বাংলাদেশে নূর হোসেন

নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করেছে ভারত।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে যশোরের বেনাপোল স্থল বন্দরে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ভারতের পেট্রাপোল বন্দর থেকে নীল রঙের একটি গাড়িতে করে নূর হোসেনকে নিয়ে ফেরেন বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি অপূর্ব হাসান এবং বেনাপোল ইমিগ্রেশন ওসি তরিকুল ইসলাম। বেনাপোলের ইমিগ্রেশনে উপস্থিত ছিলেন যশোরের পুলিশ সুপার অনিসুর রহমান, বিজিবি কর্মকর্তা মেজর লিয়াকত আলী, ইউএনও আব্দুস সালাম।

বিজিবি প্রধান বলেন, ‘বিজিবির মেজর লিয়াকতের কাছে নূর হোসেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

নূর হোসেনকে ভারতের কাছ থেকে গ্রহণের পর একটি কালো রঙের মাইক্রোবাসে করে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসা হচ্ছে।

এর আগে সন্ধ্যার পর কলকাতার দমদম কারাগার থেকে বের করা হয় নূর হোসেনকে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে নিয়ে পেট্রাপোল বন্দরসংলগ্ন বিএসএফের হরিদাসপুর চেকপোস্টে পৌঁছায় ভারতীয় পুলিশ।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে দুটি গাড়িতে থাকা সাতজনকে অপহরণ করা হয়। এর মধ্যে একটি গাড়িতে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম এবং তার সহযোগীরা। অন্য একটি গাড়িতে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক। তিন দিন পরে অপহৃতদের লাশ ভেসে ওঠে নারায়ণগঞ্জের উপকণ্ঠে শীতলক্ষ্যা নদীতে।

এদিকে অপহরণের পরদিন অপহৃত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ফতুল্লা থানায় নূর হোসেনসহ ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলার এজাহারে ‘র‍্যাবকে দিয়ে’ অপহরণের অভিযোগ করা হয়। তিন দিন পরে লাশ উদ্ধার হলে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। পরে আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে আরেকটি হত্যা মামলা করেন।

অপরদিকে কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম প্রথমে র‍্যাবের বিরুদ্ধে ‘ছয় কোটি টাকা নিয়ে’ অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ করেন। অর্থায়নকারী হিসেবে তিনি নূর হোসেনকে অভিযুক্ত করেন। পরে তদন্তে এ ঘটনার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে র‍্যাব-১১-এর কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা বের হয়ে আসে। র‍্যাব-১১-এর তৎকালীন অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার এম এম রানাসহ অন্য সদস্যরা মিলে ওই সাতজনকে অপহরণের পরে হত্যা করে পেট চিরে লাশ নদীতে ফেলে দেন বলে তদন্তে বেরিয়ে আসে।

প্রায় এক বছর তদন্তের পরে গত এপ্রিলে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। এতে র‍্যাবের ওই তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। নূর হোসেন এ মামলায় চার্জশিটভুক্ত এক নম্বর আসামি। অভিযুক্ত ৩৫ জনের মধ্যে বর্তমানে র‍্যাবের তিন কর্মকর্তাসহ ২২ জন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। ২২ জনই ঘটনার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। পলাতক রয়েছেন র‌্যাবের আট সদস্যসহ ১৩ আসামি।

সাত খুনের পরে ভারতে পালিয়ে যান নূর হোসেন। ওই বছরের ১৪ জুন কলকাতার বাগুইআটিতে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি। তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভারতে অবস্থানের মামলা হয়। এরপর গত মাসে ভারত সরকার সেই মামলা প্রত্যাহার করলে নূর হোসেনকে দেশে ফেরানোর পথ সুগম হয়।



মন্তব্য চালু নেই