বস্তাবন্দি পাটকাঠির ছাই যাচ্ছে চীনে, অদ্ভুত এই রহস্য সবার অজানা

‘যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখো তাই…’- ছাই উড়িয়ে নয়, ছাই বিক্রি করে রতনের খোঁজ পেয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বেলডাঙার সাবির শেখ। তা-ও আবার কয়লা বা কাঠের ছাই নয়। পাটকাঠি পোড়ানো ছাই।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, দেশীয় বাজারে নয়, একেবারে চীনে এই ছাই রফতানি করে ভালই মুনাফা করছেন সাবির শেখ। চীনের কারবারিরা বেলডাঙায় ঘাঁটি গেড়ে বসে একেবারে হাতেকলমে শিক্ষা দিয়ে এই ছাই তৈরি করাচ্ছেন৷ তবে পাটকাঠির ছাই চিনে কী কাজে লাগে তা জানেন না কেউই। আস্ত একটি কারখানা গড়ে এই কারখানা চললেও এ বিষয়ে বিন্দুবিসর্গ জানেন না জেলা শিল্পকেন্দ্রের আধিকারিকরাও৷ ফলে গোটা বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা-১ ব্লকের বেগুনবাড়ি পঞ্চায়েতের কাজিসাহা গ্রাম৷ কাজিসাহা মোড় থেকে নওদার ত্রিমোহিনীর দিকে কিমি দুই এগোলেই চোখে পড়বে প্রায় দু’বিঘা জমির উপর ১২টি চিমনিওয়ালা একটি কারখানা৷ চিমনির উপর বাঁশের মাচা বাঁধাহয়েছে৷ সেই মাচার উপর রয়েছেন কয়েকজন শ্রমিক। তাঁরা চিমনির মুখে অনর্গল পাটকাঠি দিয়ে চলেছেন৷ সেই পাটপাঠি নিচে বয়লারে গিয়ে দাউদাউ করে জ্বলে ছাই হয়ে যাচ্ছে৷ সেই ছাইকে আবার গম পেষাই মেশিনের মতো এক মেশিনে দিয়ে একেবারে মিহি ডাস্ট করা হচ্ছে৷ সেই গুঁড়ো বস্তাবন্দি করা হচ্ছে।

কারখানার এক শ্রমিক জানান, ১২টি চিমনি থাকলেও গড়ে দু’টি চিমনিতে কাজ হয়৷ দু’টি চিমনির জন্য দৈনিক সাত কুইণ্টাল পাটকাঠি লাগে৷ প্রতি চিমনি থেকে ছ’বস্তা ছাই পাওয়া যায়৷ প্রতি বস্তায় ১২ কেজি ছাই ভরা হয়৷ কারখানার মালিক সাবির শেখ বলেন, “একটি লরিতে ৬০ বস্তা ছাই ভরে খিদিরপুর ডকে পাঠানো হয়৷ সেখান থেকে জাহাজে করে তা চিনে চলে যায়৷”

চীনের কারবারিরাই যে তাঁকে এই অভিনব ব্যবসায় নামিয়েছেন, তা মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করেন সাবির সাহেব৷ যদিও এই ছাই চীনে কী কাজে লাগে, তা তিনি বলতে পারেননি৷ সাবির শেখের এই কারখানার ধাক্কায় বেলডাঙার বিভিন্ন গ্রামে পাটকাঠির দর বেড়েছে৷ আড়াই থেকে চার টাকা কেজি ধরে পাটকাঠি কেনা হচ্ছে৷

তবে কারখানার লাইসেন্সের ব্যাপারে সাবির শেখ কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি৷ স্থানীয় বেগুনবাড়ি পঞ্চায়েত থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন৷ এছাড়া জেলা শিল্পকেন্দ্রে মৌখিকভাবে জানানো আছে বলেও দাবি করেন তিনি৷ অবশ্য জেলা শিল্পকেন্দ্রের আধিকারিকরা এ বিষয়ে অন্ধকারে রয়েছেন বলে জানান।

বিষয়টি নিয়ে তাঁরা খোঁজখবর করবেন বলে আশ্বাস দেন৷ চুলের মাধ্যমে অনেকদিন ধরেই চীনের সঙ্গে বেলডাঙার যোগসূত্র স্থাপন হয়েছে৷ এই কাজিসাহা গ্রাম থেকেই বাড়ি বাড়ি চুল সংগ্রহ করে তা চিনে পাঠানো হয়৷ এবার চুলের সঙ্গে যোগ হল ছাইও৷ যদিও এই ছাইয়ের ব্যবহার নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাটকাঠির ছাই পরিবেশ সংরক্ষণ, জল পরিশুদ্ধ করতে ও বাড়ির দেওয়ালের তাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে৷ ওষুধ তৈরিতেও নাকি কাজে লাগে। -সংবাদ প্রতিদিন।



মন্তব্য চালু নেই