বাংলাওয়াশের মঞ্চ প্রস্তুত

মুস্তাফিজ-তান্ডব, সাকিবের ঘুর্ণিতে ব্যাটসম্যানের অসহায় আত্মসমর্পণ, সাব্বিরের ব্যাটে রানটা পূর্ণ হতেই মুষ্টিবদ্ধ হাত সজোরে শু্ণ্যে ছুড়ে দেয়া মাশরাফির, এরপর নেচে-গেয়ে উদযাপন। উল্লাস, আনন্দ উল্লাস, জয়োল্লাস গ্যালারিতে; বিশ্বকাপের প্রতিশোধ পর্বের পর ইতিহাস কাপানো সিরিজ জয়- মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে গত দুই ম্যাচে এমন দৃশ্যই তো দেখেছে বিশ্ববাসী। তা আরো একবার হোক না সেই উৎসব, আনন্দ-উল্লাস, জয়োল্লাসের পুনরাবৃত্তি।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হয়েছে, জিম্বাবুয়ের পর হয়েছে পাকিস্তানের বিপক্ষেও। ‘বাংলাওয়াশ’ আরো একবার হোক না ক্রিকেটের অসূরীয় শক্তি ভারতের বিপক্ষে। মহেন্দ্র সিং ধোনি অ্যান্ড কোং মাঠ ছাড়ছে নতশিরে, ক্রমেই বড় হয়ে উঠা ‘বাচ্চা’দের কাছে সব হারানোর যন্ত্রণায় দগ্ধ হয়ে; হোম অব ক্রিকেটে হোক না আরো একবার এমন দৃশ্যের অবতারণা। বাংলাওয়াশ, বাংলাওয়াশ, ভারতকেও বাংলাওয়াশ ধ্বনিতে মুখোরিত হোক গোটা বাংলাদেশ।

মঞ্চটা কিন্তু প্রস্তুতই। বাঘের ডেড়ায় ভারত এখন ভয়ে জবুথবু এক ‘হরিণ শাবক’! এ যেন ব্রাক্ষ্মনের পাতে ‘রাজভোগ’। এখন কেবল পেটে চালান করে দেয়ার অপেক্ষা। আগের দিন দলের পেস বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিকই যেমন জানালেন, এই বাংলাদেশ জয়ের জন্য আরো বেশি ক্ষুধার্ত। তার ভাষ্য, ‘বিশ্বকাপ থেকেই ভিন্ন এক বাংলাদেশ দলকে দেখা যাচ্ছে। এই দল আত্মবিশ্বাসী। বিশ্বাস করে যে, তারা টানা জিততে পারে। শুধু একটি ম্যাচ জিতেই এই দল খুশি নয়, বরং জিতে নিয়েছে সিরিজ। সম্ভব হলে জিতবে ৩-০ ব্যবধানে।’
ঘরের মাঠে টানা ১০টি ওয়ানডেতে জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। সংখ্যাটা আপাত আরো খানিকটা বাড়িয়ে নেয়ার স্বপ্ন মাশরাফি ব্রিগেডের। আরেকটি ‘বাংলাওয়াশের’ স্বপ্নে বিভোর স্বাগতিকদের প্রস্তুতিও চলছে সেভাবেই। ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতে সিরিজ নিশ্চিত করার পরদিন পুরো দল বিশ্রামে থাকলেও মঙ্গলবার দুপুরেই মিরপুরে হাজির সবাই। পালা করে চলেছে ব্যাট-বলের অনুশীলন। একদিন বিশ্রামের পর সিরিজ খোয়ানোর যন্ত্রণা নিয়ে মাঠমুখো হয়েছে টিম ইন্ডিয়াও।

বাংলাদেশের সঙ্গে একই সময়ে মিরপুরে অনুশীলন করেছেন ধোনি-রায়না-কোহলিরাও। দুই দলের অনুশীলনপর্বটাই বলে দিচ্ছিল; পুরোপুরি উল্টো হাওয়া বইছে দুই শিবিরে। মাশরফি ব্রিগেড উজ্জ্বল, উচ্ছ্বল, প্রাণবন্ত। যেন সুখের সংসার। অপরদিকে ধোনি অ্যান্ড কোচ; যেন ভাঙা হাট। অতিথি খেলোয়াড়রা মুখে হাসি ধরে রাখার যথাসম্ভব চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু সেই হাসিতে যে প্রাণের স্পন্দন নেই, স্পষ্টতই বুঝা যাচ্ছিল তা।

বাংলাদেশের কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার পর অভিমানি ধোনির নেতৃত্ব ত্যাগের কথা বলা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চারদিকে। ভারতকে দুটি বিশ্বকাপ (একবার করে ওয়ানডে এবং টি২০) জেতানো অধিনায়ক অবশ্য পাশে পাচ্ছেন সুনীল গাভাস্কার, সৌরভ গাঙ্গুলিদের মতো সাবেকদের। তবে ‘ভারতের ড্রেসিংরুমে শান্তি নেই’- এমন খবরও চাউর হয়েছে দেশটির গণমাধ্যমে। সবকিছু মিলিয়ে চরম অশান্তিতেই আছে টিম ইন্ডিয়া। মাঠের বাঘে খাচ্ছে ধোনিদের। এখন তার থেকেও বুঝি তাদের বেশি খাচ্ছে মনের বাঘে!

তবে মাঠে মুস্তাফিজুর রহমান নামের এক তরুণ বাঘ তার ধারালো থাবায় রীতিমতো ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে ভারতকে। ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ওয়ানডেতেই ১১ উইকেট নিয়েছেন বাহাতি এই পেসার। এখন আরো বড় অর্জনের হাতছানি তার সামনে। তাকে থামানোর কোনো মন্ত্রই বুঝি এখনো খুজে বের করতে পারেনি অতিথিরা। দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা রবিচন্দ্রন অশ্বিন উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বললেন, ‘যদি তাকে (মুস্তাফিজ) থামানোর কোনো উপায় না থাকে, তাহলে আমাদের কি করার আছে? তাকে অপহরণ করব?’
প্রথম দুই ওয়ানডেতে মুস্তাফিজ যেভাবে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়েছেন; সুযোগ থাকলে, কে জানে হয়তো তাকে অপহরণই করত অতিথিরা! তাতে যদি স্বাগতিকদের জয়টাও অপহরণ করা যায়! কিন্তু প্রথম দুই ওয়ানডের মতো শেষ ম্যাচেও অতিথিদের ইঞ্চি পরিমান জায়গা ছাড়তে নারাজ টাইগাররা। দলের প্রতিনিধি হয়ে ম্যাচপুর্ব আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে আসা নাসির হোসেনের কন্ঠে তেমনই হুঙ্কার, ‘অনুশীলন শুরুর আগে ড্রেসিংরুমে আমরা আলোচনা করেছি। আমাদের যতটা সম্ভব সিরিয়াস থাকতে বলা হয়েছে। যদি আমরা প্রথম দুটি ম্যাচে হেরেও যেতাম তাহলেও এতটুকু ছাড় দিতাম না।’

ইতিহাস গড়তে, ধীরে ধীরে বড় দল হয়ে উঠতে মাঠের খেলায় ভারতকে কোনোরকম ছাড় যে টাইগাররা দেবে না; সেটা না বললেও চলে। তাছাড়া প্রথম দুটি ম্যাচ জিতে নেয়ায় সিরিজ নিশ্চিত হয়ে গেছে বলে পরের ম্যাচ হালকা মেজাজে খেলার বিলাসিতা দেখানোর সময়ও তো আসেনি বাংলাদেশের। নাসিরের কন্ঠেও একই সুর, ‘আমি এখনো বলব না, আমরা বড় দল হয়ে উঠেছি। এখনো আমরা পুরোপুরি বড় দল হয়ে উঠতে পারিনি। কারণ, আমরা হোম কন্ডিশনে খেলছি।’ তাই বিলাসিতা নয়, আগের দুই ওয়ানডের একাদশটা অপরিবর্তীত রেখেই আজ মাঠে নামার কথা স্বাগতিকদের।

তবে পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে অতিথি শিবিরে। দ্বিতীয় ওয়ানডের একাদশ থেকে বাদ পড়ার পর সোমবার একাই ব্যাটিং অনুশীলন করতে মিরপুরে এসেছিলেন আজিঙ্কা রাহানে। জায়গাটা ফিরে পাওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে তার। কেননা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের বদলে একাদশে সুযোগ পাওয়া অক্ষর প্যাটেলও ঠিক সেভাবে প্রমাণ করতে পারেননি নিজেকে। ব্যাটে ব্যর্থ হওয়ার পর তার বাহাতি স্পিন কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের উপর।

শুধু অক্ষরকে দোষ দিয়েই বা লাভ কি? ভারতীয় শিবিরের কেউই তো এবার প্রভাব ফেলতে পারেনি স্বাগতিকদের উপর। এবার স্বাগতিকদের দাপটে যে নিজদের জান নিয়েই টানাটানি টিম ইন্ডিয়ার। সেই টানাটানি আজকের দিনেও থাকুক। তবেই না লেখা হবে আরেকটি ‘বাংলাওয়াশ’র ইতিহাস।

বাংলাওয়াশের মঞ্চে অবশ্য ইতিহাসটা লিখতে পারে বৃষ্টিও। মঙ্গলবার দিনভর আকাশে চলেছে রোদ আর মেঘের খেলা। থেমে থেমে বৃষ্টিধারাও ঝড়েছে বারকতক। আবহাওয়ার পুর্বাভাসে বৃষ্টির ঘোর সম্ভাবনা।



মন্তব্য চালু নেই