বলতো ২+২ = ৫ হয় কখন?

রাজীব শীল জীবন : ২০০২ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর বন্ধুদের উদ্দেশ্যে অবসরে আড্ডার ছলে একটা দার্শনিক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলাম। বলতো ২+২= ৫ কখন হয়? তখন সবাই হাসছিল এবং সহজ উত্তর পেলাম ২+২= ৪ হবে, কখনো ৫ হবে না! গুণ করলেও না! বুঝলাম ওরা বিষয়টি গভীরে দেখেনি। উল্টো আমাকে নিয়ে হাসলো!

এর পরেরদিন টিউশনে গিয়ে অংক করানোর সময় দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রটিকে লিখে দিলাম ২+২= ৫ তখন সে বলে উঠে স্যার এটা ভুল হয়েছে। ২+২= ৪ হবে। যদি ৫ হয়, আঙুল গুণে গুণে সহজ উত্তর দিল ভুল। বুঝলাম প্রতিদিন তার পাঠ্যস্তব হচ্ছে এই! তাকে আর কিছু বলিনি। মনের ভিতরে জমা রেখেছি উত্তরটি! পরেরদিন তাকে দেয়া বাড়ির কাজে সন্তুষ্ট হয়ে একটা কলম উপহার দিলাম। যা আগের দিনের প্রাপ্তি ছিল।

এরপর গত ডিসেম্বরে দেশের ছুটিতে বাড়ি যওয়ার পর একদিন একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম, যেখানে কয়েকজন প্রিয় মানুষের সামনে আমাকে কিছু বলতে হবে। মাইক্রোফোনের সামনে যাওয়ার ঠিক ৪-৫ মিনিট আগে মোবাইলে আমার মামার কল। মামাকে বললাম একটু তাড়াতাড়ি বলেন, এখন আমি অনুষ্ঠানে।

মামা বললো, এক মিনিট উনার সাথে কথা বলেন তো। তখন ওপার থেকে জনৈক ভদ্রলোকটির সাথে কথা বলার একপর্যায়ে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার বায়োডাটায় তো এইচএসসি দেখি নি! কোন সালে, কোন কলেজ থেকে করেছেন? হঠাৎ এতোটাই নার্ভাসনেস হলাম যে মুখে শুধু আসছে …পদুয়া ডিগ্রি কলেজ। মুখ ফসকে তাড়াতাড়ি বলে দিলাম এইচএসসি করিনি (কেননা কলেজের নামটি হৃদয় বার বার বলছে মুখে আসছে না, আবার যদি ভদ্রলোক মনে করেন কলেজের নাম ঠিকমতো বলতে পারছি না!)

আসলে কলেজের মাঠে প্রতিদিন খেলতাম, আর কলেজটি ছিল বাড়ির পাশেই (যা এলাকার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ)! বলতে পারিনি দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া পদুয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০০৪ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি! হ্যাঁ আমরা মাঝে মাঝে এমন কিছু বাস্তবতার মুখোমুখি হই, যা অতিসহজ কিন্তু কখনো সুন্দর, কখনো অগোছালো বা মিথ্যায় ভরপুর।

জিপিএ-৫ নিয়ে ভিডিও ক্লিপটি দেখে নিজের ভিতর নাড়া দেয়। এটা আবার কেমন খবর! যা ভবিষ্যৎ কর্ণদ্বারদের স্বপ্ন, চিন্তা চেতনাকে জনপ্রিয়তা বাড়াতে সস্তায় অন্ধকারাছন্ন করছে, অবহেলা করছে? সেসব ছাত্র-ছাত্রী ভাই-বোনদের নিয়ে জনসমক্ষে এমন প্রচার হতাশাজনক! করছে প্রশ্নবিদ্ধ!

হ্যাঁ ভাই (ভাই যিনি রিপোর্টার) আপনার প্রশ্নগুলো খুব সুন্দর, মৌলিক। সম্মান করি আপনার ওইসব জানার ইচ্ছাকে, যা বাস করে প্রতিটি নাগরিকের হৃদমন্দিরে। ভাবতে অবাক হই ভোরে ঘুম থেকে উঠে, মন যখন শান্ত থাকে তখন পত্রিকা খুললে প্রধান শিরোনামে দেখতে পাই ঘুষ, দুর্নীতি, ইতিহাস (রাজনীতিগত) বিকৃতিসহ হতাশাব্যাঞ্জক খবর।

তখন কেমন করে সুন্দর দিনটা ভালো যায়! যদি পত্রিকার প্রথম পাতায় থাকতো সফল ব্যক্তিদের হাস্যোজ্জ্বল ছবি, প্রযুক্তিনির্ভর বিজ্ঞানের কথা, চিকিৎসার কথা, দেশের ইতিহাসভিত্তিক সংবাদ, তাহলে রাতে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম তার সাথে পত্রিকার হাস্যোজ্জ্বল ছবিটা দেখে পুরোটাদিন ভালোভাবে কাটাতে পারতাম। সামনে দাঁড়িয়ে উন্নত শিরে উত্তর দিতাম সকল প্রশ্নের।

বিশেষ দ্রষ্টব্য : শিক্ষাব্যবস্থা যখন প্রশ্নবিদ্ধ হবে তখন মানুষের প্রতিটি স্বপ্নই ভুল হবে। আগামীর ভবিষ্যৎকে ‘ছাড়পত্র’ দিন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার মতো। সূত্র : বাংলামেইল

লেখক : সিঙ্গাপুর প্রবাসী



মন্তব্য চালু নেই