বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় পৌঁছেছে ‘রোয়ানু’

ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের উপকূল থেকে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে সরে এসে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থান করছে। এটি ক্রমেই এগিয়ে আসছে। দুপুরের মধ্যে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি।

শনিবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ বিশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এটি ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ সর্ম্পকিত ১৭ নম্বর বার্তা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ডপলার রাডার পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল ঘেঁষে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থান করছে।

রোয়ানুর জন্য চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

বিশেষ বুলেটিনে আরো বলা হয়েছে, সকাল ৬টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ২৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ২৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শনিবার দুপুর নাগাদ বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভোর থেকে উপকূলীয় অঞ্চলে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করবে ঝূর্ণিঝড়। উপকূলে প্রচণ্ড ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এর প্রভাবে উপকূলে ভারী বৃষ্টিসহ দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীর হাতিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বুলেটিনে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় আসবে।

কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমের সময় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় প্রচণ্ড বাতাস শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে কুয়াকাটাসহ উপকূলে ভারী বৃষ্টি ঝরছে। রাজধানীতেও শুক্রবার দিনগত মধ্যরাত থেকে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই