বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ মোস্তাফিজ-মোসাদ্দেক-মিরাজ

বাংলাদেশ ক্রিকেটের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এখন থ্রি-এম-মোস্তাজিুর রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও মেহেদী হাসান মিরাজ। এদের মধ্যে ঘরোয়া ক্রিকেটের গণ্ডি পেরিয়ে প্রথমে শ্রেষ্ঠত্বের জানান দিয়েছিলেন কাটার মাস্টার খ্যাতি পাওয়া মোস্তাফিজ। এরপর সর্বশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টেস্ট সিরিজে আগামীর বার্তা দিয়ে শুরু করলেন মোসাদ্দেক ও মিরাজ।

ওয়ানডে সিরিজে না থাকলেও টেস্ট সিরিজে ডাক পেয়ে চট্টগ্রামের প্রথম টেস্টে ৭ উইকেট নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের অ্যাকাউন্ড খোলেন মিরাজ। সেই টেস্টে জয় পেতে পেতেও অল্পের জন্য হেরে যায় বাংলাদেশ। তবে ভেন্যু পাল্টালেও মিরাজ আর পাল্টাননি। বরং ঢাকায় ফিরে আরো খুড়ধার তিনি। ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটসহ দুই ইনিংসে নেন ১২ উইকেট।

এই সিরিজে টেস্ট ক্রিকেটে ইংলিশ আভিজাত্য ভেঙে চুরমার করা আসল কারিগর তিনি। সেই সাথে অভিষেক ম্যাচে দেশের হয়ে দ্বিতীয় সেরা বোলিং, দুই ম্যাচের সিরিজে দেশের হয়ে সর্বাধিক ১৯ উইকেট শিকারের রেকর্ড এখন তার।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আগে ঘরোয়া ক্যারিয়ারটাও চোখধাঁধানো মিরাজের। তার অসাধারণ অধিনায়কত্বেই বাংলাদেশ যুব দল ২০১৬ আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে উঠে। আর তৃতীয় হওয়ার প্লে-অফে শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে পরাজিত করে তৃতীয় স্থান অধিকার করে বাংলাদেশ।

অসাধারণ অলরাউন্ড নৈপুণ্যে মিরাজ ম্যান অব দ্য টুর্নানামেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি ৬ ম্যাচে ব্যাট হাতে ২৪২ রান এবং বল হাতে ১২ উইকেট লাভ করেন।

মিরাজের মতোই স্বপ্নের শুরু দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম ভরসার নাম হয়ে উঠেছেন পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টিতে অভিষেক। এই ফরমেটের অন্যতম ভয়ংকর ব্যাটসম্যান শহিদ আফ্রিদির উইকেট শিকারের মধ্যদিয়ে যে তীর ছোড়া শুরু করেছেন ফিজ তার গতিতে দিনকে দিন বেড়েছে বৈকি কমেনি।

ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয় মুস্তাফিজের। সেই ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়ে দলকে দারুণ এক জয় এনে দিয়ে জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। এরপর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম তিন ম্যাচেই ১৩ উইকেট নিয়ে ইতিহাসে জায়গা করে নেন।

টি-টুয়েন্টি ও ওয়ানডের পর টেস্ট অভিষেকটাও স্বপ্নের মতোই হয় মোস্তাফিজের। সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রামে অভিষেক হয় তার। ড্র হওয়া সেই ম্যাচেও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন তিনি।

৩৭ রানে চার উইকেট নেয়ার পথে এক ওভারেই অতিথিদের তিন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজ। আমলাকে ফেরানোর পরের বলে জেপি দুমিনিকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেয়া কুইন্টন ডি কককে বোল্ড করে নেন তৃতীয় উইকেট।

ঘরোয়া, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করা মোস্তাফিজ এখন বিশ্ব তারকা। প্রথমে বিশ্বের অন্যতম টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্ট ভারতীয় প্রিমিয়ার লিগে(আইপিএল) নাম লেখান। এরপর যোগ দেন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘরোয়া টুর্নামেন্ট ইংলিশ কাউন্টিতে। ইনজুরির কারণে ইংল্যান্ড সিরিজে ছিলেন না, তবে লম্বা বিরতি কাটিয়ে সামনের নিউজিল্যান্ড সিরিজের জন্য অস্ত্রে শান দিচ্ছেন ফিজ।

মোস্তাফিজ-মিরাজের মাঝখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন মোসাদ্দেক হোসন সৈকত। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে রানের খাতা না খুলতে পারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে দলের মহাপ্রয়োজীয় সময়ে ২৯ রান করেন। পরে অল্প স্কোর নিয়েও সেই ওয়ানডেতে জয় পায় বাংলাদেশ। তৃতীয় ম্যাচে জ্বলে ওঠেন মোসাদ্দেক।লোয়ারঅর্ডারে ব্যাট হাতে ৩৯ বলে ৩৮ রানে অপরাজিত ছিলে।

ওয়ানডে পারফর্মেন্সের পুরস্কার হিসেবে টেস্ট দলেও ডাক পান মোসাদ্দেক। তবে ঢাকা টেস্টে মূল একাদশে না থাকলেও শীঘ্রই সে সুযোগ পেয়ে যাবেন এই অলরাউন্ডার।

ঘরোয়া লীগে মোসাদ্দেকের দারুণ পারফরম্যান্সের জন্যই জাতীয় দলে তার ডাক পান। লীগের প্রথম রাউন্ডে সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয় রাউন্ডে ডাবল সেঞ্চুরি করেন এই ব্যাটসম্যান। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট ১২ ম্যাচে মোসাদ্দেকের ডাবল সেঞ্চুরি আছে তিনটি। বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি নেই।

ঘরোয়া ক্রিকেটের পর আন্তর্জাতিক অঙ্গণে জানান দিয়ে পা রাখা এই তারকা বাংলাদেশের জার্সি গায়ে আগামী দিনে বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করবেন বলেই মত বিশ্লেষকদের। আর একসাথে সেই যাত্রাটা শুরু হতে পারে ডিসেম্বরের নিউজিল্যান্ড সফর থেকেই।



মন্তব্য চালু নেই