বাংলাদেশের সবচেয়ে লম্বা মানুষ ভোলার মোসলেউদ্দিন!

আমি কি ভোলার সবচেয়ে লম্বা ব্যক্তি? এমন প্রশ্ন মোসলেউদ্দিনের। লালমোহন এলজিইডি অফিসের নৈশপ্রহরীর চাকরি করেন তিনি। উচ্চতা ৭ ফুট ৭ ইঞ্চি। বাংলাদেশে এ উচ্চতার কোনো মানুষ আছে কি-না সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়নি।

তবে মোসলেউদ্দিনই সম্ভবত বাংলাদেশে জীবিতদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘাঙ্গী ব্যক্তি বলে মনে করা হচ্ছে। তার বাড়ি ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়ার ইউনিয়নে চর সেমাইয়া গ্রামে। আর মাত্র দেড় ইঞ্চি লম্বা হলেই গ্রিনেজ ওয়ার্ল্ড বুকে সবচেয়ে লম্বা ব্যক্তিদের তালিকায় নাম উঠতে পারতো বলে মনে করেন মোসলেউদ্দিন।

গত বছরের ২৬ নভেম্বর লালমোহন এলজিইডি অফিসের নৈশপ্রহরী হিসেবে যোগদান করেন মোসলেউদ্দিন। তবে অফিসের সকলেই তাকে সম্রাট নামে ডাকে। তার জন্ম ১৯৭২ সালের ১৫ অক্টোবর, তার বাবার নাম সামছুল হক বেপারী। রাক্ষুসে মেঘনার কবলে জমি-জমা হারিয়ে তিনি ২০০৭ সালে মারা যান। তিন বোন, এক ভাইয়ের সংসারে মোসলেউদ্দিন সবার ছোট। তার বাবা-মা দু’জনেই মোটামুটি স্বাভাবিক উচ্চতার মানুষ ছিলেন। তবে শুনেছেন তার নানা খুব লম্বা মানুষ ছিলেন। তাকে তিনি দেখেননি। মোসলেউদ্দিন জানান, ১৫ বছর বয়সের হঠাৎ মনে হলো তিনি খুব লম্বা হয়ে যাচ্ছেন।

তখন থেকে এক-দেড় বছর সময়ের মধ্যেই তিনি হয়ে উঠেন অস্বাভাবিক রকমের লম্বা। রাক্ষুসে মেঘনা সব কিছু কেড়ে নেয়ায় চরম অভাবে পড়েন মোসলেউদ্দিন। ঘুরে বেড়ান এদিক-ওদিক একটি চাকরি আশায়।

১৯৯৮ সালে সেনাবাহিনীতে চাকরি করার জন্য লাইনে দাঁড়ান তিনি। তখন উচ্চতা মেপে দেখা যায় ৬ ফুট সাড়ে ৭ ইঞ্চি। সেনাবাহিনীর চাকরিটা নিয়ে মনে খুব আশা ছিল মোসলেউদ্দিনের। শেষ পর্যন্ত অস্বাভাবিক শারীরিক উচ্চতার কারণে চাকরিটা হয়নি। মেডিক্যাল পরীক্ষায় আনফিট হয়ে যান।

তারপর থেকে বিভিন্ন দুয়ারে ঘুরেছেন একটি চাকরির আসায়। এক পর্যায়ে ২০০৩ সালের ২২ জুলাই ভোলা এলজিইডি অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে নৈশপ্রহরী কোঠায় চাকরি মেলে তার। অফিসাররা তাকে খুব ভালোবাসেন বলে জানান তিনি।

তিনি আরো জানান, চাকরি পাবার পর ২০০৪ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী ইয়ানুর বেগমের ঘরে ২ ছেলে জন্ম নেয়। তবে তার উচ্চতা স্বাভাবিক। ভোলা অফিসে ১০ বছর চাকরি করার পর কয়েক মাস আগে লালমোহন অফিসে যোগ দেন তিনি। এর আগে কিছুদিন সদর অফিসেও ছিলেন।

তার অস্বাভাবিক উচ্চতার কারণে ঘরে ঢুকতে বা বিভিন্ন কাজ করতে সমস্যা হয়। অফিসের দরজার চেয়েও ২ ইঞ্চি বেশি লম্বা তিনি। তার বক্তব্য সবকিছুতে মাথা নিচু করে লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে হয়। রাস্তায় হাঁটা চলার সময় মানুষ তার দিকে তাকিয়ে থাকে। এতে তার খারাপ নয়, ভালোই লাগে বলে তিনি জানান।

তার শোয়ার জন্য বিশেষ একটি চৌকি তৈরি করতে হয়েছে। যেটি আট ফুটের বেশি লম্বা। থাকার সমস্যার কারণে তিনি আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে কখনো বেড়াতে গেলেও সেখানে রাএীযাপন করেন না।

মোসলেউদ্দিনের বড় সমস্যা শারীরিক দুর্বলতা, দুই হাঁটুতে ব্যথা। দারিদ্রের কারণে খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করতে পারেন না। তবে খুব খেতে ইচ্ছা করে তার। পরিবারের অবস্থা যখন ভালো ছিল তখন তিনি একেক বেলা ২ কেজি চালের ভাত সাবার করে ফেলতে পারতেন। মাছ-মাংস দুটোই তার ভীষণ প্রিয়। তবে এখন রাতের বেলা রুটি খেতে পছন্দ করেন। মোসলেউদ্দিন জানান, তার পায়ের মাপের জুতা বাজারে পাওয়া যায় না, অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নিতে হয়। তার এক জোড়া জুতা বানাতে ৩ হাজার টাকা নেয় কারিগররা। অনেক সময় তারা বানাতেও চায় না।

শার্ট-প্যান্ট এসবও রেডিমেট কিনতে পারেন না তিনি। অর্ডার দিয়ে তৈরি করাতে হয়। শাটের জন্য দু’গজ আট গিরা, প্যান্টের জন্য এক গজ বারো গিরা কাপড় লাগে। দামি লুঙ্গি দৈর্ঘ্যে বড় থাকে তাই সেগুলো কেনার সামর্থ হলে পড়তে পারেন কোনোমতে। অল্পদামি লুঙ্গি তার হাঁটুর নিচের অংশ পর্যন্তই শুধু ঢেকে রাখতে পারে। মোসলেউদ্দিন বাংলাদেশের জীবিতদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা মানুষ কি-না তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

গিনেজ ওয়ার্ল্ড বুকে পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা মানুষের কথা আছে। বাংলাদেশের বা বিশেষ কোনো দেশের সবচেয়ে লম্বা বা বেটে মানুষ সম্পর্কে আলাদা করে কোনো তথ্য গিনেজ বুকে নেই। গিনেজ বুকের তথ্য অনুসারে বর্তমান পৃথিবীর জীবিতদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা ব্যক্তিটির উচ্চতা ৮ ফুট ৩ ইঞ্চি। এই লম্বা মানুষটি হলেন তুরস্কের সুলতান কোসেন। সবচেয়ে লম্বা নারী হলেন চীনের ইয়াও ডিফেন। তার উচ্চতা ৭ ফুট ৮ ইঞ্চি। আর সবচেয়ে লম্বা ১০ জনের মধ্যে দশম ব্যক্তিটি কোরিয়ান রি মিয়ংহুন। তার উচ্চতা ৭ ফুট সাড়ে ৮ ইঞ্চি। সেখানে ভোলার মোসলেউদ্দিনের উচ্চতা ৭ ফুট ৭ ইঞ্চি। অর্থাৎ গিনেজ বুকে স্থান পাওয়া ১০ নম্বরের চেয়ে দেড় ইঞ্চি কম।



মন্তব্য চালু নেই