিশাল নগরীর আইকন প্রয়াত সাবেক সিটি মেয়র শওকত হোসেন হীরনের আহবানে সাড়া দিয়ে নগরীর কয়েকজন প্রখ্যাত ব্যবসায়ী চালু করেছিলেন সিটি বাস সার্ভিস। এর আগে ২০০৩ সালে বিআরটিসি চালু করেছিল দ্বিতল বাস সার্ভিস। দুই বছর চলার পর বন্ধ হয়ে যায় এই সার্ভিস। অন্যদিকে বেসরকারি সিটি সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায় ২০১৩ সালে। এরপর আর বাস চালুর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে বাসের স্থানটি দখল করে উচ্চ আদালত থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত ইজিবাইকের (অটোরিকশা) কারণে নগরীতে যানজট লেগেই রয়েছে। বিআরটিসির বরিশাল ডিপো সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে নগরীতে দ্বিতল বাস চলাচল শুরু করা হয়। লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে ২০০৫ সালে দ্বিতল বাস প্রত্যাহার করে পাবনায় নিয়ে যাওয়া হয়। একবছর আগে বিআরটিসি বরিশাল ডিপোতে নতুন দুটি দ্বিতল বাস আনা হলেও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ওই বাস দুটির ইজারা চুক্তিতে শিক্ষার্থী পরিবহন করা হচ্ছে। বিআরটিসির ডিপো সূত্রে আরও জানা গেছে, দ্বিতল বাস দিয়ে নগরীর সার্ভিস শুরু করার পর থেকে নথুল্ল¬াবাদ ও রূপাতলী বাস টার্মিনাল কেন্দ্রীক দুটি বাস মালিক সমিতির বাঁধার মুখে পড়তে হয়েছে। একাধিকবার হামলা ও ভাংচুর করা হয় দ্বিতল বাস। যেকারণে ২০০৫ সালে ওই বাস নগরী থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ২০১৩ সালে ফের দ্বিতল বাস দিয়ে নগর সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেয়া সত্বেও বাস মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো থেকে বাঁধা দেওয়ার আশংকায় বিআরটিসি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। জেলা বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দরা বিআরটিসির দ্বিতল বাস চলতে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে দ্বিতল বাস নগরীতে চলাচলের উপযোগী নয় বলেও বাস মালিক সমিতির নেতারা দাবি করে বলেন, নগরীতে চলার উপযোগী ছোট বাস দিয়ে বাস মালিক সমিতি নগর সার্ভিস চালু করতে চায়। সংশ্লি¬ষ্ট প্রশাসন থেকে অনুমতি পেলে তারা এ সার্ভিস চালু করবে।
অপরদিকে প্রয়াত সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২০০৯ সালে বেসরকারি মালিকানায় নগর বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছিল। নগর আওয়ামী লীগের ৩০টি ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা মিলে যৌথ মালিকানায় ২২ আসনের চারটি বাস নগর সার্ভিসে আনেন। ওই সময়ও টেম্পো মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রচ- বৈরিতার মুখে পড়েন তারা। উদ্বোধণের দিনই ভাংচুর করা হয় একটি বাস। মেয়র হিরণ নাগরিক সংগঠনগুলো নিয়ে সমাবেশ ও মিছিলের মাধ্যমে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুললে টেম্পো মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো পিছু হটে। বর্তমান মেয়র আহসান হাবীব কামাল দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে রহস্যজনক কারণে এ সার্ভিসটিও বন্ধ হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে ১৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ তোতা মিয়া বলেন, তিনি সিটি বাস সার্ভিস পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। ৩০টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকদের মালিকানায় সিটি বাস চললেও এর তত্ত্বাবধানে ছিল সিটি করপোরেশন। এ সার্ভিসটি বন্ধের কারণ তারও জানা নেই। নগর বাস সার্ভিস চালু করা প্রসঙ্গে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আহসান হাবীব কামালের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্ঠা করেও তা বন্ধ থাকায় কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রণজিৎ কুমার বলেন, নগরীর অভ্যন্তরীণ প্রধান সড়কগুলো বাস চলাচলে উপযোগী করা যায়নি। তাই নগরীর প্রধান সড়কে বাস সার্ভিস চালুর কোনো উদ্যোগ আপাতত তাদের নেই। তবে নগরের বর্ধিত এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের মহাসড়ক রয়েছে। ওই সড়কগুলো দিয়ে লঞ্চঘাট থেকে নগরীর তিনটি প্রবেশদ্বার গড়িয়ারপাড়ের মোড়, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু (দপদপিয়া সেতু) ও কালিজিরা সেতু এবং তালতলী সেতু পর্যন্ত বাস সার্ভিস শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য জেলা বাস মালিক সমিতির সাথে আলোচনাও চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই