বরিশালে চলন্ত বাসে দুই বোনকে ধর্ষণ, মামলা দুই মাস পর

বরিশালে চলন্ত বাসে দুই বোনকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে ঘটনার দুই মাস পর। মামলা করেছেন ধর্ষণের শিকার এক বোনের স্বামী। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছয় আসামির মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার গভীর রাতে বরিশাল বিমানবন্দর থানায় ওই মামলা করা হয়। ধর্ষণের ঘটনা ঘটে গত ২৩ জানুয়ারি। জানাজানি হওয়ার ভয়ে দীর্ঘদিন মামলা করেননি বলে দাবি করেছেন মামলার বাদী।

এ মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন রনি মৃধা, তারেক হাসান, সুজন কুমার মিত্র, দেবাশীষ দাস ও নাসির চাপরাশি। তাঁদের বাড়ি সদর উপজেলার গড়িয়ারপাড় এলাকায়। তাঁরা সবাই বাসের শ্রমিক।

ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত শাস্তি দাবি করেছেন স্থানীয় নারী অধিকারকর্মীরা।

মামলার বিবরণে বাদী জানান, ২৩ জানুয়ারি এক পরিবহনশ্রমিক তাঁর স্ত্রী, স্ত্রীর মামাতো বোন ও বন্ধুকে নিয়ে কুয়াকাটা থেকে রাত সোয়া দুইটার দিকে বরিশালের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছান। তখন বানারীপাড়া উপজেলার চাখারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সেবা পরিবহনের গাড়ির চালক নাসির তাঁদের গাড়িতে তোলেন। বাসটি কিছু দূর যাওয়ার পর পরিবহনশ্রমিক ও তাঁর বন্ধুকে বেঁধে ফেলেন নাসিরের অন্য সহযোগীরা। এরপর বাসটি রাতভর নথুল্লাবাদ ও রামপট্টি পর্যন্ত যাওয়া-আসা করতে থাকে। এ সময় বাসের মধ্যে বাদীর স্ত্রী ও স্ত্রীর মামাতো বোনকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন তাঁরা। ভোররাতে তাঁদের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দিয়ে বাসটি দ্রুত চলে যায়।

মামলার বিবরণে বলা হয়, লোকলজ্জা আর নানা সামাজিক চাপের কারণে দীর্ঘদিন মামলা করেননি বাদী। পরে মুঠোফোনে ধারণ করা ধর্ষণের ভিডিও ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ দাবি করেন ধর্ষকেরা। বিষয়টি বরিশাল শ্রমিক ইউনিয়নকে জানালে তারা মামলা করার জন্য বলে।

বরিশাল বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মামলা নিয়ে পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। গত বুধবার বিকেলে পাঁচ আসামিকে মহানগর বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের বিচারক মো. রফিকুল ইসলামের কাছে তাঁরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ওই মামলায় ছয় আসামির মধ্যে পলাতক মো. মিজানকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’

বরিশাল বাস মালিক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধর্ষণের বিষয়টি ওই পরিবহনশ্রমিক দুই দিন আগে আমাকে জানান। মুঠোফোনে ছবি ধারণ করা আছে সেটা বলে তাঁদের হুমকি দেওয়ায় এত দিন তাঁরা ঘটনাটি জানাননি বলে জানান।’

নারী অধিকারকর্মীদের ক্ষোভ: চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনায় দীর্ঘদিন মামলা না হওয়ায় ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন স্থানীয় নারী অধিকারকর্মীরা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের বরিশাল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পুষ্প চক্রবর্তী বলেন, ‘২৩ জানুয়ারির ঘটনায় কেন এত দিন পর মামলা হবে, সেটাই বুঝতে পারছি না। আমরা চাইব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।’ বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির বরিশাল বিভাগের সমন্বয়কারী মুনিরা বেগম এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেন। গতকাল তাঁরা কোতোয়ালি থানার অধীন ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে যান ধর্ষণের শিকার ওই দুই বোনকে দেখতে। সুত্র-প্রথমআলো



মন্তব্য চালু নেই