বাংলাদেশ-ভারত মানচিত্র থেকে মুছে গেল ছিটমহল

পঞ্চগড়ের গারাতি গ্রামে উড়ছে বাংলাদেশের পতাকা। একদিন আগেও ছিটমহলের বাসিন্দা হিসেবে তারা নামে ভারতের নাগরিক ছিলেন, যদিও নাগরিক কোনো সুবিধা ছিল না তাদের।

গারাতির মতো ১১১টি ছিটমহলে উল্লাসের মধ্যে শনিবার সকালে ‍ওড়ানো হয় বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা।

নাগরিকত্বের স্বীকৃতি নিয়ে মধ্যরাত থেকে ছিটমহলগুলোতে যে বাঁধভাঙা উল্লাসের শুরু, আনুষ্ঠানিক পতাকা উত্তোলনের সময় বৃষ্টিও তাতে বাদ সাধতে পারেনি।

স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকরে দুই দেশের ছিটমহল বিনিময় হয় মধ্যরাতে, ৬৮ বছরের বন্দিত্বের অন্ধকার কাটাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর পথে যাত্রা শুরু করে বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডের বাসিন্দারা।

বিদ্যুতের মতোই কোনো সুবিধা নেই তাদের, নেই স্কুল কিংবা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও, ভূমি বিনিময়ে নেই কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থাও।

বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের এই রকম ১১১টি ছিটমহলে বাসিন্দা ৩৭ হাজার। বিনিময়ের মধ্য দিয়ে পেটের ভেতরে থাকা ১৭ হাজার ১৬০ একর ভূমি এখন বাংলাদেশের, এর বাসিন্দারাও বাংলাদেশের নাগরিক।

অন্যদিকে এর মধ্য দিয়ে ভারত পেল সে দেশের মধ্যে থাকা ৫১টি ছিটমহলের ৭ হাজার ১১০ একর ভূমি, যার ১৪ হাজার বাসিন্দা এখন ভারতীয় হয়ে গেলেন।

বাংলাদেশে থাকা ভারতীয় ছিটমহলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৯টি লালমনিরহাটে। এগুলো পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা উপজেলার অন্তর্গত, এর ১৭টিতে জনবসতি নেই।

ছিটমহলের চারটি পেয়েছে নীলফামারী জেলা, এই চারটি ডিমলা উপজেলায়।

পঞ্চগড় পেয়েছে ৩৬টি ছিটমহল। এগুলোর অবস্থান সদর, বোদা এবং দেবীগঞ্জ উপজেলায়।

কুড়িগ্রামের ১২টি ছিটমহল সদর, ফুলবাড়ী এবং ভুরুঙ্গামারী উপজেলায়।

ছিটমহল বিনিময়ের মধ্য দিয়ে এই জনপদগুলোর বাসিন্দারা বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত হলেন। তবে এর মধ্যে প্রায় এক হাজার জন ভারতেরে নাগরিকত্ব নিয়ে সে দেশে চলে যেতে চেয়েছেন। ওপার থেকে কেউ আসতে চাননি।

নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর এতদিন ধরে বঞ্চনার আঁধার কাটার আশায় আছেন ছিটমহলের বাসিন্দারা। সেই আশায় শনিবার পতাকা তোলার সময় উৎসাহের কমতি ছিল না।

পঞ্চগড়

সদর উপজেলার হাড়িভাষা ইউনিয়নের গারাতি ছিটমহলের ফোরকানিয়া মাদ্রাসা মাঠে সকাল ৬টায় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. শামছুল আজম ও জেলা পুলিশ সুপার গিয়াস উদ্দিন আহমদ আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।

এসময় সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত- ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়া হয় এবং পুলিশের একটি দল জাতীয় পতাকাকে সালাম জানায়।

পরে সংক্ষিপ্ত এক বক্তৃতায় শামছুল আজম বলেন, “আজ থেকে সবাই বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলেন। আইনশৃঙ্খলাসহ যে কোনো সমস্যায় আমাদের পাশে পাবেন।।”

সাবেক এই ছিটমহলের নাগরিক কমিটির চেয়ারম্যান মফিজার রহমানসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

লালমনিরহাট

বৃষ্টি উপেক্ষা করেই সকাল ৬টায় ভিতরকুটি বঁশপচাই ছিটমহলে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

জাতীয় সংগীত গেয়ে সংরক্ষিত আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য সফুরা বেগম রুমী এ পতাকা উত্তোলন করেন।

এ সময় জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আবু তাহের মো. মাসুদ রানা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

পরে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়।

নীলফামারী

সকাল ৭টায় আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্য বিলুপ্ত নীলফামারীর বড় খানকি খারিজা গিদালদহ ছিটমহলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

নীলফামারী-১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দারাই গেয়ে শোনান জাতীয় সঙ্গীত।

জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মজিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু মারুফ হোসেন, সিভিল সার্জন আব্দুর রশিদসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

ডিমলার চারটি ছিটমহল ২৮ নম্বর বড়খানকি কান্দাপাড়া, ২৯ নম্বর বড়খানকি খারিজা গিদালদহ, ৩০ নম্বর বড়খানকি গীতালদহ, ৩১ নম্বর নগর জিগাবাড়ির ১১৯ পরিবারের লোক সংখ্যা ৫৪৫ জন।

এই চার ছিটমহলের আয়তন ১০৮ একর।

কুড়িগ্রাম

বাংলাদেশের মধ্যে আসা অন্যতম বড় ছিটমহল দাশিয়ারছড়া কালিরহাট বাজারের ফ্ল্যাগ স্টান্ডে পতাকা উঠে সকালে।

ফুলবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে পতাকা উত্তোলন করা হয়।

এই ছিটমহলের অধিবাসী বেশ কিছু শিক্ষার্থী ও এ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।

নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন,“ এত বছর পর মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির বাস্তবায়ন ঘটেছে। যার যার ভূখণ্ডের ছিটমহল তার হয়ে গেল। এর মাধ্যমে আমাদের বহু প্রতীক্ষার অবসান হল।”বিডিনিউজ২৪



মন্তব্য চালু নেই