‘বাংলার টাইটানিক’ সুন্দরবন-১০

কল্যাণ কুমার চন্দ, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল : ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে যাত্রী পরিবহনে যুক্ত হচ্ছে দেশে প্রথমবারের মতো তৈরি হওয়া লিফট যুক্ত অত্যাধুনিক বিলাস বহুল যাত্রীবাহী লঞ্চ সুন্দরবন ১০। লঞ্চটিতে লিফট ছাড়াও প্লে-গ্রাউন্ড, ফুড কোর্ট এরিয়া ও চিকিৎসা সুবিধার পাশপাশি ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহারকারীদের জন্য ওয়াইফাই সুবিধা রয়েছে। শুধু অত্যাধুনিক সুবিধা আর বিলাস বহুল যাত্রী সেবা নয়, এ লঞ্চটি হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ যাত্রীবাহি নৌ-যান। তাই দশনার্থীদের কাছে সুন্দরবন-১০ নামের এ লঞ্চটি ‘বাংলার টাইটানিক’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

নগরীর বেলতলা ফেরীঘাটের নিজস্ব ডকইয়ার্ডে এ জাহাজটির নির্মাণ কাজ শেষে ভাসানো হয়েছে কীর্তনখোলা নদীতে। মের্সাস সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির বাংলার টাইটানিক খ্যাত সুন্দরবন-১০ নামের এ বিলাস বহুল লঞ্চটি আগামী ২৩ জুন বরিশাল নৌ-টার্মিনাল থেকে ছেড়ে প্রথমবারের মতো ঢাকার উদ্দেশে পাড়ি জমাবে। আর ঢাকা যাওয়ার একদিন পরে ২৫ জুন ঢাকা সদরঘাটে বেলা দুইটার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধণ করা হবে এম.ভি সুন্দরবন-১০ নামের এ জাহাজটি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বিলাস বহুল নৌ-যানের উদ্বোধণ করবেন। ঈদের আগে যাত্রী পরিবহনে বিলাস বহুল এ লঞ্চটি যুক্ত হওয়ায় এবার ঈদে ঘরমুখী দক্ষিণের মানুষদের অনেকটা আরামদায়ক ভ্রমন হবে বলে মনে করছেন যাত্রীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবন-১০ বরিশাল নগরীর বেলতলা এলাকায় নিজস্ব ডকইয়ার্ডে নির্মানের পর গত এপ্রিল মাসে এটি পানিতে ভাসানো হয়। ইতোমধ্যে সাজসজ্জার কাজ শেষ করা হয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো সুন্দরবন-১০ লঞ্চে লিফট স্থাপন করে ভিন্নমাত্রা যোগ করা হয়েছে। প্রায় চারতলা বিশিষ্ট লঞ্চটিতে ইন্টারনেট ওয়াই-ফাই, এটিএম বুথ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শিশু বিনোদনের জন্য বেবি কর্নার, সেলুন, খাবারের জন্য মানসম্মত হোটেল, কফি ও টি হাউস রয়েছে। সুন্দরবন নেভিগেশনের পরিচালক ও বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, লঞ্চটি নির্মানের সময় যাত্রী ও নৌযানের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রথম শ্রেণির কেবিনগুলো বানানো হয়েছে বিলাসবহুল আবাসিক তিন তারকা হোটেলের আদলে। ব্যয়বহুল ও দৃষ্টিনন্দন আসবাবপত্রে সাজানো রয়েছে প্রতিটি কক্ষ। ঐতিহ্য আর আধুনিকতার সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে নিরাপদ ও বিলাসবহুল লঞ্চটি।

সুন্দরবন নেভিগেশন সূত্রে জানা গেছে, ৩৩২ ফুট দৈর্ঘ্যরে এ নৌযানটির প্রস্থ ৫৫ ফুট। রয়েছে লোয়ার ও আপার ডেক। যাত্রীদের জন্য রয়েছে, দুই শতাধিক প্রথম শ্রেণির কক্ষ (কেবিন), ১৫টি ভিআইপি কক্ষ, ৪০টি সোফা বা বিলাস আসন। কেবিনের সাথে যাতায়াতের জন্য রয়েছে সুবিশাল বারান্দা। অনুমোদিত যাত্রী ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৪’শ জন। নৌযানটির যাত্রী নিরাপত্তায় বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। এছাড়া লঞ্চটিতে প্রায় ২’শ টন পণ্য পরিবহনের সুবিধা রয়েছে। জার্মানির তৈরি ২ হাজার ৭৫০ অশ্বশক্তির দুটি মূল ইঞ্জিন ছাড়াও নৌ-যানটির বাতানুকূল প্রথম শ্রেণি এবং ভিআইপি কক্ষসহ ডেকের যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস নিশ্চিতকরণে তিনটি শক্তিশালী জেনারেটর ও একটি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর সংযোজন করা হয়েছে। হুইল হাউসে (চালকের কক্ষ) সম্পূর্ণ অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্রাংশ সংযোজন করা হয়েছে। এর রাডার সুকান ‘ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক’ ও ম্যানুয়াল দ্বৈত পদ্ধতিতে ব্যবহার করা যাবে। পাশাপাশি জিপিএস পদ্ধতি সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে লঞ্চটি চলাচলরত নৌপথের এক বর্গকিলোমিটারের মধ্যে গভীরতা ছাড়াও এর আশপাশের অন্য যেকোনো নৌযানের উপস্থিতি চিহ্নিত করতে পারবে। এমনকি ঘণ কুয়াশা ভেদ করে আলো যেতে সক্ষম ফর্গ লাইট যুক্ত করা হয়েছে লঞ্চটিতে। দক্ষ মাস্টার , সুকানী ও ইঞ্জিন চালক (ড্রাইভার) ছাড়াও মোট ৪০জন বিভিন্ন শ্রেনীর ক্রু নিয়োগ করা হয়েছে।

লঞ্চ মালিক সাইদুর রহমান রিন্টু আরও জানান, সমুদ্রগামী বড় জাহাজের আদলে নির্মিত সুন্দরবন-১০ একটি পরিপূর্ণ জাহাজ। লিফট যুক্ত করার ব্যাপারে লঞ্চ মালিক জানান, প্রায় চারতলা বিশিষ্ট লঞ্চটিতে মূলত প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও রোগীদের যাতায়াতের সুবিধার কথা চিন্তা করেই লিফট যুক্ত করা হয়েছে। তাদের পুরানো লঞ্চ ব্যবসার ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমম্বয়ে নির্মাণ করা বিলাস বহুল সুন্দরবন-১০ লঞ্চের আকার, নকশা ও নান্দনিকতার বিবেচনায় যাত্রীদের ভ্রমণে সবচেয়ে নিরাপদ এবং আরামদায়ক হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।



মন্তব্য চালু নেই