বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ভারী বর্ষণের আশঙ্কা

দেশের বিভিন্ন স্থানে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও নতুন করে অনেক জেলায় হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নওগাঁ, বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ অনেক জেলার লাখ লাখ মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে।

সোমবারের (২৪ আগস্ট) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫২ টি পয়েন্টে নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৩৩টি পয়েন্টে কমেছে। এছাড়া ১৫টি পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। অন্যদিকে আগামী ৪৮ ঘন্টায় সুরমা-কুশিয়ারা নদীসমূহের পানি হ্রাস পাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।

কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নওগাঁ, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, জামালপুর, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ি এবং মুন্সিগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ রংপুর, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

সিরাজগঞ্জ:

আমাদের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছে, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সিরাজগঞ্জের কাছের যমুনা নদীর পানি বিপদ সীমার ৫৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে সিরাজগঞ্জের বাহুকায় রিং বাঁধের ২শ মিটার এলাকা ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় কয়েকশ বাড়ী প্লাবিত হয়েছে। ফলে বন্যা প্রতিরোধে বিকল্প হিসেবে নির্মিত রিং বাঁধটি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

এছাড়া কাজিপুরের ৮টি ইউনিয়ন, মাইজবাড়ী ঢেকুরিয়া, শুভগাছা, খাসরাজবাড়ী, চরঘিরিস, নিশ্চিন্তপুর, মুনসুর নগর, তেকানি, নাটুয়ারপাড়াসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রাম গুলোর নিন্মাঞ্চলসহ বাজার, কৃষি জমি, ও বসতবাড়ি নতুন করে প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

তবে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহি প্রকৌশলী জানান, বাহুকার রিং বাঁধ এখনো ঝুঁকি মুক্ত রয়েছে। তিনি আরো জানান আগামী ২দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।

শেরপুর:

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও গত তিন দিনের টানাবর্ষণে শেরপুরের কমপক্ষে ৭৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর, মরিচপুরান ও যোগানিয়া ইউনিয়নের ১৫গ্রাম এবং ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর, গৌরিপুর, ধানশাইল ইউনিয়নের ১০ গ্রামসহ জেলার বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে টানাবর্ষণে নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই, চেলাখালী ও মালিঝি এবং ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীর পানি বেড়েছে। ফলে জেলার বিভিন্ন রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি ধানক্ষেত পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এফএম মোবারক আলী জানান, ১৭ হাজার ২ শত ৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপন করা হয়েছে, এর মধ্যে বন্যায় ৩ হাজার ৩ শত ২৬ হেক্টর জমির আমন ধান পানিতে ডুবে গেছে। তাছাড়া আরও ৪ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান পানিতে আংশিক নিমজ্জিত রয়েছে।

জামালপুর:

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জামালপুরের সার্বিকভাবে বন্যার পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। এতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে আমন ধানের ক্ষেত, সবিজ ক্ষেত এখন পানি নিচে।

গত ৩৬ ঘন্টায় যমুনার বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ৩২ সে.মি. পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪২ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা নবকুমার।

ইসলামপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জীবন আরা জানান, উপজেলার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কিছুসংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

ইসলামপুর উপজেলার কুলকান্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জুবায়দুর রহমান দুলাল জানান, পানির তোড়ে কুলকান্দি পাইলিং এর বিশাল অংশ নদীতে বিলিন হয়েছে। সরিষাবাড়ী ও মাদারগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন নিম্মাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ফলে পানিবন্দী হাজার হাজার মানুষের খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই