বরিশালে বেহাল আওয়ামী লীগ

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আ’লীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিকলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, মহিলা যুবলীগের কোনটারই পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই বরিশালে। এরমধ্যে কোনটার সম্মেলন হয়েছিল ২২ বছর আগে, কোনটার আহবায়ক কমিটি গঠন হয়েছে ১১ বছর হতে চলছে, আবার কোন সহযোগী সংগঠনের কমিটি কবে গঠন হয়েছিল সে সম্পর্কে নেতৃত্বস্থানীয়রাই ওয়কিবহাল নয়। এমনি বেহাল সাংগঠনিক অবস্থার মধ্যদিয়ে চলছে বরিশাল জেলা, উপজেলা ও পৌর এলাকার আ’লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রম। এনিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের এ বেহাল দশার কারনে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলা আ’লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ- এমপি। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন ঈদের পর সকল পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য। নতুবা সামনের নির্বাচনে বিরুপ প্রভাব ফেলবে আ’লীগের বিজয়ের ক্ষেত্রে। জেলা আ’লীগের সম্মেলন হয়েছিল ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর। ওইসময় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে সভাপতি এবং এ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুসকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। তবে সেই থেকে আজ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। একইদিন মহানগর আ’লীগের সভাপতি পদে শওকত হোসেন হিরণ এবং এ্যাডভোকেট আফজালুল করিমকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুর পর নগর কমিটির সভাপতির পদ এখন পর্যন্ত শূন্য। গঠন করা হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। মাঝখানে মহানগর কমিটি গঠনের তৎপরতা দেখা গেলেও এখন তা ঝিমিয়ে পড়েছে। ছাত্রলীগের জেলা কমিটি গঠন হয়েছিল ২০০৯ সালের ১১ জুলাই। সুমন সেরনিয়াবাত সভাপতি, আ. রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক এবং সৈয়দ শামসুদ্দোহা আবেদকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা হয়েছিল। এরপর ২০১৪ সালের ৭ জুন ১০৯ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্র থেকে পাশ করা হয়।

অপরদিকে ২০০৯ সালে মো. জসিম উদ্দিনকে সভাপতি, অসিম দেওয়ানকে সাধারণ সম্পাদক এবং তৌফিক আহমেদ রাহাতকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ৩ সদস্যের নগর ছাত্রলীগের কমিটি করা হলেও অদ্যাবধি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কোন তৎপরতা নেই।

দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, বরিশাল জেলা যুবলীগের সম্মেলন হয়েছিল ১৯৯৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর। সেই থেকে ২২ বছর ধরে জাকির হোসেন সভাপতি ও ফজলুল করিম শাহিন পালন করছেন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব। উপজেলাগুলোতেও একই অবস্থা। যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদধারীদের অধিকাংশরাই পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। অনেকেই আ’লীগের কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। ২০০৪ সালের ৭ জুলাই নিজামুল ইসলাম নিজামকে আহবায়ক করে মহানগর যুবলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এক যুগের কাছাকাছি হলেও আহবায়ক কমিটি দিয়ে চলছে নগর যুবলীগ। অন্যসব সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে শ্রমিক লীগের জেলা কমিটির সম্মেলন হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। সে সময় শাহজাহান হাওলাদারকে সভাপতি ও হারুন-অর রশীদকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা হয়েছিল।

এরপর ১৯ বছরের মধ্যে একবার বিশেষ সভা করা হয়েছিল। মহানগর শ্রমিকলীগের সভাপতি আফতাব হোসেন জানান, চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারী তাদের ৫৫ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠণ করা হয়েছে। ২০০৭ সালে ৭ জুন অনুষ্ঠিত হয়েছিল জেলা কৃষকলীগের সম্মেলন। এ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন সভাপতি ও মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়েছিল। তবে এই দলের সাংগঠনিক অবস্থা অনেকটাই দুর্বল। এমন অবস্থা মহিলা আ’লীগ, মহিলা যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের বেলায়ও। আ’লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের সাংগঠনিক অবস্থার এ ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে ২৯ মে অনুষ্ঠিত জেলা আ’লীগের বর্ধিত সভায়। ওইসভায় ১০ উপজেলার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ৫টি পৌরসভার মেয়র এবং সকল সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় কেবল সাংগঠনিক দুর্বলতাই নয়,দলীয় কোন্দলের চিত্র প্রকটভাবে প্রকাশ পায়।

তৃণমূল নেতারা মত প্রকাশকালে বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সাধারণ কর্মীদের মূল্যায়ন করছেন না। দল ক্ষমতায় বলে নেতারা এখন টেন্ডার বা অনান্য লাভজনক কাজ নিয়ে ব্যস্ত। সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন করতে গেলে আ’লীগের নেতারা বাঁধার সৃষ্টি করেন। তাদের পছন্দের লোককে (সদ্য আ’লীগে যোগদান করা) পদ পদবী দিতে চাঁপ প্রয়োগ করছেন। দলের দুর্দীনের নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করার কারনেই সাংগঠনিক কর্মকান্ডে ভাটা পড়েছে। আর দলে নতুন যারা যোগদান করছেন, তারা দলের জন্য কতটুকু সুফল বয়ে আনবে সে বিষয়েও নজর রাখার জন্য তৃণমূল নেতারা নেতৃত্বস্থানীয়দের অনুরোধ করেন।

তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য শোনার পর বরিশাল জেলা আ’লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ-এমপি বলেন, নেতাদের সাথে তৃণমূল কর্মীদের যে দূরত্ব তৈরী হয়েছে তা নেতাদেরকেই মিটিয়ে ফেলতে হবে। কেননা সামনে পৌরসভা, এরপর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারে সমর্থন নয়, দলীয় ভিত্তিতে মনোনয়ন দেয়া হবে। তাই প্রার্থীতা ঘোষণায় তৃণমূল কর্মীদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হবে। সভায় তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বিএনপি জামায়াতের নীরব ভোট রয়েছে। তারা নির্বাচনে শক্তভাবে মাঠে নামলে বরিশালে আ’লীগের যে অবস্থা তাতে নির্বাচনে জয়ী হতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে। অপরদিকে সাংগঠনিক কাঠামো বৃদ্ধির জন্য ২৫ ও ২৬ জুলাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলনের আগে তিনি (আবুল হাসানাত) জেলার সকল উপজেলায় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন। অনুরূপভাবে আ’লীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিকলীগ, মহিলা আ’লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের সস্মেলনের জন্য রমজানের আগেই তারিখ ঘোষণা করতে বলেন তিনি। আর সংগঠনে গতিশীলতা আনতে ঈদের পর জেলা আ’লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।



মন্তব্য চালু নেই