বাংলাদেশে তিন মাসে ২৭ হত্যার দায় নিলো আইএস

বাংলাদেশে এ বছরের ২৮ এপ্রিল থেকে জুলাই এই তিন মাসে মোট ২৭টি হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়েছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। সংগঠনটির মুখপত্র ‘দাবিক’-এর গত রবিবার প্রকাশিত সর্বশেষ সংখ্যায় এ দাবি করা হয়েছে। এতে গুলশান হামলাসহ ঢাকার বাইরের আরও ৫টি হত্যাকাণ্ডে আইএস সম্পৃক্ত ছিল বলে দাবি করে এগুলোর কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। পত্রিকাটির ১৫তম সংখ্যার ৪২ পাতায় বাংলাদেশ অংশে এর উল্লেখ আছে।

এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী বলছে, তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন।

দাবিক পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ওরল্যান্ডো ( যুক্তরাষ্ট্র), ঢাকা (বাংলাদেশ), ম্যাগনানভিলে, নাইস এবং নোরম্যান্ডি ( ফ্রান্স), উরজবা‌র্গ এবং আনসবাক ( জা‌র্মানি) তে হামলায় ১২ জন ‘খেলাফতের সৈনিক শহীদ’ হয়েছেন। অন্যদিকে ৬ শ’র মতো ক্রুসেডার আহত এবং নিহত হয়েছেন। ফলে যে কেউ আশা করতে পারে পশ্চিমের গণতন্ত্রপূজারীরা তাদের প্রতি মুসলমানদের ক্ষোভ এবং ঘৃণা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে এবং তারা যে কাজ করছে কিছু সময়ের জন্য হলেও তার বিরতি দেবে। এমনকি তারা মুসলমানদের ক্ষোভ এবং ঘৃণার প্রতি মনোযোগ দিতে পারে এবং তাদের মধ্যে অনুশোচনা জাগতে পারে এবং তারা খারাপ কাজ বাদ দিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে পারে।

গুলশান হামলা বিষয়ে তারা বলছে, ২৭ রমজান ঢাকার হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় বিদেশিরা নিয়মিত যাতায়াত করে। ৫ জন ইনগিম্যাসি যোদ্ধা (আত্মঘাতী) সেখানে হামলা চালিয়ে তাদের জিম্মি করে। পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার আগে বহুসংখ্যক মানুষকে হত্যা ও আহত করার পরে তারা মৃত্যুকে বরণ করে নেয়। উল্লেখ্য, হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার ঠিক আগের দিন পত্রিকাটি অনলাইনে পাওয়া যায়। জুলাই মাসের ১ তারিখ এই হামলায় ৫ জঙ্গিসহ ২৯ জন নিহত হয়।

এছাড়াও পত্রিকাটিতে ২৩ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল করীম, ৩০ এপ্রিল টাঙ্গাইলের দর্জি নিখিল চন্দ্র জোয়ারদার, ৫ জুন বড়াইগ্রামের বনপাড়া পৌরসভার খ্রিস্টান ধর্মপল্লীর বাসিন্দা মুদি ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজ, ৭ জুন ঝিনাইদহের সোনাখালী গ্রামের নলডাঙ্গা মন্দিরের পুরোহিত অনন্ত গোপাল গাঙ্গুলী ও ১০ জুন পাবনার একটি আশ্রমের সেবায়েত নিত্যরঞ্জন পাণ্ডেকে হত্যার কথা দাবি করা হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হওয়ার পরপরই প্রত্যেকটির ক্ষেত্রেই সাইট ইন্টিলিজেন্সের মাধ্যমে দায় স্বীকার করেছিল আইএস। আইএস সংশ্লিষ্ট একটি বার্তা সংস্থা ‘আমাক’ এর বরাত দিয়ে সাইট ইন্টিলিজেন্স তাদের টুইটার বার্তার মধ্য দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ইসলমিক স্টেটের লোকজনের কাজ বলে দাবি করে আসছে।

dbbf05dfa74a6a74590a4130a4f44528-57a057698479a

উল্লেখ্য, এর আগের সংখ্যায় র‌্যাবের সরবরাহকৃত ২৬২ জন নিখোঁজ ব্যক্তির নামের তালিকায় ২৬১তম নাম জিলানী ওরফে আবু জান্দালকে নিয়ে প্রতিবেদন করেছিল দাবিক। সে সিরিয়ায় যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয় এতে। আইএস-এর পত্রিকা দাবিক এর দাবি, সে (জিলানী) আবু জান্দাল আল বাঙালি। দাবিকের ১৪৩৭ রজব এর ১৪তম ইস্যুতে দাবি করা হয়, জিলানী বাংলাদেশ সেনা কর্মকর্তার সন্তান যিনি ‘বিডিআর বিদ্রোহের’ সময় নিহত হয়েছেন। সেই প্রবন্ধে বলা হচ্ছে, ‘জিলানী তার তরুণ বয়সের শেষ সময়ে আসল ইসলামি ডাক পান, যখন তিনি শায়েখ আনোয়ার আল আওলাকির বক্তৃতা শুনতেন।

জঙ্গিবাদ নিয়ে গবেষণা করছেন এমন একজন গবেষক নির্ঝর মজুমদার। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এই যে, দাবিকের এই সংখ্যাটিতে বলা হয়েছে, চারটি দেশে তাদের ১২ জন সদস্য মারা গেছে এবং সে দেশগুলোর মধ্যে একটি হলো বাংলাদেশ। তারা ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রে চালানো হামলাগুলোর পাশে বাংলাদেশের গুলশান হত্যাকাণ্ডের কথাও উল্লেখ করেছে। অর্থাৎ, পশ্চিমা দেশগুলোর মতোই বাংলাদেশকে তারা টার্গেট করেছে আলাদা করে। এই নিয়ে পরপর তিনটি সংখ্যাতে বাংলাদেশের ব্যাপারটি উল্লেখ করা থেকে বোঝা যাচ্ছে এই জঙ্গি দলটি বাংলাদেশের ব্যাপারে আলাদা করে আগ্রহী, যেটি আমাদের জন্য মোটেও সুখকর নয়।’

দাবিকের এই সংখ্যা বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবহিত। আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি এবং যাচাইয়ের কাজ চলছে।



মন্তব্য চালু নেই