বাংলাদেশ-ভারত নৌ রুটে যুক্ত হচ্ছে ভুটান

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নৌ-প্রটোকল (বাংলাদেশ-ভারত অভ্যন্তরীণ নৌ-পথ অতিক্রম ও জলবাণিজ্য প্রটোকল- পিআইডব্লিউটিটি) চুক্তি রয়েছে। এবার সেই প্রটোকলের আওতায় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন করতে চায় ভুটান। এ লক্ষ্যে ঢাকার সঙ্গে চুক্তি করতে আগ্রহী দেশটি।

নৌ-প্রটোকল চুক্তিতে ভারতের সঙ্গে তৃতীয় দেশে পণ্য পরিবহনের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ভুটানের সঙ্গে ভারতের পণ্য পরিবহনের নিজস্ব ব্যবস্থাও রয়েছে। ফলে ঢাকা-থিম্পুর মধ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষর হলে ভুটান বাংলাদেশ হয়ে ট্রানজিট বা পণ্য পরিবহনের সুযোগ পাবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন থিম্পু সফরে এ চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র। বন্দর ব্যবহারের এ চুক্তিসহ ভুটানের সঙ্গে মোট ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে বলে জানিয়েছে ওই সূত্র। ১৮-২০ এপ্রিল দ্বিপাক্ষিক সফরে ভুটান যাওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভুটান সফর সামনে রেখে পাঁচ-ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক নিয়ে কাজ করছি দু’পক্ষ। এর মধ্যে ভারতীয় নৌ-প্রোটোকল রুটের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এসব রুট ব্যবহারের বিনিময়ে ভুটানের কাছ থেকে বাংলাদেশ ট্যাক্স আদায় করতে পারবে বলেও জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অপর কর্মকর্তারা।

বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরাও। এ প্রসঙ্গে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের খুব কাছেই ভুটানের অবস্থান। দেশটি সার্কেরও অন্যতম সদস্য। পণ্য পরিবহনে দেশটির সঙ্গে চুক্তি এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে কানেক্টিভিটি বাড়াতে সহায়ক হবে।’

জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে ভুটানের সঙ্গে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট ও হাইড্রোপাওয়ার সহযোগিতার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। এছাড়া কৃষিক্ষেত্রে খাদ্যের মাননিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা, বাংলাদেশের বিএসটিআই এবং ভুটানের মাননিয়ন্ত্রণ সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা এবং আমদানি-রফতানিতে দ্বৈতকর পরিহার নিয়ে চুক্তি, সাংস্কৃতিক সহযোগিতার বিষয়টিও সফরে গুরুত্ব পাবে।

এছাড়া ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানি ও বিদ্যুৎখাতে (হাইড্রোপাওয়ার) বিনিয়োগ বিষয়েও আলোচনা করবে বাংলাদেশ। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কানেক্টিভিটি, আঞ্চলিক নিরাপত্তাসহ আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে অভিন্ন স্বার্থের বিষয়গুলোও আলোচনা করবে দুই দেশ।

ভূটানে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভুটান যৌথভাবে আয়োজিত অটিজম বিষয়ক ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন অটিজম অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার ভুটান- ২০১৭’ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। এ আয়োজনের সঙ্গে আরও রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের কার্যালয়, সূচনা ফাউন্ডেশন ও এবিলিটি ভুটান সোসাইটি। সম্মেলনটি ১৮-২১ এপ্রিল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নৌ-প্রটোকলের আওতায় নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, মংলা, সিরাজগঞ্জ ও আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করতে পারে ভারত। এছাড়া ভারতীয় জাহাজগুলো পথিমধ্যে তেল সংগ্রহ বা বাংকারিংয়ের জন্য নির্ধারিত পোর্ট অব কলের বাইরে বাংলাদেশের শেখবাড়িয়া, মংলা, খুলনা, বরিশাল, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও চিলমারি বন্দর ব্যবহার করে। থিম্পুর সঙ্গে ঢাকার চুক্তি হলে এসব পোর্ট অব কল এবং বাংকারিংয়ের জন্য বাংলাদেশের এসব বন্দর ব্যবহারের অনুমতি পাবে ভুটান।

প্রটোকল অনুযায়ী নৌ-রুটগুলো হলো- খুলনা-মংলা-কাউখালী-বরিশাল-হিজলা-চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ-আরিচা-সিরাজগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ-চিলমারি, চিলমারি-বাহাদুরাবাদ-সিরাজগঞ্জ-আরিচা-নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর-হিজলা-বরিশাল-কাউখালী-মংলা-খুলনা, মংলা-কাউখালী-বরিশাল-হিজলা-চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ-ভৈরববাজার-আশুগঞ্জ, আশুগঞ্জ-ভৈরববাজার-নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর-হিজলা-বরিশাল-কাউখালী-মংলা, রাজশাহী-গোদাগাড়ী, গোদাগাড়ী-রাজশাহী, ফেঞ্চুগঞ্জ-শেরপুর-মারকুলি-আজমিরিগঞ্জ-আশুগঞ্জ-ভৈরববাজার-নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর-আরিচা-সিরাজগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ-চিলমারি, চিলমারি-বাহাদুরাবাদ-সিরাজগঞ্জ-আরিচা-চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ-ভৈরববাজার-আশুগঞ্জ-আজমিরিগঞ্জ-মারকুলি-শেরপুর-ফেঞ্চুগঞ্জ।



মন্তব্য চালু নেই