বাইপোলার ডিজঅর্ডারের যে লক্ষণগুলোর বিষয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন

বাইপোলার ডিজঅর্ডার বা দ্বিমেরু ব্যাধি একটি মানসিক অসুস্থতার নাম। এই রোগে আক্রান্ত্ররা পর্যায়ক্রমে আনন্দ, উল্লাস ও বিষাদে আক্রান্ত হয়। মেজাজ, আচরণ ও সক্রিয়তার স্তরের দ্রুত পরিবর্তনের জন্য লক্ষণগুলো মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই মনকে স্থির করার জন্য সময় মত চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। মুম্বাইয়ের ফরটিস হসপিটাল ও এশিয়ান হার্ট ইন্সটিটিউটের বিশেষজ্ঞ মনোবিজ্ঞানী ডা. পারুল ট্যাঙ্ক বলেন, যদি কোন মানুষের মধ্যে এই ৮টি লক্ষণের মধ্যে ৫টি লক্ষণ এক মাসের বেশি সময় ধরে প্রকাশ পায় তাহলে তা হতে পারে বাইপোলার ডিজঅর্ডারের পূর্ব লক্ষণ।

১। খুব ভালো মুড
হাইপোমেনিয়া এমন একটি দশা যখন ব্যক্তি অত্যন্ত উচ্চ শক্তি ও খুবই ভালো মুডে থাকে। এই সময়ে সেই ব্যক্তিটি অনেক বেশি উত্তেজনার মধ্যে থাকে এবং প্রচুর হাসে ও চেষ্টা করে অনেক বেশি ভালো হতে। আমাদের সবারই সময়ের সাথে সাথে মেজাজের পরিবর্তন, এটা স্বাভাবিক। যদি এই চুড়ান্ত রকমের ভালো মুড যদি এক সপ্তাহ স্থায়ী হওয়ার পরেই বিষণ্ণতায় আচ্ছন্ন হয় তাহলে তা বাইপোলার এর পূর্ব লক্ষণ। এই সময়ে সে নিজেকে অনেক ক্ষমতাবান ও অপরাজেয় মনে করে।

২। কাজ সম্পন্ন করতে না পারা
কোন ব্যক্তির অনেক কাজ যদি অসম্পূর্ণ থেকে যায় তাহলে সেটা তার বাইপোলার ডিজঅর্ডারের একটি ছাপ। তারা অবাস্তব কাজের পরিকল্পনা করেন ও কাজটি শুরু করেন কিন্তু সমাপ্ত করতে না পেরে অন্য কাজ শুরু করে দেন। ওহাইয়ো এর ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের এমডি, দ্যা সেন্টার ফর বিহেভিয়ারাল হেলথ এর ডাইরেক্টর এবং মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ডন ম্যালোন বলেন, “তারা হতে পারে খুবই বিভ্রান্ত এবং তারা প্রচুর কাজ শুরু করে দেয় কিন্তু কখনোই শেষ করেনা”।

৩। হঠাৎ করেই কোন আইডিয়া মনে আসে
মেজাজ ভালো থাকার সময়ে খুবই উত্তেজনা ও সুখ অনুভব করে এবং এই সময়ে খুবই সৃজনশীল হয়ে উঠে। কাজের সাথে সম্পৃক্ত অথবা ব্যাক্তিগত জীবনের উন্নতি ঘটানোর জন্য অনেক ধরণের চিন্তা ভাবনা তারা করে থাকে।

৪। দ্রুত কথা বলে
হাইপোমেনিয়ার সময়ে ধারণা ও সৃজনশীলতার প্রবাহের কারণে মানুষটি হয়ে পরে চূড়ান্ত পর্যায়ের বাচাল এবং আপনার সাথে একটানা কথা বলতে চাইবে। মানুষটি যদি আদতে বাক্যবাগীশ না হয় তাহলে তার এই আচরণ নিঃসন্দেহে বিপদ সংকেত।

৫। আবেগপ্রবণ ও বেপরোয়া আচরণ
শেষ পর্যায়ে মানুষটি অনেক বেশি টাকা খরচ করা শুরু করবে এবং এমন আচরণ প্রকাশ করবে যা তার মধ্যে পূর্বে ছিলোনা। ক্রমান্বয়ে মাদকে আসক্ত হয়ে যেতে পারে।

৬। বিষণ্ণতা
দ্বিমেরু ব্যাধির আর একটি চূড়ান্ত পর্যায় হচ্ছে বিষণ্ণতা। হাইপমেনিয়া চলে যাওয়ার সাথে সাথেই বিষণ্ণতার লক্ষণ গুলো যেমন- দুঃখবোধ, ক্রনিক স্ট্রেস এবং অন্যদের সাথে দীর্ঘক্ষণ যাবত কাজ করতে অসমর্থ হওয়া।

৭। অনিয়মিত ঘুম
বিষণ্ণতার এই সময়টাতে মানুষ ঘুমের সমস্যা এবং ইনসমনিয়াতে ভোগে অথবা চূড়ান্ত পর্যায়ের ঘুমের সমস্যায় ভোগে।

৮। ক্রমশ যন্ত্রণা দায়ক হয়ে উঠে
মানুষটি অনবরত খিটখিটে মেজাজের এবং বদরাগী হয়ে উঠতে থাকে যা ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এর ফলে সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে।

এটা স্মরণে রাখা প্রয়োজন যে এই লক্ষণগুলো যে কোন স্বাস্থ্যবান কিশোর-কিশোরী বা পূর্ণ বয়স্ক মানুষের মধ্যেই দেখা দিতে পারে। বিবেচ্য বিষয়টি হচ্ছে সময়ের ব্যাপ্তি এবং তা প্রাত্যহিক জীবনে হস্তক্ষেপ করছে কিনা। শিশুদের মধ্যে বাইপোলার ডিজঅর্ডার দেখা দিলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া অত্যাবশ্যকীয়।



মন্তব্য চালু নেই